বন্দরের লাঙ্গলবন্দ চিড়ইপাড়া এলাকায় এক ধর্ষণের অভিযোগে রকি(২১) নামে এক বাস চালককে পিটিয়ে হত্যা মামলায় সফুরউদ্দিন মেম্বারকে বাদ দিয়ে পুলিশের চার্জশিট দাখিল।
পুলিশের চার্জশিটের বিরোদ্ধে বাদী আদালতে আপত্তি জানালে আদালত পুন তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) নারায়ণগঞ্জকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ হত্যাকান্ডের ঘটনাটি ঘটেছিল গত ২০২২ সালের ২২ মার্চ বিকালে সিদ্ধিরগঞ্জের সাজেদা হাসপাতালের সামনে ।
এ হত্যাকান্ডের ঘটনায় বন্দরের ধামগড় ইউপির ৪ নং ওয়ার্ড সদস্য সফুরউদ্দিন মেম্বারসহ ৬ জনকে আসামী করে নিহত রকি’র মা আছমা বেগম বাদী হয়ে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
নিহত রকি চিড়ইপাড়া কলোনী এলাকার মৃত শাহাজউদ্দিনের ছেলে। মামলা পুনতদন্তে গত শুক্রবার সকালে পিবিআই অফিসে স্বাক্ষী প্রদান করেছেন বলে জানিয়েছেন নিহত রকি’র পরিবার।
নিহত রকি’র মা আছমা বেগম বলেন, স্বামী ক্যান্সারে মারা যাওয়ার পর পাশ্ববর্তী কামতাল এলাকায় অবস্থিত টোটাল ফ্যাশন গামেন্টের সুইং শাখায় হেলপার হিসাবে চাকরি করতাম। সফুরউদ্দিন মেম্বার ওই গার্মেন্টে ঝুট নামায়। সফুরউদ্দিন মেম্বার একই এলাকার হওয়ায় পূর্ব পরিচিত।
এ সুবাধে সফুরউদ্দিন মেম্বার আমাকে বিভিন্ন সময়ে তার কথাবার্তায় উত্যক্ত করতো। এ বিষয়ে স্থানীয় গন্যমান্য কয়েকজনকে জানালে ঘটনাটি আমার ছেলে রকি লোক মারফত জেনে ফেলে সফুরউদ্দিন মেম্বারকে গালিগালাজ করে।
তার পর থেকে ক্ষিপ্ত হয় সফুরউদ্দিন মেম্বার। কয়েকদিন পরে প্রতিবেশী মাদক ব্যবসায়ী পরিবার শাহিদার স্বামী পরিত্যক্তা মেয়েকে রকি’র পেছনে লেগে দিয়ে কৌশলে ধর্ষণের মামলায় আসামি করে হত্যার পরিকল্পনা করে সফুরউদ্দিন মেম্বার।
পরিকল্পনা মোতাবেক আমার ছেলেকে গোপনে খোঁজা খোঁজি শুরু করে শাহিদার মাদক ব্যবসায়ী তিন ছেলে লাদেন, সাইফুল ও শহিদুল। মামলা গোপন রাখায় রকি ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের মোগরাপাড়া চৌরাস্তা চিটাংরোডে নাফ পরিবহন বাসের চালক।
এ রোডে বাস চালানোর খবর পেয়ে পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে গত ২০২৩ সালের ২২ মার্চ বিকালে কাঁচপুর ব্রিজের পশ্চিম ঢালে বাসের চালকের আসন থেকে তুলে নিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে রাস্তা ফেলে রেখে পালিয়ে যায় । পরে স্থানীয় ও পথচারীরা রকিকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। পরদিন ভোরে চিকিৎসাধিন অবস্থায় রকি মারা যায়।
এ ঘটনায় সফুরউদ্দিন মেম্বার ও তার বাহিনীর লাদেন, শহিদুল, সাইফুল সহ ৬ জনকে আসামি করে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছি। মামলায় সফুরউদ্দিন মেম্বারকে আসামি করায় মামলা তুলে নিতে নানা হুমকিদমকি প্রদান করে এবং টোটাল ফ্যাশন গার্মেন্ট থেকে চাকরিচ্যুত করে উল্টো দুইটি মিথ্যা মামলা দিয়ে পুরো পরিবারকে পুলিশি হয়রানী করছে।
পুলিশ সফুরউদ্দিন মেম্বারকে মামলা থেকে বাদ দেওয়ায় আদালতে আপত্তি জানালে আদালত পুনতদন্তের জন্য পিবিআইকে দায়িত্ব দিয়েছে। গত শুক্রবার সকালে পিবিআই অফিসে ডেকে নিয়ে ছিলেন স্বাক্ষীর জন্য। আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই।
স্থানীয়রা জানান, নিহত রকি’র তিন ভাইয়ের মধ্যে দুই ভাই পাগল। পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ছিলো রকি। রকি নিহত হওয়ার পর তার মা আছমা বেগম পাশের এক ফ্যাক্টরীতে ঝাড়ুদারের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেছেন। সফুরউদ্দিন মেম্বারের দেওয়া মিথ্যা দুই মামলার হাজিরা দিতে দিশেহারা নিহত রকি’র মা আছমা বেগম।
মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবি আলী আজগর বলেন,মূল ঘটনা বন্দরের হলেও পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে হত্যাকান্ডের ঘটনাটি ঘটিয়েছে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা এলাকায়। এ ঘটনার হত্যা মামলা দায়ের করলেও মূল পরিল্পনাকারি সফুরউদ্দিন মেম্বারসহ তিনজনকে মামলা থেকে বাদ দিয়ে ৩০৪ (ক) ধারায় আদালতে চার্জশিট দাখিল করে পুলিশ।
পুলিশের একতরফা চার্জশিটের বিরুদ্ধে আপত্তি জানিয়ে বাদী প্রথমে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একাধিকবার শুনানি হয়। অবশেষ নারায়ণগঞ্জ দায়েরা জজ আদালত বিষয়টি আমলে নিয়ে মামলাটি পুন তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) নারায়ণগঞ্জকে দায়িত্ব দিয়েছেন।
মামলা তদন্তকারি পিবিআই সাব ইন্সপেক্টর সাইতুল ইসলাম বলেন, রকি হত্যা মামলার তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছি। তদন্তের প্রাথমিক ধাপ। নিবিড় তদন্তের পর আদালতে চুরান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।