বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:২৮ অপরাহ্ন

ভারত প্রশ্নে জাতীয় ঐক্য

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৯.৩৩ এএম
  • ১০ বার পড়া হয়েছে

৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির পর থেকেই বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অন্তহীন অপতথ্যভিত্তিক প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে ভারতের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম। সম্প্রতি এই অপতথ্য ছড়ানোর মাত্রা যেন রেকর্ড ছাড়িয়েছে। ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা হত্যা মামলার আসামি হয়েও ভারতে বসে রাজনৈতিক ভাষ্য হাজির করছেন।

সবশেষ আগরতলায় বাংলাদেশের উপ-হাইকমিশনে নজিরবিহীন হামলা হয়েছে। ভারতের বাংলাদেশবিরোধী এসব অপতৎপরতা রুখতে শিগগির জাতীয় ঐক্য হচ্ছে বলে আভাস পাওয়া গেছে। দুই-চার দিনের মধ্যে এ-সংক্রান্ত ঘোষণা আসতে পারে। একই সঙ্গে আগ্রাসনবিরোধী জোট ও ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচি ঘোষণা হতে পারে।

জাতীয় ঐক্য গড়তে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বিএনপি-জামায়াতসহ বেশ কয়েকটি বড় রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা বৈঠকে অংশ নেন। বৈঠকে ছিলেন বিভিন্ন ইসলামি দল। রাজনৈতিক নেতারা ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে একই সুরে লড়াই করার অঙ্গীকার করেছেন। ভারতকে ঐক্যের বার্তা দিতে শিগগিরই জাতীয় ঐক্যের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসবে বলে আভাস দিয়েছেন তারাও।

বুধবার বিকালে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন সুগন্ধায় সার্ভিস একাডেমিতে এই সংলাপ হয়। সেখানে জোট ও দল থেকে একজন করে বক্তব্য দেন। সংলাপের সূচনা বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, যে নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলার চেষ্টা চলছে সেটি ধামাচাপা দিয়ে আরেক বাংলাদেশের কাহিনি রচনার অপচেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর মুক্ত স্বাধীন নতুন বাংলাদেশকে মুছে দিতে কল্পকাহিনি প্রচার করা হচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলোকে তা ঠেকাতে এক জোট হতে হবে। সংলাপের অংশ হিসেবে সোমবার ড. ইউনূস বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেওয়া ছাত্রনেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে জাতীয় স্বার্থে ঐকমত্য চেয়েছে বিএনপি। পাশাপাশি প্রয়োজনীয় সংস্কার দ্রুত শেষ করে নির্বাচনি রোডম্যাপ প্রকাশের পক্ষে মত দিয়েছে দলটি। নির্বাচনি রোডম্যাপ প্রকাশ হয়ে গেলে কেউ আর ষড়যন্ত্র করার সাহস পাবে না, বৈঠক শেষে এমন মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেছেন, জুলাই-আগস্টে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট সরকারকে বিদায় করা হয়েছে। তাদের ষড়যন্ত্রকেও এদেশের ছাত্র-জনতা সবাই মিলে আমরা মোকাবিলা করব। ষড়যন্ত্র করে দেশের জনগণের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির অপচেষ্টা হচ্ছে দাবি করে বিএনপির এই স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, আমরা সরকারের সঙ্গে ঐকমত্য পোষণ করেছি, ফ্যাসিস্ট সরকারকে যারা সহযোগিতা করছে তাদের ষড়যন্ত্রকে আমরা সবাই মিলে মোকাবিলা করব।

অপপ্রচার মোকাবিলায় সরকারের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামী কাজ করবে বলে জানিয়েছেন দলের আমির ডা. শফিকুর রহমান। সংলাপের বিষয়ে জামায়াতের আমির বলেন, অপপ্রচার মোকাবিলায় আমরা সরকারের সঙ্গে কাজ করব। আমরা কারও পাতা ফাঁদে পা দেব না। কারও কাছে মাথা নত করব না, আবার সীমা লঙ্ঘনও করব না। দুয়েক দিনের মধ্যে সুখবর পাবেন আশা করি। তিনি বলেন, বর্তমানে ভারতের ভূমিকা অসহিষ্ণু। চরমপন্থা যেদিক থেকেই আসুক আমরা ঘৃণা করি। আমরা ভালো থাকলে তারাও ভালো থাকবে। আমরা ভালো না থাকলে তারা কীভাবে ভালো থাকবে? শফিকুর রহমান বলেন, ভারতের অপপ্রচার বন্ধে অন্তর্বর্তী সরকারকে ভারতের সঙ্গে আলোচনা করে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দেওয়ারও দাবি জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামী।

১২ দলীয় জোটের নেতা ও জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সহ-সভাপতি রাশেদ প্রধান বলেছেন, আমাদের বক্তব্য ছিল ভারতের সঙ্গে শেখ হাসিনার সব গোপন চুক্তি প্রকাশ করতে হবে। দেশবিরোধী সব চুক্তি বাতিল করতে হবে। ভারত যাতে কখনো বাংলাদেশের নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করতে না পারে সে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তিনি বলেন, হয়তো প্রধান উপদেষ্টা ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে জাতীয় ঐক্যের ঘোষণা দেবেন। তিনি বলেছেন, আমরা একত্রিত হওয়া মানে ভীত নই, ঐক্যবদ্ধ আছি।

গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা সাইফুল হক বলেন, আমাদের মধ্যে মতের বিভিন্ন থাকতে পারে; কিন্তু জাতীয় স্বার্থে আমরা ঐক্যবদ্ধ। এই বার্তাটি দেওয়ার চেষ্টা করেছি। ভারতের আমাদের দেশের স্থিতিশীলতা নষ্ট করলে তারাও স্বস্তিতে থাকতে পারবে না। তাদেরকে সাম্প্রদায়িক কার্ড খেলতে দেওয়া হবে না। ভারতীয় অপপ্রচার রোধে দেশীয় মিডিয়াকে আরও শক্তিশালী করতে হবে।

লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, উপদেষ্টা পরিষদে ফ্যাসিবাদের দোসররা রয়েছে। তাদেরকে বাদ দেওয়ার কথা বলেছি। এ ছাড়া প্রশাসনসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক জায়গায় এখনও শেখ হাসিনার লোকজন বসে আছে। তাদেরকে বাদ না দিলে তারা শেখ হাসিনাকে দেশে আনার চেষ্টা চালাবে। বিদেশি ষড়যন্ত্রকে উসকে দেবে। ভারতের রক্তচক্ষুকে ভয় পেলে হবে না। তারাই শেখ হাসিনাকে এত বছর ক্ষমতায় রেখেছে। এবার জনগণ রুখে দাঁড়িয়েছে।
গণঅধিকার পরিষদের একাংশের সদস্য সচিব ফারুক হাসান বলেন, জাতীয় ঐক্য তৈরি করতে একটি ঘোষণাপত্র তৈরির কথা বলেছি। যা জাতীয় দলিল হিসেবে ইতিহাস হয়ে থাকবে। একদিন জাতীয় ঐক্য ও সংহতি দিবসের ডাক দিয়ে ঐক্যের জানান দেওয়া। সবাই যার যার জায়গা থেকে লাল-সবুজের জাতীয় পতাকা ও শান্তির সাদা পতাকা ওড়াবে।

আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) যুগ্ম সদস্যসচিব আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে সব রাজনৈতিক দল ঐকমত্যে পৌঁছেছে বলে প্রধান উপদেষ্টাকে আশ্বস্ত করেছেন বিভিন্ন দলের নেতারা। একই সঙ্গে প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ করে দ্রুত নির্বাচন দিতে প্রধান উপদেষ্টাকে তাগাদা দেন তারা। তিনি আরও বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দূতাবাসে রাষ্ট্রদূত হিসেবে কাজ করছেন, তারা পতিত (আওয়ামী লীগ) সরকারের নিয়োগপ্রাপ্ত, তাদের সরিয়ে বিপ্লবের পক্ষের শক্তিকে নিয়োগ দেওয়ার বিষয়ে প্রস্তাব এসেছে। সংখ্যালঘুদের বিষয়ে একটি জাতীয় কমিশন গঠনের প্রস্তাব এসেছে। প্রোপাগান্ডা প্রতিরোধে রাষ্ট্রীয়ভাবে পাবলিক রিলেশন সেল করার কথা এসেছে, যেখানে বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যমে তথ্য প্রকাশ করবে তারা।

এ ছাড়া নাগরিক ঐক্য, গণসংহতি আন্দোলন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (বাংলাদেশ জাসদ), ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি), বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট (এনডিএম), বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশ ও বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি), গণঅধিকার পরিষদ (জিওপি) নেতারাও সংলাপে যোগ দেন।

বৈঠকে অংশ নেওয়া একজন নেতা বলেন, সবার সঙ্গে আলোচনা করে প্রধান উপদেষ্টা ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক একটি ঘোষণা দেবেন শিগগিরই। ঐক্যবদ্ধ কিছু কর্মসূচি আসবে। আগ্রাসনবিরোধী জোটও গঠন হতে পারে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved © 2021 rudrabarta24.net
Theme Developed BY ThemesBazar.Com

sakarya bayan escort escort adapazarı Eskişehir escort