মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে রাতের আঁধারে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে এক্সকেভেটর দিয়ে ফসলি জমির উপরের অংশ কেটে ট্রাকে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ইটভাটায় ও বিভিন্ন স্থাপনা ভরাট কাজে। এতে নষ্ট হচ্ছে শত শত বিঘা ফসলি জমি। অতিরিক্ত ওভারলোডিংয়ের ফলে নষ্ট হচ্ছে গ্রামীণ রাস্তা।
সরেজমিন দেখা যায়, উপজেলার লতব্দী ইউনিয়নের, চন্ডিবর্দি, রামকৃষ্ণদী ও গুয়াখোলা, বাসাইল ও রাজানগর, শেখরনগর ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে চলছে ফসলি জমি থেকে মাটি কাটার উৎসব। গত এক মাস ধরে রাত ৮টা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত অন্তত ১০ থেকে ১৫টি স্থান থেকে মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে। উপজেলায় বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে প্রায় ৫৫টি ইটভাটা আছে। এসব ইটভাটায় মাটির চাহিদা পূরণ করতে কৃষিজমি থেকে মাটি নেওয়া হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। মাটি ব্যবসায়ীরা কৃষকের কাছ থেকে কাঠাপ্রতি জমির মাটি কিনে নেন ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকায়।
ফ্রান্স প্রবাসী মিজানুর রহমান সরকার মিজান বলেন, আমি প্রবাসে থাকি, এখানে জমাজমি ফাঁকা থাকে। আমার ক্রয়কৃত জমির মাটি জোর করে কেটে নিয়ে যাচ্ছে। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও সিরাজদিখান থানা পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছি, তারা একে অপরের কাজ বলে কালক্ষেপণ করছেন। প্রকৃত ভূমিদস্যুদের প্রতি কোনো আইনি ব্যবস্থা নিচ্ছেন না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক কৃষক বলেন, ব্যবসায়ীরা তাদের মাটি বিক্রির ব্যাপারে উৎসাহিত করছে। জমির কোনো ক্ষতি হবে না। বর্ষা এলে জমির সেই মাটি পূরণ হয়ে ফসল ফলানো যাবে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, কৃষকদের যেসব জমিতে চাষাবাদ হয় না, সেসব জমির মাটিগুলো আমাদের কাছে বিক্রি করেন। আমরা এগুলো ইট-ভাটা ও ভিটাবাড়ি ভরাটের কাজে বিক্রি করে থাকি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রোজিনা আক্তার সাংবাদিকদেরকে বলেন, মাটির উপরিভাগের ১০-১৫ ইঞ্চির মধ্যে উর্বরতা শক্তি থাকে। মাটি খুঁড়ে বিক্রি করার ফলে তা পুনরায় ফিরে আসতে সময় লাগে। এছাড়া মাটির এ অংশে যেকোনো ফসল বেড়ে উঠার গুণাগুণ সুরক্ষিত থাকে। বীজ রোপণের পর এই অংশ থেকেই ফসল প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদান গ্রহণ করে বড় হয়। এটাকে ‘টপ সয়েল’ বলে। এই ‘টপ সয়েল’ একবার কেটে নিলে সে জমিতে আর প্রাণ থাকে না।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ফয়েজুল ইসলাম বলেন, গত কৃষি সভায় ইটভাটার লোকজনদের নিয়ে বিষয়টি আলোচনা করা হয়েছে। টপ সয়েল বিক্রির বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে কৃষকদের সচেতন করতে। সচেতনতার পরেও যদি কেউ অমান্য করে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।