ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) রোববার জানিয়েছে, তারা লেবাননের গভীরে বিমান হামলা চালিয়েছে। আইডিএফ দাবি করেছে, তারা হিজবুল্লাহর বেশ কিছু স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে, যেখানে গোষ্ঠীটির কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছিল।
আইডিএফের বিবৃতিতে বলা হয়, হামলায় রকেট লঞ্চারসহ অন্যান্য অস্ত্রভাণ্ডার ধ্বংস করা হয়েছে। আইডিএফ জানায়, ‘হিজবুল্লাহর এসব কর্মকাণ্ড ইসরাইল ও লেবাননের মধ্যে চলমান সমঝোতা লঙ্ঘন করছে।’
লেবাননের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা জানায়, ইসরাইলি যুদ্ধবিমান বেকা উপত্যকায় তিনটি হামলা চালিয়েছে। হামলাগুলো হারবাতা ও হালবাতা এলাকায় হয়েছে, যা ইসরাইল সীমান্ত থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে।
এদিকে, দক্ষিণ লেবাননের হৌলা শহরে ইসরাইলি সেনাদের গুলিতে এক নারী নিহত হয়েছেন এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে লেবাননের গণমাধ্যম জানিয়েছে।
আইডিএফ দাবি করেছে, হৌলা শহরে বেশ কিছু সন্দেহভাজন ব্যক্তি লেবাননের সেনা ব্যারিকেড ভেঙে ইসরাইলি বাহিনীর দিকে এগিয়ে এলে সেনারা প্রথমে সতর্ক করে এবং পরে ‘আটক প্রক্রিয়া’ শুরু করে, যা সাধারণত পায়ে গুলি চালানোর মাধ্যমে করা হয়।
লেবাননের এক সামরিক সূত্র টাইমস অব ইসরাইলকে জানিয়েছে, আইডিএফ এখনো এই ঘটনায় কোনো বেসামরিক নিহত হওয়ার তথ্য নিশ্চিত করতে পারেনি।
লেবাননের সরকারি সংবাদ সংস্থা জানায়, ইসরাইল হৌলা থেকে তিনজন বেসামরিক নাগরিককে আটক করেছে।
আইডিএফ দক্ষিণ লেবাননে এখনও মোতায়েন থাকা সেনাদের সতর্ক করেছে যে, কেউ যেন তাদের অবস্থানের কাছাকাছি না আসে।
যুদ্ধবিরতির ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা
লেবাননে ইসরাইলের হামলা এমন এক সময়ে হলো যখন ১৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ইসরাইলি বাহিনী দক্ষিণ লেবাননের বেশিরভাগ এলাকা থেকে সরে যাওয়ার কথা। তবে ইসরাইল স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছে, তারা পুরোপুরি প্রত্যাহার করবে না এবং পাঁচটি কৌশলগত অবস্থানে সেনা মোতায়েন রাখবে।
যুদ্ধবিরতির শর্ত অনুযায়ী, হিজবুল্লাহকে লিটানি নদীর উত্তরে সরে যেতে হবে এবং দক্ষিণ লেবাননের সব সন্ত্রাসী অবকাঠামো ধ্বংস করতে হবে। তবে ইসরাইল অভিযোগ করেছে, লেবাননের সেনাবাহিনী এখনও কার্যকরভাবে দক্ষিণাঞ্চলে মোতায়েন হয়নি এবং তারা হিজবুল্লাহকে সংগঠিত হতে বাধা দিচ্ছে না।
হিজবুল্লাহর উপপ্রধান নাঈম কাসেম এক টেলিভিশন ভাষণে বলেন, ইসরাইলের অবশ্যই ১৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে পুরোপুরি সেনা প্রত্যাহার করতে হবে, কোনো অজুহাত গ্রহণযোগ্য হবে না। এটি নিশ্চিত করা লেবাননের সরকারের দায়িত্ব।
গত বছর ৭ অক্টোবর গাজার হামাস বাহিনী ইসরাইলে হামলা চালানোর পরদিন থেকেই হিজবুল্লাহ ইসরাইলের বিরুদ্ধে প্রতিদিন হামলা শুরু করে। জবাবে ইসরাইল লেবাননে স্থল ও বিমান হামলা চালায়, যা দুই মাস ধরে চলতে থাকে।
ইসরায়েল জানায়, তাদের অভিযানে হিজবুল্লাহর শীর্ষ নেতাদের অনেকেই নিহত হয়েছে এবং গোষ্ঠীটির সামরিক সক্ষমতা মারাত্মকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে।
যদিও নভেম্বরে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়, কিন্তু সাম্প্রতিক হামলা ও পাল্টা হামলার ফলে এই চুক্তির ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে ১৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ইসরাইল সেনা প্রত্যাহার না করলে নতুন করে সংঘাত শুরু হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।