ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুরের সালনা থেকে টঙ্গী পর্যন্ত বেহাল যোগাযোগ ব্যবস্থার দ্রুত উন্নতির দাবিতে রোববার থেকে ঢাকাগামী সব গণপরিবহণ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
শনিবার সন্ধ্যায় নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে মাইকিং করে এ ঘোষণা দিয়েছে ময়মনসিংহ জেলা মোটর মালিক সমিতি ও চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি।
এর আগে গত ২ জানুয়ারি ময়মনসিংহ প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে ১৫ দিনের আলটিমেটাম দিয়ে এই রুটের গাজীপুরের সালনা থেকে টঙ্গী পর্যন্ত খানাখন্দে ভরা মহাসড়কটি যানবাহন চলাচলের উপযোগী করার যৌথভাবে দাবি জানায় পরিবহণ ও চেম্বার নেতারা।
জেলা মোটর মালিক সমিতির সভাপতি মমতাজ উদ্দিন মন্তা যুগান্তরকে জানান, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক চার লেনের সড়ক হওয়ায় ময়মনসিংহ থেকে গাজীপুর যাতায়াতে এক থেকে দেড় ঘণ্টা সময় লাগে। কিন্তু গাজীপুর থেকে টঙ্গী পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে প্রায় ৪-৫ ঘণ্টা সময় লাগে।
তিনি বলেন, যন্ত্রাংশ, টায়ারসহ নতুন নতুন গাড়ির কর্মক্ষমতাও ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। সেই সঙ্গে নষ্ট হচ্ছে মানুষের মহামূল্যবান কর্মঘণ্টা।
তিনি জানান, পরিবহণ মালিক-শ্রমিকরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে চলাচলরত বিভিন্ন পরিবহণের ওপর একটি জরিপ চালিয়েছেন। এতে দেখা যায়, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে প্রতি মিনিটে সাতটি যাত্রীবাহী গাড়ি বিভিন্ন সড়ক থেকে গাজীপুর হয়ে ঢাকা অভিমুখে চলাচল করে। গড়ে ঘণ্টায় যাতায়াত করছে ৪২০টি গাড়ি। সেই হিসাবে গড়ে ২৪ ঘণ্টায় চলাচল করছে ১০ হাজার ৮০টি গাড়ি। পরিবহণ নেতাদের হিসাবে বিভিন্ন যানজট, রাস্তা খারাপের কারণে স্বাভাবিকের চেয়ে তেল লাগে ২০ লিটার বেশি। সুতরাং ২৪ ঘণ্টায় ১০ হাজার ৮০টি গাড়ির ২০ লিটার করে তেল লাগে ২ লাখ ১ হাজার ৬০০ লিটার; যার বাজার মূল্য ১ কোটি ৬১ লাখ ২৮ হাজার টাকা।
মমতাজ উদ্দিন মন্তা আরও জানান, ভাঙা রাস্তার কারণে প্রতিদিন তেল বাবদই নষ্ট হচ্ছে ১ কোটি ৬১ লাখ ২৮ হাজার টাকা; যা সম্পূর্ণ মালিকদের আয় থেকেই নষ্ট হচ্ছে। দিন দিন পরিবহণ খাতের এ ক্ষতির পরিমাণ বাড়তে থাকলে মালিকরা তাদের গাড়ির কিস্তিসহ মেরামত, যন্ত্রাংশ, টায়ার কোনোটাই পরিচালনা করতে পারবেন না।
ঢাকা-গাজীপুর রাস্তা বেহালের কারণে আমদানি-রপ্তানিসহ বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কাঁচামাল বহনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের। ওই ১২ কিলোমিটার মহাসড়কের দ্রুত সংস্কার করে বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের মানুষের সহনীয় চলাচল নিশ্চিত করার আহ্বান জানান তিনি।
বাস বিভাগের সম্পাদক সোমনাথ সাহা জানান, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতি ও ধীরগতির কাজের কারণে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুরের সালনা থেকে টঙ্গী পর্যন্ত খানা-খন্দে ভরা মহাসড়কটি যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী। আমরা আপাতত গণপরিবহণ বন্ধের ডাক দিয়েছি। রোববার সকাল ৬টা থেকে ময়মনসিংহ-ঢাকাগামী গণপরিবহণ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে ময়মনসিংহ বিভাগের অভ্যন্তরে অথবা আন্তঃজেলা গণপরিবহণ চলাচল করবে। দ্রুত সংস্কার করা না হলে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধের হুঁশিয়ারি দেন তিনি।