বিজয়ের ৫৪তম বার্ষিকীতে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের শ্রদ্ধা জানাতে পুরোপুরি প্রস্তুত সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ। এরইমধ্যে সৌধ মিনারসহ পুরো চত্বরের হাঁটার পথ, বেদি, স্থাপনা সেজেছে রঙ-তুলির আঁচড়ে। বাগানগুলোতে শোভা পাচ্ছে রং বে-রংয়ের বাহারি ফুল। প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাঁচ স্থরের নিরাপত্তাবল গড়ে তোলা হয়েছে।
গতকাল সোমবার ৫৪তম মহান স্বাধীনতা দিবসে জাতির বীর সন্তানদের শ্রদ্ধা নিবেদন করবে পুরো জাতি। দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের জন্য প্রস্তুতি শেষে হয়েছে তিন বাহিনীর সুসজ্জিত দলের মহড়া।
এক মাসেরও বেশি সময় ধরে সৌধ চত্বরে সৌন্দর্য্যবর্ধনের কাজ করেছে গণপূর্ত বিভাগ। ইটের পথ, শহীদ বেদি ও গণকবরে ধোঁয়ামোছার পর সাদা রঙের শুভ্র আভায় সাজিয়ে তোলা হয়েছে পুরো সৌধ এলাকা। বিভিন্ন স্থানে শোভা পাচ্ছে লাল, নীল, বেগুনি, হলুদ ও সাদাসহ বিভিন্ন বর্ণের ফুল গাছের চারা। ছেঁটে সৌন্দর্য্যমে-িত করে তোলা হয়েছে সৌধ এলাকার শোভাবর্ধনকারী গাছ।
ফুল গাছের পরিচর্যার কাজে ব্যস্থ আব্দুল মতিন বলেন, স্মৃতিসৌধের বিভিন্ন স্থানে শোভা বাড়ানোর জন্য ফুলের গাছসহ নানা প্রজাতির গাছ রোপণ করা হচ্ছে। তবে এখানে কাজ করতে তার ভালোই লাগে, বিজয় দিবসের দিনে লাখ লাখ মানুষ ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে আসবেন। আর সেখানেই তিনি কাজ করছেন। এতে অন্যরকম এক অনূভুতি অনুভব করেন তিনি।
পরিচ্ছন্নকর্মী আব্দুল জলিল বলেন, ১৬ বছর ধরে স্মৃতিসৌধে কাজ করছি। বছরে দুই বার সৌধের ভিতরে সিঁড়িসহ পায়ে হাটার পথ রং তুলি দিয়ে সাজিয়ে দেই। যেখানে লাখ লাখ মানুষ শ্রদ্ধা নিবেদন করে সেই জায়গা নিজের হাতে রং তুলি দিয়ে সাজাতে তার ভালই লাগে।
স্মৃতিসৌধের ভিতর ও বাইরের অংশের সীমানা প্রাচীর ও ফটকসহ বিভিন্ন স্থানে শোভা পাচ্ছে লাল, নীল, সবুজ বাতির বর্ণিল আলোকসজ্জার।
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য ইতোমধ্যে জাতীয় স্মৃতিসৌধে দর্শনার্থীদের প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত করা হয়। পাশাপাশি সৌধ এলাকার নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে দিবসের প্রথম প্রহরেই শ্রদ্ধা জানাবেন প্রেসিডেন্ট, প্রধান উপদেষ্টা ও উপদেষ্টাম-লী। এরপরই সৌধ বেদিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করবেন দেশি-বিদেশি কূটনীতিক, বীরশ্রেষ্ট পরিবার, তিনবাহিনীর প্রধানগণ ও রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীসহ লাখো জনতা।
আর এই বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে ঢাকা জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে পাঁচ স্তরের নিচ্ছিন্দ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
সাভার গণপূর্ত বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, সৌধ চত্বর এলাকা জুড়ে ধোঁয়ামোছা ও অন্যান্য সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ১৬ ডিসেম্বর প্রথম প্রহরে প্রেসিডেন্ট, প্রধান উপদেষ্টা, উপদেষ্টাম-লী ও দেশি-বিদেশি কূটনীতিকদের শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদনের পর তা সর্বসাধারনের জন্য উন্মুক্ত করা হবে।
তিনি বলেন, প্রায় ২০০ দিনমজুর পহেলা নভেম্বর থেকে ধোয়ামুছা ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ করেছে। ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ করানো হচ্ছে। আমরা শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য জাতীয় স্মৃতিসৌধ প্রস্তুত করতে সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ করায় ৮ ডিসেম্বর থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত জনসাধারণের প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত করা হয়েছে।
গত ১৫ দিন ধরে স্মৃতিসৌধর ভিতরে বালু সিমেন্ট দিয়ে মেরামতের কাজ করছেন মো. রাসেদ। তিনি বলেন, বাহিরে কাজ করলে বেশি টাকা হাজিরা পেতাম। যেখানে লাখ লাখ মানুষ শ্রদ্ধা জানাবে সেই জায়গা মেরামতের কাজ করছি খুব ভালোই লাগছে। তাই এখানে ৬০০ টাকা হাজিরা পেলেও কোনা কষ্ট নেই।
৫০০ টাকা দৈনিক হাজিরায় প্রায় ১৫ দিন ধরে কাজ করছেন রহিমা বেগম। যে স্মৃতিসৌধে লাখ লাখ মানুষ ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবে সেই জায়গা পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ করতে ভালই লাগছে তার।
শনিবার বিকালে ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি এ কে এম আওলাদ হোসেন বলেন, এবার মহান বিজয় দিবসকে ঘিরে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে। ইতোমধ্যে আমরা সর্বসাধারণের প্রবেশ বন্ধ রেখেছি। আমিনবাজার থেকে স্মৃতিসৌধ পর্যন্ত নিরাপত্তাবলয় গড়ে তোলা হয়েছে। সাদা পোশাকে পুলিস, এপিবিএনসহ পাঁচ স্থরের নিরাপত্তার চাদরে স্মৃতিসৌধের পুরো এলাকা ঢাকা থাকবে। এছাড়া সাদা পোশাকে পুলিশের নজরদারি বাড়নোসহ নিরাপত্তার স্বার্থে সৌধের আশপাশের চলাচলকারী সন্দেহভাজনদের তল্লাশী করা হবে।