সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৪৫ অপরাহ্ন

ম্যাক্সওয়েলের ডাবল সেঞ্চুরিতে অসম্ভবকে সম্ভব করলো অস্ট্রেলিয়া

  • আপডেট সময় বুধবার, ৮ নভেম্বর, ২০২৩, ৯.৩০ এএম
  • ১২৫ বার পড়া হয়েছে

আফগানিস্তানের ছুড়ে দেওয়া ২৯২ রানের টার্গেট তাড়া করতে নেমে ৮৭ রানেই ৬ উইকেট হারিয়ে ফেলে অস্ট্রেলিয়া। তখন জয়ের সম্ভবনা অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে ০.৯০%, আর আফগানিস্তানের ৯৯.১০%। একই রানে সপ্তম উইকেট হারালে অজিদের জয়ের সম্ভাবনা তলানিতে নেমে যায়।

সেখান থেকে অস্ট্রেলিয়া এই ম্যাচ জিতবে কেউ হয়তো কল্পনাও করেনি। কিন্তু আহত গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের অবিশ্বাস্য অপরাজিত ডাবল সেঞ্চুরিতে ভর করে অসম্ভবকে সম্ভব করেছে তারা। ৪৬.৫ ওভারে ৭ উইকেটে ২৯৩ রান করে জয় নিশ্চিত করে অস্ট্রেলিয়া। পাশাপাশি আফগানিস্তানের হৃদয় ভেঙে এবারের আসরের সেমিফাইনালও নিশ্চিত করে তারা।

ম্যাক্সওয়েল মুজিব উর রহমানের করা ৪৭তম ওভারে ৩টি ছক্কা ও ১ চারে ২২ রান নিয়ে নিজের ডাবল সেঞ্চুরি ও দলের জয় নিশ্চিত করেন। শেষ পর্যন্ত তিনি অপরাজিত থাকেন ২০১ রানে। যা ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসে রান তাড়া করতে নেমে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত সংগ্রহ। যা তিনি মাত্র ১২৮ বলে ২১টি চার ও ১০ ছক্কায় করেন। তার স্ট্রাইক রেট ছিল ১৫৭.০৩।

তাকে দারুণ সঙ্গ দেওয়া অধিনায়ক প্যাট কামিন্স ছিলেন সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুতে। তিনি ৬৮ বল খেলে ১ চারে ১২ রানে অপারজিত থাকেন। তার এই ১২ রানের মূল্য অবশ্য অনেক, নিঃসন্দেহে অনেক।

অষ্টম উইকেট জুটিতে তারা দুজন ১৭০ বলে অবিচ্ছিন্ন ২০২ রান তুলে দলের জয় নিশ্চিত করেন। দলকে ধ্বংসস্তূপ থেকে টেনে তোলেন জয়ের মঞ্চে। সেমিফাইনালের লড়াইয়ের সারণিতে।

রান তাড়া করতে নেমে দ্বিতীয় ওভারেই উইকেট হারায় অস্ট্রেলিয়া। দলীয় ৪ রানের মাথায় ত্রাভিস হেড নাভিন-উল-হকের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে আউট হন শূন্যরানে। সেখান থেকে ডেভিড ওয়ার্নার ও মিচেল মার্শ ৩৯ রানের জুটি গড়ে ভালো কিছুর ইঙ্গিত দেন। কিন্তু ৪৩ রানের মাথায় নাভিনের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে মার্শ আউট হন ২ চার ও ২ ছক্কায় ২৪ রান করে।

মার্শ ফেরার পর উইকেট পতনের মিছিল শুরু হয় অস্ট্রেলিয়ার। ৪৯ রানের মাথায় ওয়ার্নার ফেরেন ৩ চারে ১৮ রানে। তাকে ফেরান আজমতউল্লাহ ওমরজাই। একই রানে তিনি জশ ইংলিসকেও ফেরান শূন্যরানে।

৬৯ রানের মাথায় পঞ্চম ব্যাটসম্যান হিসেবে রান আউট হন মার্নাস ল্যাবুশেন। ২ চারে ১৪ রান করে যান তিনি। তার বিদায়ে মাঠে নামেন ম্যাক্সওয়েল। ৮৭ রানের সময় রশিদ খানের বলে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে মার্কাস স্টয়েনিস ফেরেন ১ চারে ৬ রান করে। ৯১ রানের মাথায় সপ্তম উইকেট হারায় অজিরা। এবার মিচেল স্টার্ককে ফেরান রশিদ খান।

অস্ট্রেলিয়ার ড্রেসিংরুম ও ডাগআউটে তখন শ্মশানের নীরবতা। আফগান শিবিরে জয়োল্লাসের বারতা। কিন্তু কে জানতো পাশার দানের মতো সবকিছু উল্টে দিবেন আহত ম্যাক্সওয়েল! ৯১ রান তুলতেই ৭ উইকেট হারিয়ে ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়া দলের হাল ধরেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। তাকে দারুণ সঙ্গ দেন প্যাট কামিন্স।

 

অধিনায়কের সঙ্গ পেয়ে ব্যাট হাতে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠেন তিনি। স্কোরবোর্ডে রান নেই, স্বীকৃত কোনো ব্যাটসম্যান নেই— এগুলো থোরাই কেয়ার করে ব্যাটকে তলোয়ার বানিয়ে চালাতে থাকলেন অবিরাম। ৫১ বলে ৭ চারে করেন ফিফটি। এরপর ৭৬ বলে ১০টি চার ও ৩ ছক্কায় পূর্ণ করেন এবারের বিশ্বকাপে নিজের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। পায়ের পেশিতে টান খেয়ে বার বার সবুজ ঘাসের বুকে লুটিয়ে পড়ছিলেন। শুশ্রূষা নিয়ে আবার উঠে দাঁড়াচ্ছিলেন। দৌড়ে রানও নিতে পারছিলেন না। কেবল বাউন্ডারি, ওভার বাউন্ডারির ওপর নির্ভর করে আগাচ্ছিলেন।

তার পায়ের অবস্থা ক্রমেই খারাপ হচ্ছিল। সেটা দেখে অ্যাডাম জাম্পা গার্ড-প্যাড পরে রেডি ছিলেন। কিন্তু হার না মানা ম্যাক্সওয়েলকে কোনো কিছুই দমাতে পারেনি।

১০৪ বলে ১৭টি চার ও ৫ ছক্কায় ১৫০ পূর্ণ করেন। আর ১২৮ বলে ২১টি চার ও ১০ ছক্কায় অপরাজিত ২০১ রান তুলে দলের জয় নিশ্চিত করেন। তার এই অতিমানবীয় ইনিংসের প্রশংসা করার মতো, ব্যাখ্যা দেওয়ার মতো কোনো বিশেষণ দাঁড় করানো মুশকিলই বটে।

তার আগে ব্যাট করতে নেমে সূচনাটা ভালোই করে আফগানরা। অবশ্য ৩৮ রানের মাথায় রহমানুল্লাহ গুরবাজের উইকেট হারায়। ২ চারে ২১ রান আসে তার ব্যাট থেকে। সেখান থেকে ইব্রাহিম জাদরান ও রহমত শাহ ১০০ বলে ৮৩ রানের জুটি গড়ে দলীয় সংগ্রহকে এগিয়ে নেন। দলীয় ১২১ রানের মাথায় রহমত ফেরেন ১ চারে ৩০ রান করে।

এরপর ইব্রাহিম ও হাশমতউল্লাহ শাহিদি তৃতীয় উইকেটে দলীয় সংগ্রহে যোগ করেন মূল্যবান ৫০ রান। দলীয় ১৭৩ রানের মাথায় ফেরেন এবারের বিশ্বকাপে দারুণ ছন্দে থাকা হাশমতউল্লাহ। অধিনায়ক ২ চারে ২৬ রান করেন।

২১০ রানের মাথায় চতুর্থ উইকেট হারায় আফগানিস্তান। আজমতউল্লাহ ওমরজাই ১ চার ও ২ ছক্কায় ২২ রান করে আউট হন।

 

এর মাঝে বিশ্বকাপের মঞ্চে প্রথম আফগান ক্রিকেটার হিসেবে সেঞ্চুরি তুলে নেন ইব্রাহিম। ১৩১ বলে ৭ চারে তিন অঙ্কের ম্যাজিক্যাল ফিগারে পৌঁছান তিনি। যা তার ওয়ানডে ক্যারিয়ারের পঞ্চম সেঞ্চুরি।

মোহাম্মদ নবী এসে ভালো কিছুর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন ছক্কা হাঁকিয়ে। কিন্তু ১০ বলে ১২ রান করে ফিরতে হয় তাকে। এরপর ইব্রাহিম ও রশিদ খান মিলে ঝড় তোলেন। পঞ্চম উইকেটে তারা দুজন মাত্র ২৮ বলে দলীয় সংগ্রহে যোগ করেন ৫৮* রান। সেখানে ১৮ বলে ৩৫ রান যোগ করেন রশিদ। আর ১০ বলে ২১ রান যোগ করেন ইব্রাহিম।

শেষ পর্যন্ত ইব্রাহিম অপরাজিত থাকেন ১৪৩ বলে ৮ চার ও ৩ ছক্কায় ১২৯ রানে। আর রশিদ ১৮ বলে ২ চার ও ৩ ছক্কায় ৩৫ রানে। তাতে আফগানিস্তান ২৯১ রানের লড়াকু সংগ্রহ পায়।

বল হাতে অস্ট্রেলিয়ার জশ হ্যাজলেউড ৯ ওভারে ৩৯ রান দিয়ে ২টি উইকেট নেন। ১টি করে উইকেট নেন মিচেল স্টার্ক, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ও অ্যাডাম জাম্পা। তার মধ্যে স্টার্ক ছিলেন ব্যায়বহুল। ৯ ওভারে দেন ৭০ রান।

ম্যাচসেরা হন অতিমানবীয় ইনিংস খেলা অস্ট্রেলিয়ান গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। শেষ ম্যাচে তারা পুনেতে বাংলাদেশের মুখোমুখি হবে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved © 2021 rudrabarta24.net
Theme Developed BY ThemesBazar.Com

sakarya bayan escort escort adapazarı Eskişehir escort