রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০২:০২ পূর্বাহ্ন

মায়ের আকুতি শুনে জঙ্গিবাদ থেকে ফিরলো বন্দরের আবু বক্কর, সঙ্গে আরো ৩ তরুণ

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১০ আগস্ট, ২০২৩, ৪.১৪ এএম
  • ১২০ বার পড়া হয়েছে

নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার ডাকে উদ্বুদ্ধ হয়ে ঘর ছাড়েন চার তরুণ। কথিত হিজরতের নামে পাহাড়ে প্রশিক্ষণে গিয়ে বুঝতে পারেন, তারা ভুল পথে পা বাড়িয়েছেন।

 

একাধিকবার ট্রেনিং ক্যাম্প থেকে ফিরতে চাইলেও বাধা দেন বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সদস্য ও অন্য সঙ্গীরা।

 

পালাতে চাইলে তাদের জোরপূর্বক আটকে রেখে চালানো হয় নির্যাতন। অবশেষে ট্রেনিং ক্যাম্প থেকে পালাতে সক্ষম হলেও এই চারজন বিভিন্ন জায়গায় আত্মগোপনে থাকেন। পরিবারের আহ্বান আর আইনি সহায়তা পাওয়ার আশায় নিজেরাই ধরা দেন র‌্যাবের কাছে।

মঙ্গলবার রাতে র‌্যাব-১১ কার্যালয়ে এসে স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করেন ৪ তরুণ। তারা হলেন-নারায়ণগঞ্জ বন্দরের আবু বক্কর ওরফে রিয়াসাদ রাইয়ান (১৬), সিলেট ওসমানী নগরের মো. হাসান সাইদ (২৬), শেখ আহমেদ মামুন (২৩) এবং মাদারীপুরের মো. ইয়াছিন (২১)।

এরআগে গত নভেম্বরে সন্তানের উদ্দেশে বক্করের মা বলেন, ‘আব্বু, যদি তুমি আমার মেসেজ পেয়ে থাকো, বলতে চাই- তুমি চরম একটা ভুল পথে আছো। তুমি তোমার মাকে বিশ্বাস করতে পার। আমি অনুরোধ করছি, তুমি আত্মসমর্পণ করো। তোমাদের মতো অল্প বয়সিদের ব্রেইনওয়াশ করা হয়েছে।

তোমরা যদি আত্মসমর্পণ করো তাহলে তোমাদের ক্ষমা করে দেওয়া হবে। তোমাদের সুযোগ দেওয়া হবে।’

বুধবার কাওরান বাজারে মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গৃহশিক্ষকের মাধ্যমে আবু বক্কর ও তার মা কেবিন ক্রু এমিলি জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়েন।

 

বক্কর নারায়ণগঞ্জের একটি স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়াশোনা করতেন। মায়ের আত্মসমর্পণের পর প্রায় আট মাস পর এবার র‌্যাবের হাতে আত্মসমর্পণ করে আবু বক্কর। ঘরছাড়া ৫৫ তরুণের তালিকায় তারা রয়েছেন, যারা দীর্ঘদিন ধরে নিখোঁজ। এখনো ৭ জন নিখোঁজ রয়েছে।

 

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ২০২১ সালে ভুল একটা পথকে সঠিক মনে করে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন কেবিন ক্রু মা আম্বিয়া সুলতানা ওরফে এমিলি।

 

তিনি একমাত্র ছেলেকে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ করে প্রশিক্ষণের জন্য পাহাড়ে পাঠিয়েছিলেন। পরে তিনি র‌্যাবের ডি-র‌্যাডিকালাইজেশনের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেন।

পরে অনুতপ্ত হয়ে ছেলেকে ফিরে পেতে গত ৯ নভেম্বর র‌্যাবের সহায়তা কামনাসহ গণমাধ্যমের সামনে হাজির হয়ে সন্তান রাইয়ানসহ অন্য তরুণদের ফিরে আসার জন্য আকুতি জানান।

চার তরুণের জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হওয়া ও ফিরে আসা সম্পর্কে মঈন বলেন, তারা বিভিন্ন সময় বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়-স্বজন বা পরিচিতদের মাধ্যমে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়’তে যোগদান করে।

 

পরে সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের সদস্যরা তাদের ধর্মীয় অপব্যাখ্যার মাধ্যমে কথিত হিজরতের কথা বলে বা চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে পাহাড়ে যেতে আগ্রহী করে।

পার্বত্য অঞ্চলে যাওয়ার পর বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ‘কেএনএফ’ এর সহযোগিতায় সংগঠনটির সশস্ত্র প্রশিক্ষণসহ অন্য কার্যক্রম ও চিন্তাভাবনা দেখে তাদের ভুল ভাঙে। আরও বেশ কিছু সদস্যসহ এই চার তরুণ ফিরতে চাইলেও ফিরতে দেয়নি জামায়াতুল আনসারের সদস্যরা। বরং তাদের বন্দি রেখে নির্মম নির্যাতন করা হয়।

 

স্বেচ্ছায় হাজির হওয়া ৪ তরুনকে আইনানুগ প্রক্রিয়ায় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে উল্লেখ করে কমান্ডার মঈন বলেন, তারা স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করলেও তাদের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। তাদের ফিরে আসার বিষয়টি আদালত নিশ্চয় সুবিচার করবে। এক্ষেত্রে র‌্যাবের পক্ষ থেকে আইনী সহায়তা দেয়া হবে।

প্রসঙ্গত, সন্তানের শিক্ষক আল আমিনের মাধ্যমে ২০২১ সালের শুরুর দিকে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হন আম্বিয়া সুলতানা এমিলি। একমাত্র ছেলে আবু বক্করও উদ্বুদ্ধ হন জঙ্গিবাদে। মার্চে ওই শিক্ষকের নির্দেশনায় প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে তথাকথিত হিজরতের নামে বাড়ি থেকে বের হয় আবু বক্কর।

 

সে নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র সদস্য রনির (বর্তমানে গ্লোর) মাধ্যমে চলে যান বান্দরবান।

মা এমিলি ছেলের এসব বিষয় জানলেও পরিবারের সবার কাছে বিষয়টি গোপন রাখেন। পাহাড়ে প্রশিক্ষণে যাওয়ার পর ছেলের আর কোনো খোঁজ না পাওয়ায় অনুশোচনায় ভুগতে থাকেন মা। ছেলেকে ফিরে পেতে সংশ্লিষ্ট থানায় জিডিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে ছেলেকে ফিরে পেতে আকুতি জানান।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved © 2021 rudrabarta24.net
Theme Developed BY ThemesBazar.Com

sakarya bayan escort escort adapazarı Eskişehir escort