শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৫, ০৫:০০ অপরাহ্ন

লিভার প্রতিস্থাপনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত এক সপ্তাহ পর

  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী, ২০২৫, ১১.৪৬ এএম
  • ০ বার পড়া হয়েছে

লন্ডনের বিশেষায়িত হাসপাতাল ‘দ্য লন্ডন ক্লিনিকে’ বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার চিকিৎসা চলছে। বিখ্যাত লিভার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক জন প্যাট্রিক কেনেডির তত্ত্বাবধানে তিনি ভর্তি আছেন। চার-পাঁচ দিন তার স্বাস্থ্যে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলবে। বাংলাদেশের এভার কেয়ার হাসপাতালে যত পরীক্ষা করা হয়েছিল তা আবারও নতুন করে পরীক্ষা করা হচ্ছে।

মেডিকেল বোর্ডের এক সদস্যের ভাষ্য মতে, দেশের মেডিকেল রিপোর্ট দেখে বিদেশি চিকিৎসকরা কাজ করবেন না বলেই নতুন করে সেখানে সব পরীক্ষা করা হচ্ছে। বলা যায় কয়েক ডজন পরীক্ষা; এসব শেষ করতে কয়েক দিন সময় লাগবে। এক সপ্তাহ পর সিদ্ধান্ত হবে লিভার প্রতিস্থাপনের বিষয়ে। লন্ডন থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সময়ের আলোকে এসব তথ্য জানান বিএনপি চেয়ারপারসনের চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের একজন চিকিৎসক। তিনি জানান, খালেদা জিয়ার নতুন করে স্বাস্থ্যের কোনো অবনতি হয়নি।

তিনি আগের চেয়ে ভালো আছেন। চিকিৎসক ও ঘনিষ্ঠজন ছাড়া ম্যাডামের সঙ্গে কেউ দেখা করতে পারছেন না। লন্ডন ক্লিনিকের চিকিৎসরা বোর্ডকে সবকিছু ফলোআপ করছেন। আমরা তা পরিবারকে জানিয়ে দিচ্ছি। লিভার প্রতিস্থাপনের বিষয়ে তিনি বলেন, এটি এখনই সুনির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। কারণ এখানে অনেক বিষয় জড়িত। বিদেশি চিকিৎসকরা অনেক বিষয় দেখে সিদ্ধান্ত নেবেন।

ম্যাডামের ইমিউনিটি (শারীরিক সক্ষমতা) কতটা, অর্থাৎ বডি কতটা সাপোর্ট করছে, হিমোগ্লোবিন কি পরিমাণ আছে এবং সবশেষ তারা দেখবে বর্তমান অবস্থা থেকে তিনি ব্যাক করতে পারবেন কি না-এসব মাথায় রাখবেন। কেননা ৮০ বছরের রোগীর জন্য তারা ঝুঁকি নেবেন না। এ ছাড়া আরও কিছু বিষয় জড়িত। কেননা তিনি মাল্টিডিজিসে আক্রান্ত। তবে এটি ঠিক একটা পূর্ণাঙ্গ ও উন্নতমানের থরো চেকআপ (পুরো দেহ) হবে। এতে স্থাস্থ্যের অনেক উন্নতি সম্ভব।

বিএনপি চেয়ারপারসনের সফরসঙ্গী ও উপদেষ্টা ড. এনামুল হক চৌধুরী সময়ের আলোকে বলেন, ম্যাডামের ছেলে তারেক রহমান ও তার সহধর্মিণী ডা. জুবাইদা রহমানসহ পরিবারের সদস্যরা প্রতিনিয়ত হাসপাতালে আসা-যাওয়ার মধ্যে আছেন। চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী বাসা থেকে খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে। পরিবারের সবচেয়ে কাছের সদস্যদের কাছে পেয়ে ম্যাডাম স্বাভাবিকভাবেই মনোবলের দিক থেকে সতেজ ও সুস্থ আছেন। বাকি কাজ চিকিৎসকরা করছেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখনই বলা যাচ্ছে না তিনি কবে নাগাদ দেশে ফিরবেন। আরও কয়েক দিন পর মেডিকেল বোর্ড হয়তো সিদ্ধান্ত জানাবেন। বিষয়টি তারাই ভালো বলতে পারবেন। বোর্ড যেভাবে পরামর্শ দেবে সেভাবেই চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালিত হবে।

বিএনপি চেয়ারপারসনের সফরসঙ্গী ও একান্ত সচিব এবিএম আবদুস সাত্তার সময়ের আলোকে বলেন, আমাদের প্রস্তুতি আছে উন্নত চিকিৎসায় প্রয়োজনে ম্যাডামকে যুক্তরাষ্ট্রে নিতে। তবে মেডিকেল বোর্ড কি সিদ্ধান্ত নেয় তা দেখতে হবে। আপাতত লন্ডন ক্লিনিকেই চলবে চিকিৎসা কার্যক্রম।

এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে থাকা তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন বুধবার লন্ডনে সাংবাদিকদের জানান, লন্ডনের চিকিৎসকরা বাংলাদেশের চিকিৎসকদের কাছ থেকে খালেদা জিয়ার সব জটিলতা জানার চেষ্টা করেছেন। সেই অনুযায়ী কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য সম্মিলিত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

ডা. জাহিদ হোসেন বলেন, খালেদা জিয়াকে প্যাট্রিক কেনেডির অধীনে ভর্তি রেখে যেসব বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন, তাদের খুঁজে বের করা হবে। এরপর বাংলাদেশ থেকে যে মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা এসেছেন, তাদের সঙ্গে ওনারা আলোচনা করবেন। পরবর্তী সময়ে বিএনপি নেত্রীর চিকিৎসা ওনাদের পরামর্শ মতোই চলবে। চিকিৎসা এরই মধ্যে শুরু হয়েছে।

তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিস, কিডনি, হার্ট, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিসসহ শারীরিক নানা অসুস্থতায় ভুগছেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য মঙ্গলবার রাতে কাতারের আমিরের পাঠানো বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে লন্ডনের উদ্দেশে যাত্রা করেন খালেদা জিয়া। স্থানীয় সময় বুধবার সকালে লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে পৌঁছান তিনি।

দেশে বিএনপির চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা হয়েছে, লন্ডন ক্লিনিকে এখন সেটির একটি পর্যালোচনা (রিভিউ) করা হবে বলে জানান অধ্যাপক জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, উনি কারাবন্দি ছিলেন, যেখানে ওনার সুচিকিৎসা করা হয়নি, যে চিকিৎসা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। কাজেই ওনার একটা পর্যালোচনা করা প্রয়োজন। তবে বাংলাদেশের চিকিৎসকরা যে চিকিৎসা করেছেন, অধ্যাপক প্যাট্রিক কেনেডি সেটির ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। কিন্তু তারপরও অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা আমাদের দেশে সম্ভব হয়নি। সে জন্যই কিন্তু ওনাকে বাংলাদেশ থেকে এখানে আনা।

জাহিদ হোসেন বলেন, ওনার অবস্থা স্থিতিশীল আছে। ওনাকে ভর্তি করা হয়েছে। উনি লন্ডন ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন থাকবেন, যত দিন এখানকার চিকিৎসকরা মনে করবেন ভর্তি থাকা প্রয়োজন।
লন্ডন ক্লিনিকের চিকিৎসকরা ছুটি দিলে বিএনপি চেয়ারপারসন কয়েক দিন বড় ছেলে তারেক রহমানের বাসায় থাকবেন। সেখান থেকে আরও কয়েক দিন ফলোআপে থাকবেন। পরবর্তী সময়ে অন্য সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান অধ্যাপক জাহিদ হোসেন।

দুদিন আগে উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যে যান বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। সবশেষ ২০১৭ সালের ১৫ জুলাই যুক্তরাজ্যেই চিকিৎসা নিতে গিয়েছিলেন ৭৯ বছর বয়সি খালেদা জিয়া। সেবার চোখ ও পায়ের চিকিৎসা নিয়েছিলেন। খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিস, কিডনি, হার্ট, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিসসহ নানা শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছেন। এরপর আর কোনো বিদেশ সফর হয়নি। ওই সময় লন্ডন গেলে তিনি তারেক রহমানের বাসায় ছিলেন। ২০১৮ সালে একটি মামলায় দণ্ডিত হয়ে কারাগারে যাওয়ার পর তার অসুস্থতা বাড়ে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved © 2021 rudrabarta24.net
Theme Developed BY ThemesBazar.Com

sakarya bayan escort escort adapazarı Eskişehir escort