রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৫০ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::

বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এলে দেশ ধ্বংস করে দেবে: প্রধানমন্ত্রী

  • আপডেট সময় বুধবার, ১১ অক্টোবর, ২০২৩, ৭.৫৫ এএম
  • ৬৪ বার পড়া হয়েছে

বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এলে দেশ ধ্বংস করে দেবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নৌকা মার্কা স্বাধীনতা দিয়েছে, নৌকায় মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয়। দেশ রক্ষায় নৌকায় ভোট দিয়ে সেবা করার সুযোগ দিতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের আয়োজনে ডা. কাজী আবু ইউসুফ স্টেডিয়ামে এক জনসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে এ কথা বলেন তিনি। পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা-ভাঙা রেল চলাচলের উদ্বোধন উপলক্ষে এই জনসভার আয়োজন করা হয়।

এর আগে, মাওয়া রেলওয়ে স্টেশনে এক সুধী সমাবেশে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে তিনি ঢাকা-ভাঙা টেন চলাচলের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী মাওয়া রেল স্টেশন থেকে ট্রেনে চড়ে পদ্মা সেতু হয়ে ভাঙায় আসেন।

নৌকায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে আবারও ক্ষমতায় আনার আহ্বান জানিয়ে ফরিদপুরবাসীকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, নৌকা স্বাধীনতা এনে দিয়েছে, নৌকা পদ্মা সেতু দিয়েছে; পদ্মা সেতুতে রেল দিয়েছে, রাস্তাঘাট-কলেজ-স্কুল-বিশ্ববিদ্যালয় দিচ্ছে।

‘নৌকায় এদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয়। তাই নৌকায় ভোট দিন, যাতে মানুষের সেবা করতে পারি, এই আবেদন থাকলো।’

বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এলে দেশ ধ্বংস করে দেবে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি এতিমের অর্থ আত্মসাৎ করেছে। দুর্নীতি করে সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি, মুচলেকা দিয়ে দেশ থেকে বেরিয়েছে, অস্ত্র চোরাকারবারি। আর জামায়াত হচ্ছে যুদ্ধাপরাধী। এরা ক্ষমতায় এলে দেশকে ধ্বংস করে দেবে। এদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে নৌকাই একমাত্র মার্কা।

এসময় ফরিদপুরবাসীকে নৌকায় ভোট দিয়ে আবারও তাদের সেবার করার সুযোগ চেয়ে তিনি বলেন, এখানকার রাস্তা-ঘাটের উন্নয়ন করেছি। ফরিদপুরে মেডিক্যাল কলেজ আছে। ফরিদপুরের সার্বিক উন্নয়ন আওয়ামী লীগ সরকার করেছে। আগে নদী-নালা, খাল-বিল পার হয়ে যেতে হতো। এখানের সব এলাকা আমি ঘুরেছি। দেখেছি কী অবস্থা। নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে দেশের মানুষ স্বাধীনতা পেয়েছে, তেমনি নৌকায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় এনেছে বলেই উন্নয়ন হয়েছে।

আবারও ক্ষমতায় এলে ফরিদপুরে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ফরিদপুরের আশা এখানে বিশ্ববিদ্যালয় করার। আবারও সরকারে আসতে পারলে ফরিদপুরে বিশ্ববিদ্যালয় করে দেব।

এসময় জোরালো করতালির মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানান ফরিদপুরবাসী।

এর আগে, সকাল থেকে ডা. কাজী আবু ইউসুফ স্টেডিয়ামে ফুরিদপুর, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জসহ আশপাশ জেলা থেকে লাখো জনতা যোগ দেয় জনসভায়। দুপুরে আগেই কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় স্টেডিয়ামের আশপাশ এলাকা। স্টেডিয়াম ছড়িয়ে আশপাশের এলাকাও বিস্তৃত হয় জনসভার আকার।

প্রধানমন্ত্রীর আগমনে ফরিদপুর জেলাসহ বিভিন্ন এলাকায়ও দেখা মিলেছে উৎসবের। এতে করে পুরো ভাঙ্গা অঞ্চলে প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে কেন্দ্র করে ছিলো উৎসবের আমেজ। সাজসজ্জার অংশ হিসেবে সড়কজুড়ে টাঙানো হচ্ছে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের চিত্র ব্যানার ও ফেস্টুন। পদ্মা সেতু উত্তর মুন্সিগঞ্জ থেকে জাজিরা পয়েন্ট, শিবচরের কুতুবপুর, পাচ্চরবাজার, সুর্যনগর, মালিগ্রাম, চান্ডা এলাকাসহ ভাঙ্গার প্রত্যেকটি মোড়ে তোরণ ফেস্টুন ও ব্যানারে বহু নেতার রঙিন পোস্টারে বর্ণিল হয়ে উঠেছে কমপক্ষে ৩০ কিলোমিটার এলাকা। রাস্তার দু’ধারে দাড়িয়ে প্রধানমন্ত্রীকে একনজর দেখতে ও তাকে স্বাগত জানাতে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষকে দেখা গেছে।

প্রধানমন্ত্রী পৌনে ৩টার দিকে জনসভাস্থলে আসেন। মঞ্চে উঠে তিনি উপস্থিত জনতার উদ্দেশে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান। উপস্থিত জনতাও তাকে দু’হাত তুলে অভিনন্দন জানান।

বাবা-মা হারিয়ে দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের প্রতিজ্ঞা নিয়ে দেশে আসার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা প্রত্যয় নিয়ে, প্রতিজ্ঞা নিয়ে এসেছিলাম। আমার বাবা এদেশ স্বাধীন করে দিয়েছেন। এদেশের ভাগ্য পরিবর্তন হবে। এদেশের মানুষ শিক্ষা পাবে, চিকিৎসা পাবে, উন্নত জীবন পাবে।

‘বোমা হামলা, গ্রেনেড- অনেক কিছুর মুখোমুখি হয়েছি। কিন্তু মানুষের জন্য কাজ করবো বলে এসেছিলাম। আমি বাবা-মা-ভাই-বোন হারিয়েছি। বাংলাদেশের মানুষ আমার পরিবার। তারা আমার সব, তাদের জন্যই কাজ করি’- বলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার পর খুনি জিয়াউর রহমান ইনডেমনিটি দিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পথ রুদ্ধ করে দিয়েছিলো। জাতির পিতা যাদের বিচার শুরু করেছিল, জিয়া তাদের বিচার বন্ধ করে দিয়েছে। তাদের পুরস্কৃত করেছে। খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে হত্যা, খুন খারাবি, গুম-লুটপাট, দুর্নীতি করেছে। জনগণের ভোটের অধিকার ছিল না। তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিয়েছিল। মানুষ ভোট দিতে পারেনি। আমার ভোট আমি দেব যাকে খুশি তাকে দেব- এই স্লোগান নিয়ে আমরা ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছি।

আওয়ামী লীগ সবসময় তার নির্বাচনী ওয়াদা পূরণ করে জানিয়ে দলের সভাপতি বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের ওয়াদা দিয়েছিলাম। সেটি করেছি। এখন সবার হাতে মোবাইল ফোন। সবাই অনলাইনে থাকে। এই মোবাইল ফোন কে দিয়েছে? আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর দিয়েছে। মোবাইলে আগে অনেক খরচ হতো। আওয়ামী লগ আসার পর এটাকে সর্বজনীন করেছে। খরচ কমিয়েছে, তার ওপর ভর্তুকি দিচ্ছি।

সরকার কৃষি উৎপাদন বাড়াতে কৃষককে বিনা জামানতে লোন, সারে ব্যাপক ভর্তুকি, উন্নতমানের বীজ সরবরাহ, বিদ্যুতে কৃষকের জন্য ভর্তুকি দিচ্ছে বলেও উল্লেখ করে শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, কৃষিকে যান্ত্রিকীকরণ, এটা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল। আমরা কৃষি যান্ত্রিকীকরণের জন্য কৃষিতে যে যন্ত্রপাতি ব্যবহৃত হয়, তাতে ৫০ থেকে ৭০ ভাগ ভর্তুকি দিয়ে আমরা সেটা করে দিচ্ছি। এখন আমাদের যে খাদ্য মজুত আছে, ১৭ থেকে ১৮ লাখ মেট্রিক টন চাল মজুত আছে।

তিনি বলেন, ১০ গুণ্ডা, ২০ হুণ্ডা নির্বাচন ঠাণ্ডা। সেই অবস্থা আর নেই। দেশে এখন গণতন্ত্র আছে, স্থিতিশীলতা আছে। এজন্য ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দিতে পেরেছি। আমাদের লক্ষ্য মানুষের কল্যাণ করা। সেই লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। অনেক ধনী দেশ করোনার সময়ে বিনা টাকায় টিকা দেয়নি। আমি শুধু দেশের মানুষের দিকে তাকিয়ে বিনা টাকায় টিকা দিয়েছি। এজন্য আমরা করোনা নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি। আমি টাকা-পয়সার দিকে তাকাইনি। আওয়ামী লীগ মানুষের জন্য, দেশের কল্যাণে কাজ করে।

দেশকে আমরা আরও উন্নত করতে চাই জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রূপ বদলের সনদ-২০২১ সালের ইশতেহার দিয়েছিলাম। এখন বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। পদ্মা সেতু আমি ’৯৬-তে উদ্যোগ নিই। বিএনপি তা বন্ধ করে দেয়। আবার ক্ষমতায় এসে পদ্মা সেতু করার উদ্যোগ নিই। আমাদের দেশের একজন এমডি বয়সের কারণে থাকতে না পারায় হিলারিকে (হিলারি ক্লিনটন) দিয়ে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধ করে দিয়েছিল। আমি চ্যালেঞ্জ করে বলেছিলাম দুর্নীতি হয়নি। শেখ মুজিবের মেয়ে দুর্নীতি করে না। আমি নিজস্ব অর্থায়নে চ্যালেঞ্জ নিই। অনেকে বলেছিল, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু সম্ভব না। বাংলাদেশের মানুষ পাশে থাকলে অসাধ্য সাধন করা যায়, পদ্মা সেতু নির্মাণ করে সেটি প্রমাণ করেছি। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না।’ কেউ দাবায়ে রাখতে পারেনি। অনেক বিদেশি সাংবাদিক বঙ্গবন্ধুকে জিজ্ঞেস করেছিলো, দেশে তো কিছু নেই, সব ধ্বংসপ্রাপ্ত। আপনি কীভাবে দেশ গড়ে তুলবেন? তিনি বলেছিলেন, ‘আমার মাটি আছে, মানুষ আছে; তা দিয়েই আমি দেশ গড়বো।’ আমি সেটি মনে রেখেছিলাম।

বিএনপি এলে সব ধর্মের মানুষের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সময়ে সব ধর্মের মানুষ সমান সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে, ভালো থাকে।

এসময় কোভিড পরবর্তী ও যুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার বিষয়টি তুলে ধরে নিজেদের জমি অনাবাদী না রেখে কিছু না কিছু উৎপাদন করার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বিদ্যুৎ-পানি ব্যবহারে সবাইকে সাশ্রয়ী হওয়ারও আহ্বান জানান।

বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে শিক্ষার্থীদের দক্ষ জনবল গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের ছেলে-মেয়েরা বিনা পয়সায় বই, বৃত্তি দিই। শিক্ষা, দীক্ষায় এবং জ্ঞানে-বিজ্ঞানে আমাদের দেশের ছেলে-মেয়েরা বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে যাতে চলতে পারে, সেই লক্ষ্যে গড়ে তুলছি।

এসময় প্রতিটি উপজেলায় কারিগরি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার কথা জানিয়ে তিনি বলে, মেয়েদের শিক্ষা আমরা অবৈতনিক করে দিয়েছি। প্রাইমারি শিক্ষা মেয়েরা ৬০ ভাগ পাবে, সেভাবে করে দিয়েছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে বয়স্কভাতা, স্বামী পরিত্যক্তা ভাতা, দুস্থ মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা, বিনা পয়সায় বাড়ি করে দিচ্ছে। জাতির পিতার বাংলাদেশে একটি মানুষও গৃহহীন ভূমিহীন থাকবে না।

এসময় নদী ভাঙন দেশের জন্য একটি সমস্যা উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ফরিদপুর, শরীয়তপুর এলাকাকে রক্ষা করার জন্য এখানকার নদী ভাঙন রোধ করার জন্য প্রকল্প গ্রহণ করেছি এবং তা বাস্তবায়ন শুরু করেছি।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved © 2021 rudrabarta24.net
Theme Developed BY ThemesBazar.Com

sakarya bayan escort escort adapazarı Eskişehir escort