প্রসিদ্ধ এক হাদিসে আছে— ‘সাল্লু কামা রআইতুমিনি’— তোমরা এমনভাবে নামাজ পড়ো, যেভাবে আমাকে দেখেছো। (মুসনাদে আশ শাফি, হাদিস নং ৩১৯)
কুরআনে অন্য এক জায়গায় আছে— তোমাদের জন্য রাসুলের জীবনাদর্শে রয়েছে উত্তম নমুনা। (সুরা আহযাব, আয়াত ২১)
সমস্ত উলামায়ে কেরাম স্বীকার করেন এখানে ‘উসওয়াহ’ শব্দটি সামগ্রিক অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে। অর্থাৎ জীবনের প্রতিটি পদেই রাসুল (সা.) আমাদের জন্য আদর্শ, আমাদের নমুনা। তো আল্লাহর রাসুল (সা.) যে বললেন (তোমরা এমনভাবে নামাজ পড়ো, যেভাবে আমাকে দেখেছো।) একথা আমাদের বুঝতে হবে এক্সটেন্ডেড সেন্সে। মানে শুধুমাত্র নামাজের ক্ষেত্রে নয়, জীবনের সর্বক্ষেত্রেই এই হাদিস প্রয়োগ করতে হবে।
তো আমি মনে করি ফলাফল লাভ করা যায় এমন প্রতিটি জায়গাতেই এই হাদিস ব্যবহার করা প্রয়োজন, যেন পরিকল্পনাকে নিয়মতান্ত্রিক করা যায়।
নিয়মতান্ত্রিক পরিকল্পনাকে আরবিতে বলা হয় تخطيط (তাখতিত)। তো ‘সাল্লু কামা রআইতুমিনি’-কে যখন আমরা সামগ্রিক অর্থে গ্রহণ করব, তখন এখানে خططوا كما رأيتموني أخطط (অর্থাৎ এমনভাবে পরিকল্পনা করো যেভাবে আমি পরিকল্পনা করি) এই বিষয়টিও শামিল হয়ে যায়।
আমার মনে যখন এই উপলব্ধি আসে, তখন আমি ভাবতে লাগলাম রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর পরিকল্পনার বেসিক মূলনীতি কী ছিল? মানে মূলনীতি তো অনেক রকমের হতে পারে, কিন্তু একটা সর্বব্যাপী মূলনীতি নিশ্চয় আছে। তো আমি এ নিয়ে গভীর মনোযোগ সহকারে চিন্তা করতে লাগলাম।
আমার মনে হলো আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর বেসিক মূলনীতি ছিল— হাতের নাগালে যা আছে তা নিয়ে পরিকল্পনা করো, যা নেই তা নিয়ে কোনো পরিকল্পনা নয়।
ইতিবাচক বিষয়ে সবসময় একটা নেতিবাচক বিষয় থাকে। সব ‘করা’র মধ্যে একটা ‘না করা’ থাকে। এক জিনিস ধরতে হলে আরেক জিনিস ছাড়তে হয়। তো আমি ভাবলাম এর ওপর একটা মূলনীতি দাঁড় করানো যেতে পারে— হাতের নাগালে যা আছে তা নিয়ে পরিকল্পনা করো, যা নেই তা নিয়ে কোনো পরিকল্পনা নয়। আমি খেয়াল করে দেখলাম রাসুল (সা.)-এর সারাজীবন এই মূলনীতির ওপর অতিবাহিত হয়েছে। সারাটা জীবন।
যেমন দেখুন, রাসুল (সা.) যখন মক্কা ত্যাগ করেন, যাকে আমরা হিজরত বলি, এর একটা পদ্ধতি এমনও হতে পারত— তিনি এলান করে বলছেন আমি মদিনা যাচ্ছি। কিন্তু তিনি এমনটি করেননি। হিজরতের রাতে তিনি খাদিজা (রা.)-এর ঘরে ছিলেন, তিনি চাইলে সামনের দরজা দিয়ে বের হতে পারতেন, কিন্তু বের হয়েছেন পিছনের দরজা দিয়ে। তিনি দিনেও বের হতে পারতেন, কিন্তু বের হয়েছেন রাতের আঁধারে। তিনি সোজা মদিনার দিকে চলে যেতে পারতেন, কিন্তু উল্টো দিকে গিয়ে সওর গুহায় আশ্রয় গ্রহণ করেছিলেন। সেখানে কয়েকদিন লুকিয়ে থেকে তারপর মদিনার দিকে রওনা দিয়েছিলেন।
প্রত্যেক পরিস্থিতেই তিনি দুটো সম্ভাবনা দেখেছিলেন, একটা ছিল হাতের নাগালে আরেকটা নাগালের বাইরে। কিন্তু তিনি হাতের নাগালে যা পেয়েছেন তা নিয়েই পরিকল্পনা করেছেন, যা পাননি তা নিয়ে করেননি। এটাই রাসুল (সা.)-এর কর্মপদ্ধতি, কুরআনে যা আমাদের অনুসরণ করতে বলা হয়েছে।