নরসিংদীর শিবপুরে বাড়িতে ঢুকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ খানকে গুলি করার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ৬ জনকে আটক করেছে পুলিশ। শিবপুর থানা পুলিশ, গোয়েন্দা পুলিশ ও ঢাকা মহানগর পুলিশ রোববার দিবাগত রাতে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে এই ৬ জনকে আটক করে।
আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শিবপুর থানার ওসি ফিরোজ তালুকদার।
শনিবার ভোর সোয়া ৬টার দিকে শিবপুর থানাসংলগ্ন নিজ বাসার ড্রইং রুমে ঢুকে শিবপুর উপজেলা চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ খানকে গুলি করে সন্ত্রাসীরা। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে প্রবীণ এই রাজনিতিকের ওপর সন্ত্রাসী হামলায় পর থেকে পুরো উপজেলায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। আওয়ামী লীগ নেতাসহ সুশীল সমাজের লোকজন চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছেন।
পুলিশের দাবি, ঘটনার নেপথ্যে তিন কোটি টাকার হাট ইজারা নিয়ে বিরোধের জেরে এ ঘটনা ঘটতে পারে। তবে স্বজনদের দাবি, চেয়ারম্যানকে গুলির নেপথ্যে এমপি ও তার লোকজনের সাথে স্থানীয় রাজনীতির বিরোধ। তবে দ্রুত রহস্য উদঘাটন করে অপরাধীদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছে সর্বস্তরের মানুষ। এ ঘটনায় এখনো থানায় মামলা দায়ের করা হয়নি।
এ ঘটনার আটককৃতরা হলেন- উপজেলার পুটিয়া কামারগাঁও গ্রামের মৃত হাফিজ উদ্দিনের ছেলে আরিফ সরকার ও মহসিন, আরিফ সরকারের বড় ভাই ফরিদ সরকার (৬৩) একই উপজেলার সৈয়দনগর গ্রামের রোকন উদ্দিনের ছেলে সাব্বির (৩২), একই গ্রামের আয়েছ আলীর ছেলে মনসুর আহমেদ রানা (৪৩)ও কামারগাঁয়ের সিরাজ মোল্লার ছেলে মোমেন মোল্লা (৫৫)।
উপজেলা চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদের ভাতিজা রাব্বি খান জানান, তিনি এখন শঙ্কামুক্ত হলেও আর আগের মতো হাঁটতে পারবেন না। চিকিৎসকরা তাদের জানিয়েছেন- সন্ত্রাসীদের ছোড়া দুটি গুলির মধ্যে একটি তার মেরুদণ্ডে বিঁধে হাড় ছিঁড়ে গেছে। এই বয়সে এটি আর জোড়া লাগা সম্ভব নয়। যতদিন বেঁচে থাকবেন তিনি ততদিন তাকে হুইল চেয়ারে করে চলাফেরা করতে হবে।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক খায়রুল কবীর খোকন বলেন, খবর পেয়েই ছুটে যাই ঢামেকে। আওয়ামী লীগের নিবেদিতপ্রাণ সদা হাস্যোজ্জ্বল বর্ষীয়ান রজনীতিক হারুনুর রশিদ খানকে দেখে খুব কষ্ট লেগেছ। এ ঘটনার দ্রুত বিচার হওয়া দরকার। নইলে নরসিংদীতে মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নেই।
তিনি আরও বলেন, চলতি মাসে রায়পুরা থেকে আসার পথে দিনদুপুরে তিনিও প্রকাশ্যে শিবপুরের ইটাখোলায় সন্ত্রাসী হামলার শিকার হন। অথচ এ ঘটনায় পুলিশ তার লিখিত অভিযোগ আমলে নেয়নি। কাউকে গ্রেফতারও করেনি।
জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সাবেক এমপি সিরাজুল ইসলাম দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, দল ক্ষমতায় অথচ আমরা গুলিবিদ্ধ হই।
শিবপুর থেকে চিরতরে এই অপরাজনীতি দূর করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহবান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, এ ঘটনা যারা ঘটিয়েছে তা চাঁদের আলোর মতো পরিষ্কার। আমরা চাই পুলিশ তাদের আটক করে আইনের আওতায় আনুক।
এদিকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ খানকে ও সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড সংসদ। রোববার সকালে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের সামনে এ বিক্ষোভ সমাবেশ করা হয়। এ সময় অতি দ্রুত সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনাসহ এরূপ হামলার তীব্র নিন্দা জানান বক্তারা।
এ সময় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) মহসিন নাজিরের সভাপতিত্বে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সামসুল আলম রাখিল, সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বুলু মাস্টার, ডেপুটি কমান্ডার মোতালিব খান, স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারাসহ মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা উপস্থিত ছিলেন।
শিবপুর থানার ওসি ফিরোজ তালুকদার বলেন, ঘটনার পর থেকেই শিবপুর থানা পুলিশ, গোয়েন্দা পুলিশ ও ঢাকা মহানগর পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের যৌথ প্রচেষ্টায় বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে ৬ জনকে আটক করা হয়।