গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বরমীর ভিটিপাড়া গ্রামে মিনারা খাতুনের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধারের রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। মায়ের সম্পত্তির মালিক হতে এ হত্যাকাণ্ড ঘটান একমাত্র মেয়ে সেফালী। তার সহযোগী ছিলেন সোহেল রানা নামের এক যুবক।
শুক্রবার (৪ মার্চ) দুপুরে গাজীপুর জেলা পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার আজমির হোসেন জাগো নিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, শেফালী ও সোহেল রানাকে গ্রেফতারের পর বৃহস্পতিবার (৩ মার্চ) গাজীপুর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শাকিল আহমেদের আদালতে নিলে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন তারা। পরে আদালত তাদের কারাগারে পাঠান।
পুলিশ জানায়, গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার কেওয়া পূর্বখণ্ড গ্রামের মিনারা খাতুনের (৬০) স্বামী আবু তাহের মারা যান বহুবছর আগে। এরপর এক মেয়ে শেফালীকে নিয়ে শুরু হয় তার জীবন সংগ্রাম। নিজের নামে থাকা সামান্য জমি লিখে দেন মেয়ের নামে। শর্ত ছিল তিনি মারা যাওয়ার পর জমির মালিক হবে মেয়ে শেফালী।
কিছুদিন আগে মিনারার এক ভাই একটি মামলায় ঢাকার জেলখানায় আটকা পড়েন। কিছু অর্থ সহায়তা চেয়েছিল তার ভাইয়ের পরিবার। এজন্য নিজেদের একটি গরু বিক্রি করতে চাচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু বিষয়টি ভালোভাবে নেননি মেয়ে শেফালী। উল্টো মায়ের জীবদ্দশায় জমিসহ সব কিছুর মালিক হতে চান মেয়ে সেফালী। এ নিয়ে দুজনের সম্পর্কের অবনতি হতে থাকে। মাকে বিভিন্নভাবে নির্যাতনও শুরু করেন সেফালী। একপর্যায়ে মাকে সরিয়ে দেওয়ারও পরিকল্পনা করেন তিনি।
শেফালী চাকরি করতেন স্থানীয় একটি পোশাক কারখানায়। সেখানে পরিচয় হয় সহকর্মী সোহেল রানার সঙ্গে। একদিন সোহেল রানার সঙ্গে মাকে মেরে ফেলার পরামর্শ করেন শেফালী। সোহেল রানা খুন করার জন্য প্রথমে ১ লাখ টাকা দাবি করেন। এরপর শেফালী ৪০ হাজার টাকায় রাজি হন। সর্বশেষ নগদ ১৫ হাজার টাকা সোহেলের হাতে তুলে দেন।
পরিকল্পনা মতো গত ১১ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ৬টার দিকে কেওয়া পূর্বখণ্ড এলাকা থেকে বরমী ওয়াজ মাহফিলে যাওয়ার কথা বলে মাকে ভালো জামাকাপড় ও বোরকা পরিয়ে রওনা হন বরমীর দিকে। এরপর কিছু দূর যাওয়ার পর সঙ্গী হন সোহেল রানা। ভিটিপাড়া এলাকায় যাওয়ার পর টয়লেটে যাওয়ার কথা বলে প্রথমে নামেন সোহেল এরপর মেয়ে শেফালী। পরবর্তীতে মিনারাকে জোর করে গভীর জঙ্গলে নিয়ে যায় তারা। প্রথমে মেয়ে রাহেলা ইট দিয়ে মাকে সজোরে মাথার পেছনের অংশে আঘাত করেন। এরপর মায়ের বুকে চেপে বসে শেফালী, সঙ্গে সঙ্গে গলায় ছুরি চালান সোহেল রানা। মৃত্যু নিশ্চিত করার পর শেফালী আর সোহেল পাশের পুকুরে হাত-পা ধুয়ে আবার অটোরিকশা যোগে বাসায় ফিরে আসেন।
গাজীপুর জেলা পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার আজমির হোসেন বলেন, ১১ ফেব্রুয়ারি ভিটিপাড়া গ্রামে গভীর জঙ্গল থেকে অজ্ঞাত নারীর গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এরপর জানা যায় তার নাম মিনারা খাতুন। এ ঘটনায় গত ২ মার্চ দুপুরে কেওয়া এলাকা থেকে তার মেয়ে শেফালীকে আটক করে পুলিশ। মাকে হত্যার বিষয়ে তার স্বীকারোক্তির পর একইদিন রাত সাড়ে ১০টার দিকে সোহেল রানাকেও গ্রেফতার করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্যমতে ঘটনাস্থলের পার্শ্ববর্তী একটি পুকুর থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরিও জব্দ করা হয়। গ্রেফতার দুজন বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।