বন্দরে পূর্ব শুত্রুতার জের ধরে ইটালি প্রবাসী আক্তারুজ্জামান জনি ও তার পরিবারের উপর হামলা চালিয়েছে একই এলাকার গিয়াসউদ্দিন গোপাল ও তার বাহিনী। শনিবার বন্দর থানার তিনগাও এলাকায় প্রবাসীর নিজ বাড়িতে এই হামলার ঘটনা ঘটে। ৯৯৯ নাম্বারের কল করলে বন্দর থানার পুলিশ এসে ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করেন।
এ ঘটনায় স্থানীয় জনতার সহযোগিতায় নজরুল ইসলাম নয়ন (২৮) নামের একজনকে আটক করে পুলিশ। এ সময় প্রবাসী দুই ভাই জনি (ইটালী প্রবাসী) ও রনি (সৌদি প্রবাসী)সহ তাদের পিতা (এক পা-হীন) হাজী মো. লোকমান হোসেন, মাতা ওম্মেহানি বেগম ও বোন লাকির উপর দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা।
এ ঘটনায় প্রবাসীদের পিতা হাজী লোকমান হোসেন বাদী হয়ে ৭জনকে নামীয় আসামী ও অজ্ঞাত আরও ২৫/৩০জনকে আসামী করে বন্দর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন (মামলা নং- ২০ তারিখ ১২ ফেব্রুয়ারি)। গ্রেফতারকৃত নয়নকে আগামীকাল আদালতে তোলা হবে বলে জানা গেছে।
আসামীরা হলো কুশিয়ারার শাহাবুদ্দিন সরদারের ছেলে শাহ আলম (৪০), তিনগাও এলাকার মৃত মোহন মিয়ার ছেলে গিয়াসউদ্দিন গোপাল (৫০), তার ছেলে মো. রমজান আলী (৩৩), মৃত নুরুদ্দিন মিয়ার ছেলে খোকন মিয়া (৩৬), মৃত চাঁন মিয়ার দুই ছেলে মজিবুর রহমান (৫০) ও আব্দুর রশিদ (৪০), এবং নাসিক ২৪ নং ওয়ার্ডের বক্তারকান্দী এলাকার ইউনুছ আলীর ছেলে নজরুল ইসলাম নয়ন (আটক করা হয়েছে)।
এ বিষয়ে আহত ইটালি প্রবাসী আক্তারুজ্জামান জনি গণমাধ্যমকে বলেন, আমি প্রায় ১৯ বছর যাবত প্রবাসী জীবন যাপন করছি। আমার ছোট ভাই সৌদি প্রবাসী রনি প্রায় ১২ বছর যাবত দেশের বাহিরে অবস্থান করছে। আমরা দুই ভাই দেশে আসার পর বাড়ির বাউন্ডারির দেওয়ার জন্য কাজ ধরি। এ সময় আমাদের প্রতিবেশি গিয়াসউদ্দিন গোপাল এসে আমাদের কাজ করতে বাধা প্রদান করে।
কারণ জানতে চাইলে সে এখানে জায়গা পাবে বলে দাবি করে। অথচ তার বাড়ি এবং আমাদের আলাদা মৌজায় এবং দুই বাড়ির মাঝখান দিয়ে পাকা রাস্তা। তারপরও সে এখানে এসে জায়গার অংশীদার দাবি করে। এ বিষয়ে তাদের কোন কাগজপত্র থাকলে তা দেখাতে বললে তারা তা না দেখিয়ে হাতাহাতি শুরু করে দেয়।
তারা আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন এর ২৪ ও ২৫নং ওয়ার্ডসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে ভাড়াটিয়া বাহিনী এনে জমা করে রাখে। তারা আমাদের বাউন্ডারি দেয়াল ভেঙ্গে ফেলে এবং আমার পঙ্গু বাবাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়। এ সময় তারা আমার মা ও বড় বোনকে মারধর করে।
এ বিষয়ে জনির পঙ্গু বাবা লোকমান হোসেন জানান, আমি ক্রেচে ভর করে দাঁড়িয়ে ছিলাম। আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। আমার স্ত্রী ও বড় মেয়ের জামা কাপড় টেনে ছিঁড়ে ফেলে। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে বড় ছেলে জনির হাত কেটে রক্ত বেরুতে থাকলে আমি আমার স্ত্রীকে (জনির মা) সাথে করে নবীগঞ্জ হাসপাতালে পাঠাই।
সেখানে যাওয়ার সময় নবীগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে পৌছলে তারা পাঁচটি বাইক ও দুইটি অটো ইজি বাইকে করে প্রায় ১৫জন পথ রোধ করে তাদের রিকশা থেকে টেনে নামিয়ে রাস্তায় ফেলে এলোপাথারি কিল ঘুষি মারতে থাকে। এ সময় স্থানীয়রা (রাস্তার আশে পাশের দোকানদার ও পথচারীরা) তাদের বাঁচাতে চেষ্টা করে।
আগে থেকে আমার ছোট ছেলে রনি ৯৯৯ এ ফোন করলে সেখান থেকে পুলিশ আমাদের খোঁজ খবর নিতে থাকে। তাই সেখানে হামলা চালানোর সময় বন্দর থানার পুলিশ এসে হাজির হয় এবং সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয় জনতা একজনকে বাইকসহ আটকিয়ে ফেলে এবং পুলিশের হাতে তুলে দেয়।
তিনি জানান, আমার দুই ছেলে দীর্ঘদিন যাবত প্রবাসে থাকায় আমি ও আমার অসুস্থ স্ত্রী বাড়িতে থাকায় এর আগেও আমাকে অপহরণসহ একাধিক হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে। এসব বিষয়ে বিভিন্ন মামলা এখনও চলমান আছে।
এসময় তিনি নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছেন উল্লেখ করে বলেন, তাদের বিভিন্ন এলাকায় সিন্ডিকেট আছে, বিশাল বাহিনী আছে। যেকোন সময় তারা আমাদের বড় ধরণের ক্ষতি ফেলতে পারে। তাই তিনি প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেন।
এ বিষয়ে বন্দর থানার অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) দীপক চন্দ্র সাহা জানান, খবর পেয়ে আমরা ঘটনা স্থলে যাই সেখানে স্থানীয় জনতা একজনকে আটক করে আমাদের হাতে তুলে দিয়েছে আমরা তাকে আদালতে প্রেরণ করেছি। এ ঘটনায় আহতদের পক্ষ হতে মামলা দায়ের করা হয়েছে। আমরা বিষয়টি তদন্ত করতেছি।