বুধবার, ০৮ জানুয়ারী ২০২৫, ০৬:২৩ অপরাহ্ন

যুক্তরাজ্যে যাচ্ছেন আজ : পৌঁছেই লন্ডন ক্লিনিকে ভর্তি হবেন খালেদা জিয়া

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ৭ জানুয়ারী, ২০২৫, ৭.৩১ এএম
  • ০ বার পড়া হয়েছে

দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিস, হৃদরোগ, কিডনি সমস্যাসহ নানা স্বাস্থ্য জটিলতায় ভুগতে থাকা ৭৯ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া অবশেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাচ্ছেন।
আজ মঙ্গলবার রাত ১০টায় কাতারের আমিরের স্পেশাল এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে বেগম খালেদা জিয়া ঢাকার হয়রত শাহ জালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে দোহা হয়ে যুক্তরাজ্যের লন্ডনের হিথরো ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে রওনা হবেন। পরদিন লন্ডন পৌঁছেই লন্ডন ক্লিনিকে ভর্তি হবেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী। গতকাল সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন একথা জানান। এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার লন্ডন যাত্রা উপলক্ষে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কয়েক স্তরের বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

বিএনপি সূত্রে জানা যায়, বেগম খালেদা জিয়া আজ মঙ্গলবার রাত ৮টায় গুলশানের বাসভবন ফিরোজা থেকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করবেন। রাত ৯টায় বিমানবন্দরে পৌঁছে ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করার কথা। রাত ১০টায় রয়েল কাতার আমারি ‘এয়ার অ্যাম্বুলেন্স’ যোগে যুক্তরাজ্যের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করবেন। কাতারের আমিরের বিশেষ বিমান এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি গতকাল সোমবার সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটে শাহজালাল বিমানবন্দরে পৌঁছায়। কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অসুস্থতার জেনে রাজকীয় বহরের এই বিশেষ বিমান দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন প্রফেসর ডা. জাহিদ হোসেন। এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের রাজকীয় কাতারের চারজন চিকিৎসক এবং প্যারা মেডিক্সগণ থাকবেন। ঢাকায় থেকে খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ডের ৬ জন সদস্য এই বিমানে যাবেন। এরা হলেন- প্রফেসর ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদার, প্রফেসর ডা. এফএম সিদ্দিক, প্রফেসর ডা. নরুদ্দিন আহমেদ, ডা. জাফর ইকবাল, প্রফেসর ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন ও ডা. মোহাম্মদ আল মামুন। এছাড়া বেগম খালেদা জিয়ার সাথে তার ছোট ছেলের স্ত্রী সৈয়দা শামিলা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এনামুল হক চৌধুরী, নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল ও খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব এবিএম আবদুস সাত্তারসহ ব্যক্তিগত কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারি রয়েছেন।

বেগম জিয়ার লন্ডন যাত্রা উপলক্ষে গতকাল গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যের ‘লন্ডন ক্লিনিক’ এ ভর্তি হবেন খালেদা জিয়া। মঙ্গলবার রাতে ঢাকা থেকে রওনা হয়ে পরদিন লন্ডন পৌঁছে এই হাসপাতালে ভর্তি হবেন তিনি।
ডা. জাহিদ বলেন, এনএইচএসের অধীনে লন্ডন ক্লিনিক বলে একটা পুরনো ঐহিত্যবাহী হসপিটাল আছে সেই হসপিটালে উনাকে (খালেদা জিয়া) ভর্তি করা হবে। হিথরো ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে থেকে উনাকে সরাসরি সেখানে নিয়ে যাওয়া হবে। এই হসপিটালে উনি চিকিৎসাধীন থাকবেন।

দেশবাসীর কাছে দোয়া প্রার্থনা:
ডা. জাহিদ বলেন, সকলের কাছে কতৃজ্ঞতা জানাতে চাই, যারা ম্যাডামের সুস্থতার জন্য দোয়া করেছেন, বিভিন্ন ধর্মের মানুষ বিভিন্নভাবে প্রার্থনা করেছেন তাদের সবার কাছে দলের পক্ষ থেকে আমরা কৃতজ্ঞতা জানাই, ধন্যবাদ জানাই। ম্যাডাম সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন, দল ধন্যবাদ জানিয়েছে, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেব ধন্যবাদ জানিয়েছেন। ম্যাডামের আগামী চিকিৎসাটা যাতে সুস্থ হয়ে আল্লাহর অশেষ মেহেরবানীতে উনি আবার আমাদের মাঝে ফেরত আসতে পারে সেজন্য দেশবাসীকে দোয়া করার জন্য দলের পক্ষ থেকে, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, মহাসচিবসহ স্থায়ী কমিটি সবাই আপনাদের মাধ্যমে দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন। ম্যাডামের পরিবারও ম্যাডামের জন্য দোয়া চেয়েছেন।

এখন লন্ডনের হসপিটালেই চিকিৎসা:
বেগম জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক জাহিদ হোসেন বলেন, ম্যাডামের নানা শারীরিক জটিলতা রয়েছে যা আমরা বিভিন্ন সময়ে বলেছি। সর্বপরি উনার লিভারের জটিলতাটা অর্থাৎ লিভার সিরোসিস পরবর্তিতে কম্পেনসেন্টারি লিভার ডিজিজ বলে গ্রেট-টু সেটার জন্য টিপস (চিকিৎসা বিজ্ঞানের বিশেষ পদ্ধতি টিআইপিস-টিপস) করা হয়েছে। টিপসের কিছু টেকনিক্যাল আসপেক্ট আছে এডজাস্টমেন্টের বিষয় আছে, হার্টে স্টেন্টিং করার পর চেক করে আবার সেটার জন্য রি-স্টেন্টিং করে অথবা চেক করে দেখে যে, স্টেন্টিংটা ভালোভাবে কাজ করছে কিনা, এই জিনিসগুলো তো আমরা করতে পারিনি। হার্টে উনার বøক ছিলো একাধিক। আমরা ওই সময়ে খালি লাইফ সেইভিং যেটুকু পোরসন সেইটুকু করেছি। কারণ ওই সময়ে উনার শারীরিক সুস্থতা ওইরকম ছিলো না। উনার আরও যে বøক আছে সেটা অ্যাডড্রেস করার দরকার আছে, উনার ক্রনিক কিডনি ডিজিজ যেটা আছে সেটা অ্যাডড্রেস করতে হবে। উনার করোনা পরবর্তিতে কিছু জটিলতা হয়েছে সেগুলো নিরসন করার ব্যবস্থা নিতে হবে। এটা ওভার অল থ্রো চেকিংয়ের জন্য যেটা আমাদের দেশে হয়েছে, দেশের ফিজিশিয়ানরা, এভারকেয়ার হসপিটালের স্টাফ তারা বেস্ট করেছে। এই ব্যাপারে আমাদের ম্যাডামের পক্ষ থেকে, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে, পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের ডি-সেটিসফেকশন নেই, সবাই হ্যাপি, উই আর হ্যাপি অলসো, দল হ্যাপি। কাজেই আরো কিছু উন্নত করার জন্য সেখানে আরও থ্রো চেকিং হবে।

তিনি বলেন, লিভার ট্রান্সপ্লান্টের বিষয়ে আমাদের মনে রাখতে হবে উনার যে বয়স, লিভার ট্রান্সপ্লান্টের বিষয়টি সিদ্ধান্ত দেবে লিভার ট্রান্সপ্লান্ট ইউনিটে যাওয়ার পরে। ওখানে ওই সুবিধাটা আছে, সো দে উইল ডিসাইড যে, ওয়াট উইল বি দ্যা নেক্সক্ট কোর্স অব টিট্রমেন্ট। আমরা লন্ডন ক্লিনিকে যেটি মাল্টি ডিসিপ্ল্যানারি এডভান্স সেন্টার সেখানে নিয়ে যাচ্ছি। সেখানকার চিকিৎসকরা উনাকে দেখে তারপরে ডিসিশন হবে উনার নেক্সক্ট কোর্স অফ ডিসিশন কি হবে?

যুক্তরাষ্ট্রের চিকিৎসার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ডা. জাহিদ বলেন, যদি আমরা ওখানে (লন্ডন ক্লিনিক) সুপারিশ করেন যে, ইয়েস সি নিডস ..তাদের এখানে নেই, জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটি হাসপিটাল নিয়ে যেতে হবে। তখন হয়ত যাওয়ার একটা প্রশ্ন আসে।

পবিত্র ওমরাহ পালনে সৌদি আরব যাবেন কিনা এরকম প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সুস্থ থাকলেই ফেরার সময়ে বা কোনো এক সময়ে মানুষ চাইলে কিন্তু ওমরাহ করা যায় না, আল্লাহ চাইতে হয়। কাজে রাব্বুল আ‘লামীন যদি ইনশাল্লাহ কবুল করেন ডেফিনেটলি ম্যাডাম সেটা করবে, এটা কিন্তু প্রিডিসাইড না যে, এটা করবেনই। হজ্ব এবং ওমরাহ অবশ্যই আল্লাহ চাইতে হবে। টিকেট করার পরে যাওয়ার পরও এমনও হয়েছে অনেকে করতে পারেননা। কাজেই উনি একজন ধার্মিক মানুষ, মনের ইচ্ছা আছে। উনি সুযোগ পেলে হজ্ব করেছেন, ওমরাহ করেছেন পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বেশ কয়েক বার। এত নির্যাতন-অত্যাচার, কষ্টের পরে শুকরিয়া আদায় করার জন্য ডেফিন্টেলি উনার ওমরাহ পালনের আগ্রহ আছে।

বিমানবন্দরে কয়েক স্তরের বিশেষ নিরাপত্তা : বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া লন্ডন যাত্রা উপলক্ষে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কয়েক স্তরের বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। খালেদা জিয়াকে বিদায় জানাতে বিএনপির বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মীর বিমানবন্দরে আগমনকে কেন্দ্র করে বিশেষ এই সতর্কাবস্থা নিয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। বিমানবন্দরের বাইরে (ল্যান্ডসাইড) নিরাপত্তায় এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশের পাশাপাশি থাকবে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব), ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি), ডিবি এবং সোয়াতের মতো স্পেশাল টিমের সদস্যরাও। এ বিষয়ে বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ারভাইস মার্শাল মঞ্জুর কবির ভুঁইয়া বলেন, খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য মঙ্গলবার রাত ১০ টার দিকে লন্ডনের উদ্দেশে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করবেন। আমরা মনে করি, এ সময় বিএনপির নেতাকর্মীরা বিমানবন্দরে আসবেন। তাদের নিরাপত্তায় সব ধরনের ব্যবস্থা সম্পন্ন করেছি। ইতোমধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থান আমি নিজে পরিদর্শন করেছি। আমাদের এখানে নিরাপত্তায় নিয়োজিত এভসেক, এপিবিএনসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও মোতায়েন থাকবে।

তিনি বলেন, বিমানবন্দরের বাইরে ও ভেতরে তার (খালেদা জিয়া) যেন কোনো ধরনের সমস্যা না হয়, সে ব্যাপারে সর্বোচ্চ ব্যবস্থাই থাকবে। এছাড়া বিমানবন্দরে আগত অন্য যাত্রীদের যাতে কোনো প্রকার নিরাপত্তা সমস্যা না হয়, সে ব্যাপারেও আমাদের সর্বোচ্চ পদক্ষেপ থাকবে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved © 2021 rudrabarta24.net
Theme Developed BY ThemesBazar.Com

sakarya bayan escort escort adapazarı Eskişehir escort