ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার বান্দুরা ইউনিয়নের মাঝিরকান্দা থেকে ধাপারী বাজার পর্যন্ত পাকা সড়কটির দৈর্ঘ্য মাত্র দুই কিলোমিটার। ছোট এই সড়কে চলাচলকারী জনগণের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে।
শুক্রবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সড়কটির বিভিন্ন স্থানে ভেঙে ডেবে গেছে, কোথাও কোথাও পানি জমে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্ত, নালা। টানা কয়েকদিনের বৃষ্টিতে সড়কের নালায় পানি জমেছে। কোথাও কোথাও হাঁটু পানি, কোথাও তার উপরে পানি জমেছে। পানি প্রবাহিত না হওয়ার কারণে রাস্তা ভেঙে গেছে। ফলে মানুষের চলাচলের অনুপযোগি হয়ে পড়েছে জনগুরুত্বপূর্ণ এই সড়ক। সড়ক দিয়ে প্রতিদিন স্কুল-কলেজ, ব্যাংক, বীমা, হাট-বাজারের হাজারো পথচারিরা চলাচল করেন। এ সড়ক দিয়ে চলাচলের সময় নানা দুর্ভোগে পড়েন স্থানীয়রা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘদিন যাবত রাস্তাটি ভেঙে বিভিন্ন স্থানে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সেখানে পানি জমে ডোবা-নালায় পরিণত হয়েছে। ফলে রাস্তার পাশ দিয়ে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী সহ পথচারিরা হেঁটে গেলে নালার জমে থাকা পচা পানি ছিটে শরীরে লেগে নতুন জামা কাপড় নষ্ট হয়ে যায়। এছাড়া রাস্তাটি খারাপ হওয়াতে ধাপারী বাজারের ব্যবসায়ীরা দিন দিন লোকসানের মুখে পড়ছেন বলে তারা অভিযোগ করেন।
ধাপারী বাজার বণিক সমিতির সভাপতি মুদি দোকানদার মুকুল বলেন, রাস্তাটি দীর্ঘদিন ধরে ভেঙে পড়ে আছে। টানা কয়েকদিনের বৃষ্টিতে রাস্তায় এখন পানি জমে চলাচলের একেবারে অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বিষয়টি চেয়ারম্যান-মেম্বারদের জানানোর পরেও কোনো কাজ হচ্ছে না। রাস্তাটি ভাঙার কারণে আমার দোকান সহ বাজারের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ডেলিভারি ম্যান গাড়ি নিয়ে এখন আর মালামাল (বিক্রির পণ্য) দিতে আসে না। আসলেও বিভিন্ন অযুহাত দেখায়। বাধ্য হয়ে আমি অন্য জায়গা থেকে বেশি খরচ দিয়ে মালামাল কিনে এনে বিক্রি করি। এতে আমি আর্থিকভাবে ক্ষতির মুখে পড়ছি। অন্যদিকে অটোগাড়ি, রিকশা, ভ্যান ও বিভিন্ন যানবাহন চলাচলে গাড়ির চালকরা অনীহা প্রকাশ করছেন। যদিও যাওয়া যায় সেক্ষেত্রে দুইগুন বা তিনগুন বেশি ভাড়া দিয়ে চলতে হয়। কেবল মাত্র রাস্তাটি খারাপ হওযার কারণে।
স্কুল শিক্ষার্থী টুম্পা আক্তার বলেন, সড়কটি দিয়ে চলাচল করতে আমাদের ভাড়া বেশি দিতে হয়। অন্যদিকে পচা নষ্ট পানি শরীরে লাগে। ফলে চলাচল করতে আমাদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।
গৃহবধূ রিফা বলেন, আমাদের বাড়ির সামনের রাস্তা ভেঙে গেছে। বৃষ্টির কারণে পানি জমে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। কিন্তু চেয়ারম্যান-মেম্বাররা এ বিষয়ে কোনো খোঁজ খবরই নেয় না। উল্টো আমরা তাদের জানালেও তারা কর্ণপাত করছেন না।
স্থানীয় অটোগাড়ি চালক শেখ লিটন বলেন, সড়কটি দিয়ে গাড়ি চালানো একেবারেই অসম্ভব হয়ে পড়েছে। কখন যে দুর্ঘটনা ঘটে বলা মুসকিল। পেটের দায়ে ঝুঁকি নিয়ে চালাই। তবে গাড়ির অনেক ক্ষতি হয় দুই দিন পর পরই আবার গাড়ি ঠিক করতে হয়। সেক্ষত্রে লোকসানের মুখে পড়তে হয়। রাস্তাটি ভেঙে যাওয়ার ফলে কয়েকদিন ধরে চরম বিপাকে পড়েছি।
স্কুল শিক্ষার্থী সিফাত মিয়া বলেন, আমাদের চলাচলের একমাত্র রাস্তাটি ভেঙে পড়ার ফলে আমাদের অনেক কষ্ট হচ্ছে। বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এখন স্কুলে যেতে হচ্ছে। বিষয়টি স্থানীয় চেয়ারম্যান ও কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি। যাতে খুব অল্প সময়ের মধ্যে আমাদের এই সড়কটি মেরামত করে দেন।
স্থানীয় ইউপি সদস্য দীপক মেম্বর বলেন, পাঁচবছর আগে সড়কটির কাজ করা হয়েছিলো আমাদের বান্দুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হুমায়ন কবিরকে বারবার সড়কটির কথা জানালেও কোনো কাজ হয়নি। আর এখন তো কোনো চেয়ারম্যানই নাই। একজন সাধারণ মেম্বার হয়ে কিছুই করতে পারবো না।
বান্দুরা ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান জন ডি রোজারিও বলেন, আমি কয়েকদিন হলো মাত্র বান্দুরা ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান হয়েছি। বিষয়টি দেখবো। তবে বৃষ্টির কারনে সড়কে অনেকটাই ক্ষতি হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। বিষয়টি নিয়ে এলজিইডির প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলবো।
স্থানীয় সরকার বিভাগ (এলজিইডি)’র নবাবগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী জুলফিকার হক চৌধুরী বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।