ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইকের নিবন্ধন, রুট পারমিট, রেজিস্ট্রেশন প্রদান ও চলাচল সংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন, সড়ক-মহাসড়কে স্বল্প গতির গাড়িরর জন্য পৃথক লেন ও সার্ভিস রোড নির্মাণ, অবৈধ রেকারিং, ডাম্পিং, নির্যাতন, হয়রানি, ব্যাটারি ছিনতাই, চাঁদাবাজি বন্ধ এবং ব্যাটারি রিকশাচালক দুলাল হত্যার বিচারের দাবিতে রিকশা, ব্যাটারি রিকশা-ভ্যান ও ইজিবাইক চালক সংগ্রাম পরিষদ নারায়ণগঞ্জ জেলার উদ্যোগে সমাবেশ ও শহরে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে।
শনিবার (২০ আগস্ট) বেলা ১১ টায় নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাব ভবনের সামনে ওই সমাবেশ ও শহরে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
রিকশা, ব্যাটারি রিকশা-ভ্যান ও ইজিবাইক চালক সংগ্রাম পরিষদ নারায়ণগঞ্জ জেলার সদস্যসচিব মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি আবু নাঈম খান বিপ্লব, গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি সেলিম মাহমুদ, সহ-সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন সোহাগ, সংগ্রাম পরিষদের তাগাড়পাড় শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক খোরশেদ আলম, সদস্যসচিব ফজলুল হক, আবু সাঈদ সাইদুর, তল্লা শাখার আহ্বায়ক কামাল হোসেন, সদস্য সচিব ইস্রাফিল হোসেন রাজ, স্বপন মিয়া, আকাশ, আক্তার হোসেন, সুমন, ফতুল্লা রেল স্টেশন শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক আলামিন ও নিহত ব্যাটারি রিকশাচালক দুলালের মা আলেহা বেগম।
নেতৃবৃন্দ বলেন, অর্থনৈতিক কারণে দেশের মানুষের চলাচল ও যানবাহনের প্রয়োজন বেড়েছে। মানুষের বাহন হিসেবে রিকশা, ব্যাটারি রিকশা ও ইজিবাইকের প্রয়োজনীয়তা তাই আজ কোনভাবেই অস্বীকার করা যায় না। একারণেই একদিকে লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা অন্যদিকে সহজ ও সস্তা পরিবহণ হিসেবে তিন চাকার এই বাহন শুধু জনপ্রিয়ই নয় অত্যন্ত কার্যকর হিসেবে দ্রুত সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। যাত্রী পরিবহনের পাশাপাশি, স্বল্প দুরত্বে অল্প পরিমাণের পণ্য পরিবহণ এমনকি রোগী পরিবহনেও জনগণের হাতের কাছের বাহন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে এইসব বাহন। দেশেই তৈরি বলে এই বাহন নির্মাণ শিল্পে বিপুল পরিমাণ পুঁজি বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।
তারা বলেন, রিকশা চালানোর মত প্রচন্ড কায়িক এবং অমানবিক বাহনের বিপরীতে ব্যাটারিচালিত এইসব বাহন যেমন চালকের জন্য কিছুটা আরামদায়ক যাত্রীদের জন্যও সস্তা ও স্বাচ্ছন্দ্যময়। এটা বায়ু ও শব্দ দূষণ করে না এবং পরিবেশ বান্ধব। কিন্তু প্রয়োজনের তাগিদে স্থানীয় কারিগর দ্বারা তৈরি এইসব বাহনের কিছু কারিগরি ত্রুটি থাকায় তা অনেকের কাছে বিপজ্জনক বাহন হিসেবে বিবেচিত হতো। ইতিমধ্যেই সে সব ত্রুটি চিহ্নিত করে কিছুটা সংশোধন করা হয়েছে ফলে দূর্ঘটনার হার অন্যান্য বাহনের তুলনায় অনেক কমে গিয়েছে। ইতিমধ্যে মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট মহাসড়ক ব্যতিত ব্যাটারিচালিত যান চলাচলে বাঁধা নেই বলে মতামত দিয়েছেন।
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে গত ১০ বছর ধরে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করে ব্যাটারিচালিত যানবাহনের আধুনিকায়ন, লাইসেন্স প্রদানসহ ৬ দফা দাবিতে ধারাবাহিক ও সুশৃঙ্খল আন্দোলন পরিচালিত হচ্ছে। ব্যাটারিচালিত যানবাহনের আধুনিকায়নের ক্ষেত্রে কোন প্রয়োজন হলে সহায়তা করতে এবং চালকদেরকে প্রশিক্ষণ দেয়াসহ সড়কে শৃঙ্খলা রক্ষায় যে কোন উদ্যোগে অংশ নিতে সংগ্রাম পরিষদ প্রস্তুত। রেজিস্ট্রেশন ও নীতিমালা প্রণয়ন সেক্টরের লাখ লাখ চালকের জীবনমান উন্নত করতে সহায়তা করবে। সরকারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে নিবন্ধন, রুট পারমিট ও লাইসেন্স দেয়ার ব্যবস্থা চালু হলে সড়কে শৃঙ্খলা ও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে। এর ফলে সরকার পাবে রাজস্ব, সড়কে আসবে শৃঙ্খলা আর চালক মালিকরা পাবে স্বস্তি। যার সামগ্রিক ফলাফলে অর্থনীতিতে গতি আসবে, দুর্নীতির পথ বন্ধ হবে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, দিনের বেলা পুলিশের অবৈধ রেকারিং, ডাম্পিং এর কারণে নারায়ণগঞ্জে অনেক ব্যাটারি রিকশা রাত্রে চালানো হয়। রাতে চালানোর কারণে রিকশা, ব্যাটারি ছিনতাই অনেক বেড়ে গেছে। গত ১১ আগস্ট গভীর রাতে এসপি অফিস-চানমারি এলাকায় ছিনতাইকারীর ছুড়ির আঘাতে ব্যাটারি রিকশা চালক দুলাল মৃত্যুবরণ করে। এর আগেও রিকশা চালক হত্যা হয়েছে। বিচার ও শাস্তি না হওয়ায় দুবৃত্তদের দৌরাত্ম্য দিন দিন আরও বেড়েছে। নেতৃবৃন্দ দুলাল হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার ও শাস্তি এবং রিকশাচালকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি করেন।