ব্যাটিংয়ে দুর্দান্ত শুরু, বলা যায় স্বপ্নের মতো। কিন্তু তারপরও প্রথম ইনিংস শেষে পিছিয়েই ছিল বাংলাদেশ। তাই এই ম্যাচে পয়েন্ট পেতে বাড়তি দায়িত্ব নিতে হতো বোলারদের। কিন্তু সেটা পারলেন না কেউই। উল্টো খাপছাড়া বোলিংয়ে রোহিত-কোহলিদের সামনে দাঁড়াতেই পারেননি তারা। রীতিমতো বল ফেলার জায়গা খুঁজে পাচ্ছিলেন না হাসান-শরিফুলরা। ৭ উইকেটের বড় হারে সেমির স্বপ্ন থেকে আরো দূরে সরে গেল বাংলাদেশ।
বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) পুনেতে টস জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ২৫৬ রান করেছিল বাংলাদেশ। হাফ সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন লিটন ও তামিম। জবাবে ৪২ ওভার ৩ বলে ৩ উইকেট হারিয়ে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় ভারত। দলের হয়ে সর্বোচ্চ অপরাজিত ১০৩ রান করেন বিরাট কোহলি।
পুনের উইকেটে কোনো মুভমেন্ট ছিল না। নতুন বলেও বাড়তি কোনো সুবিধা পাননি পেসাররা। এই উইকেটে ব্যাটারদের চেপে ধরতে হলে লাইন-লেন্থের দিকে মনযোগী হতে হতো বোলারদের। সেখানে ব্যর্থ ছিল বাংলাদেশ। ফলাফল উড়ন্ত শুরু পায় ভারত।
উইকেটের দেখা পেতে বাংলাদেশকে অপেক্ষা করতে হয়েছে ১৩তম ওভার পর্যন্ত। সেই ওভারের চতুর্থ বলটি খাটো লেন্থে করেছিলেন হাসান। সেখানে ঘুরে দাঁড়িয়ে পুল করেন রোহিত। তবে টাইমিং হয়নি। তাতে ডিপ স্কয়ার লেগে হৃদয়ের হাতে ধরা পড়েন তিনি। ৪৮ রান করা এই ওপেনারকে ফিরিয়ে ৮৮ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন হাসান।
রোহিত ২ রানের জন্য ফিফটি পাননি। খানিকটা আক্ষেপ করতেই পারেন। তবে আরেক ওপেনার শুবমান গিল ঠিকই ফিফটি তুলে নিয়েছেন। ডেঙ্গু থেকে ফিরে প্রথম ম্যাচে সুবিধা করতে পারেননি গিল। পাকিস্তানের বিপক্ষে থিতু হয়েও ইনিংস বড় করতে পারেননি। কিন্তু আজ বাংলাদেশের বিপক্ষে দারুণ খেলেছেন। তবে ফিফটির পর আর বেশি দূর এগোতে পারেননি। ২০তম ওভারে এই ওপেনারকে ফিরিয়েছেন মেহেদি হাসান মিরাজ। যেখানে বড় কৃতিত্ব আছে মাহমুদউল্লাহর। ডিপ মিড উইকেটে দুর্দান্ত ক্যাচ নিয়েছেন তিনি। সাজঘরে ফেরার আগে গিলের ব্যাট থেকে এসেছে ৫৫ বলে ৫৩ রান।
পুনের ব্যাটিং বান্ধব উইকেটে বোলারদের জন্য তেমন কিছু নেই-এটা সত্যি। তবে লাইন-লেন্থ ঠিক রেখে বোলিং করলে যে, এখানেও ভালো করা সম্ভব তারই প্রমাণ দিলেন মিরাজ। গিলের পর শ্রেয়াস আইয়ারকেও ফিরিয়েছেন তিনি। ৩০তম ওভারের প্রথম বলে মিরাজকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে লং অনে ধরা পড়েন আইয়ার। সাজঘরে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে এসেছে ২৫ বলে ১৯ রান।
আজ উইকেটে নেমেই বাংলাদেশি বোলারদের থেকে বেশ কিছু উপহার পেয়েছেন কোহলি! যা তাকে উড়ন্ত শুরু করতে সাহায্য করেছে। কোহলির বিপক্ষে ১৩তম ওভারে পরপর দুটি নো বল দিয়েছেন হাসান। প্রথম ফ্রি হিটে চার। পরেরটিতে ছক্কা। পরপর দুটি নো বলই কাজে লাগিয়েছেন কোহলি। এমন শুরুর পর ফিফটিতে পৌঁছাতে কোহলি খেলেছেন ৪৮ বল। আর তিন অঙ্ক ছুঁতে সবমিলিয়ে খরচ করেছেন ৯৭ বল। শেষ পর্যন্ত তার অপরাজিত সেঞ্চুরিতে ৫১ বল হাতে রেখেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় ভারত।
এর আগে টস জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন নাজমুল হোসেন শান্ত। পুনের ব্যাটিং স্বর্গে সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছিল বাংলাদেশ। সেই সিদ্ধান্তের মান দুই ওপেনার রাখলেও পরের ব্যাটসম্যানরা পারেননি। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পক্ষে ওপেনিংয়ে সর্বোচ্চ রানের জুটি (৯৩ রান) আসে লিটন ও তামিমের ব্যাট থেকে। দুজনের জুটি ভেঙে দেয় ৯৯ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে গড়া ৬৯ রানের জুটি। রানের সন্ধানে থাকা তানজিদ তামিম খেলেছেন দুর্দান্ত এক ইনিংস। মারকুটে ব্যাটিং উপহার দিয়ে তুলে নেন ফিফটি। ৫ চার আর ৩ ছয়ে ৪১ বলে আসে তার অর্ধশতক।
কিন্তু এরপরই বাংলাদেশ ইনিংসের লাগাম টেনে ধরেন কুলদীপ যাদব। তার বলে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়েন তানজিদ তামিম। এই এক উইকেটের পতনই যেন ম্যাচে ফিরিয়ে আনে ভারতকে।
এরপর অধিনায়ক শান্তকে বেশিক্ষণ দেখা যায়নি ক্রিজে। ৮ রানে রবীন্দ্র জাদেজার বলে আউট হয়ে ফিরে যান শান্ত। থিতু হতে পারেননি মিরাজও। ১৩ বলে ৩ রান করা মিরাজ আউট হয়েছেন নিতান্ত খামখেয়ালিতে। লেগ স্টাম্পের বাইরে দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় অযথা ব্যাট চালিয়ে উইকেটের পেছনে ধরা পড়েন মিরাজ।
তবে অপরপ্রান্তে টিকে ছিলেন লিটন দাস। সবরকমের বিতর্ক ছাপিয়ে তুলে নিয়েছেন ক্যারিয়ারের ১২তম ওয়ানডে ফিফটি। ফিফটির পর আগ্রাসী হবার আভাস দিয়েছিলেন লিটন। সেখানেই কাটা পড়েন তিনি। ৬৬ রানে জাদেজার বলে শুভমান গিলের হাতে ধরা পড়েন লিটন।
ক্রিজে এসে রীতিমতো সংগ্রাম করতে হচ্ছিল তাওহিদ হৃদয়কে। ৩৫ বল খেলেও কোনো বাউন্ডারির দেখা পাননি। শেষ পর্যন্ত তাকে ‘মুক্তি’ দেন শার্দুল ঠাকুর! এই পেসারের খাটো লেন্থের বলে উড়িয়ে মারতে গিয়ে মিড অনে শুবমান গিলের হাতে ধরা পড়েন হৃদয়। সাজঘরে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে এসেছে মাত্র ১৬ রান।
মুশফিক আভাস দিয়েছিলেন বড় ইনিংসের। ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে জাদেজার দুর্দান্ত ক্যাচের কারণে ফিরতে হয়েছে তাকে। ফেরার আগে করেছেন ৩৮ রান। মাঝে নাসুম চেষ্টা করেছিলেন বড় শট খেলতে। একটা চারও এসেছিল তার ব্যাট থেকে। অবশ্য সেটা আর হয়নি। ফিরেছেন উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে।
ভরসার প্রতীক আবারও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। অভিজ্ঞ এই ব্যাটারের ব্যাট থেকে এসেছে ৩ চার এবং ৩ ছয়। তার ৪৬ রানের ইনিংস বাংলাদেশকে টেনে নিয়ে গেছে আড়াইশ পর্যন্ত।