রুদ্রবার্তা২৪.নেট: জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক বীর মুক্তিযোদ্ধা খাজা মহিউদ্দিনকে রাষ্ট্রীয় সম্মান গার্ড অব অনার প্রদানে দেরি করেছেন সদর উপজেল নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফা জহুরা। এতে প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের লোকজন ও অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। ক্ষোভ জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিও।
মঙ্গলবার (১৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বাদ জোহর নগরীর ডিআইটিতে রেলওয়ে কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের সামনে খাজা মহিউদ্দিনের জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। জানাজার নামাজ শেষে তাকে রাষ্ট্রীয় সম্মান গার্ড অব অনার জানাতে গিয়ে ঘটে বিপত্তি। নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানা থেকে পুলিশ পৌঁছালেও সময়মত সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফা জহুরা তখনও পৌঁছাননি। এদিকে বৃষ্টির মধ্যেই বীর মুক্তিযোদ্ধার মরদেহ নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকেন স্বজনরা। এ সময় ইউএনও’র মুঠোফোনের নম্বরে বারবার যোগাযোগ করতে থাকেন স্বজনরা। জানাজা শেষ হওয়ার ঘন্টাখানেক পর উপস্থিত হন সদর ইউএনও। পরে বৃষ্টি মাথায় নিয়ে খাজা মহিউদ্দিনকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়।
ইউএনও’র দেরি করার বিষয়টি নিয়ে খাজা মহিউদ্দিনের স্বজনদের পাশাপাশি ক্ষোভ ঝেরেছেন জানাজায় উপস্থিত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও জনপ্রতিনিধিরা। জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার অ্যাড. নুরুল হুদা বলেন, জানাজা হওয়ার পরও গার্ড অব অনার দেয়ার জন্যে সরকারি প্রতিনিধি থাকার কথা থাকলেও তিনি সময় মতো আসেন নাই। বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা বৃষ্টির আগেই গার্ড অব অনার সম্পন্ন করতে পারতাম। তাহলে আর এই বিড়ম্বনা হতো না। খাজা মহিউদ্দিন একজন ভাষা সৈনিক এবং একজন মুক্তিযোদ্ধা। ওনার মত লোকের গার্ড অব অনার দেয়া নিয়ে এই গাফিলতি কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমরা এ ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
এমন ঘটনা দুঃখজনক ও লজ্জার বলে মন্তব্য করেছেন সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডের সাবেক কমান্ডার শাহজাহান ভূঁইয়া জুলহাস। তিনি বলেন, আমি বারবার ওনাকে ফোন করেছি। কিন্তু উনি সময় মতো আসেননি। ওনার আসার কথা ছিল দেড়টায়, উনি আসছেন আড়াইটায়। প্রশাসনের এই দায়িত্বহীনতা কোনোভাবেই মেনে নেয়ার মত না। কথায় কথায় তারা বলে মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। কিন্তু তাদের আজকের আচরণে আমরা খুবই হতাশ। আমি এ ঘটনায় ধিক্কার জানাচ্ছি।
জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কাদির বলেন, আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা হয়ে আজকের ঘটনা দেখে খুব মর্মাহত। কারণ মুক্তিযোদ্ধাদের যদি এভাবে অপমান করা হয় তাহলে রাষ্ট্রের সর্বস্তরের মানুষকে অপমান করা হয়। প্রশাসনের এই এহেন কর্মকান্ড আমি সহ্য করতে পারছি না। পুলিশ একটা থেকে উপস্থিত থাকতে পারলে উনি কেন পারলেন না?
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল করিম বাবু বলেন, খাজা মহিউদ্দিনদের কারণে আমরা আমাদের স্বাধীনতা পেয়েছি। উনি শুধু আমার ওয়ার্ডের মুরুব্বিই ছিলেন না, উনি নারায়ণগঞ্জের অনেক আন্দোলন সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এই বৃষ্টির ভেতর তার মরদেহ নিয়ে আমাদের ভিজতে হয়েছে। আমি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।
খাজা মহিউদ্দিনের বড় ছেলে তানভীর রহমান পরাগ বলেন, এটা খুব ন্যাক্কারজনক ঘটনা। আজকে একজন সরকারি কর্মকর্তার জন্যে এতগুলো মানুষ বৃষ্টির মধ্যে অপেক্ষা করতে হয়েছে তাও একজন মুক্তিযোদ্ধার লাশ নিয়ে। আসলে কি মুক্তিযোদ্ধাদের আমরা গার্ড অব অনার দিয়ে সম্মান জানাচ্ছি নাকি এর মাধ্যমে অসম্মান জানাচ্ছি। আজকে এই জন্যেই কি আমার বাবা ভাষা আন্দোলন করেছিলেন, দেশ স্বাধীনের জন্যে মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন? প্রশাসনের কাছে আমার আবেদন থাকবে যে, এরকম আর কোনো ঘটনা কোনো মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে যেন না হয়।
এদিকে জানতে চাইলে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফা জহুরা বলেন, সঠিক সময়েই বের হয়েছিলাম। কিন্তু সড়কে প্রচন্ড যানজট ছিল। তার উপর বৃষ্টিও পড়ছিল। যানজট ও বৃষ্টির কারণে দেরি হয়ে গিয়েছে। আমি নিজেও এর জন্য দুঃখিত। আমি নিজেও একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। এই ঘটনাটা পুরোটাই ছিল অনাকাঙ্খিত।
উল্লেখ্য, গত সোমবার (১৩ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে দশটায় ঢাকার বাড্ডায় প্রিমিয়ার প্লাজায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন খাজা মহিউদ্দিন। সংগঠক হিসেবে তিনি মুক্তিযুদ্ধে নারায়ণগঞ্জে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। কারাগারের রোজনামচা গ্রন্থে বঙ্গবন্ধু খাজা মহিউদ্দিনের কথা বেশ কয়েকবার উল্লেখ করেছেন।
এ প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ বলেন, বিষয়টি অনাকাঙ্খিত ছিল। ইউএনও নিজেও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, যানজট ও বৃষ্টির কারণে পৌঁছাতে দেরি হয়েছে। প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধার পরিবার ও অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধা যারা ক্ষুব্দ হয়েছেন তাদের কাছে তিনি ক্ষমা প্রার্থনাও করেছেন।