৫ই জানুয়ারি নির্বাচন করার পরবর্তী ৩ দফা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার বাংলাদেশের ক্ষমতায়। লম্বা সময় টিকে থেকে আজ আওয়ামী লীগ একটা শক্ত অবস্থানে দাঁড়িয়েছে। সারাদেশের মতো নারায়ণগঞ্জের পাড়া মহল্লায়ও গড়ে উঠেছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীর একাধিক বলয় ও কার্যালয়। কিন্তু এর আগে আওয়ামী লীগের অবস্থা কিন্তু এমন ছিল না?
তখন আওয়ামী লীগ করে প্রকাশ্যে বলতে পারেনি, সেই সময় যারা দলকে শক্ত হাতে আগলে রেখেছেন, বহু নির্যাতণের শিকার হয়েছেন। আওয়ামী লীগের ৭৩ বছর উপলক্ষে তাদের মুখ থেকে শুনবো দলের দুর্দিনের সময়ের কথা, বর্তমান পরিস্থিতি ও আগামীর আওয়ামী লীগ।
নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মিজানুর রহমান বাচ্চু বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর পুরো দলটি নেতৃত্বহীন হয়ে পড়ে ছিল। ১৯৮১ সালের ১৭ই মে প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরে আসার পর তিনি নেতৃত্ব গুছিয়ে আনেন। এর আগে ৬টি বছর জেল থেকে বেড়িয়ে নারায়ণগঞ্জে সামসুজ্জোহা সাহেব, আলী আহম্মদ চুনকা সাহেব নেতৃত্বে আনসার আলী, মফিজ সাহেব, বজলুর রহমানরা আওয়ামী লীগকে ধরে রাখতে কার্যক্রম চালিয়ে যায়। এরপরেও নানা আন্দোলন সংগ্রাম হয়েছে, আজকে আন্দোলনের মধ্যদিয়েই দল এই অবস্থাতে এসেছে। তবে আমরা যখন বিরোধী দলে ছিলাম, তখন একতাবদ্ধ ছিলাম, এখন অনেক নেতা কর্মী হয়েছে ঠিকই, কিন্তু ঐক্যটা নেই। আমি মনে করি, অযৌগ্যরা ক্ষমতার পিছনে পিছনে ঘুরে আর কিছু নেতা মনে করে, আমি এমপি, আমি বিরাট নেতা। আমি ডাক দিলেই বুঝি সবাই আসবে। আর সেটার জন্যই ত্যাগীরা পিছিয়ে আছে। দল যদি এখন ঠিক করতে হয়, তাহলে সেই ত্যাগীদের খুঁজে বের করতে হবে। কিন্তু অনেকে স্বার্থের জন্য সেই ত্যাগীদের বের করবে না। আর বের করলেই ত্যাগীরা তাদের অনেক জনবিরোধী সিদ্ধান্তে বাঁধা দিবে। তখন ভালো লাগবে না।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মিজানুর রহমান বাচ্চু আরও বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জে রাজনীতি করতেন গোলাম মোরশেদ ফারুকি, তিনি মতলবে ২ বারের এমপি ছিলো। আজকে তাঁর ছেলে এখন কোর্টে পিয়নের চাকুরী করে। অথচ, সামসুজ্জোহা সাহেব শেষ জীবনে অর্থনৈতিক কষ্টে ছিলেন কিন্তু তাঁর ছেলেরা এখন অনেক টাকার মালিক। আজকে এমপি দুরের কথা, একটি ইউনিয়ন কাউন্সিলে চেয়ারম্যান হয়েই কোটি কোটি টাকার মালিক হয়ে যায়। আর একবার এমপি হলেতো শত কোটি টাকার মালিক হয়ে যায়। এই চরিত্র আমি, তুমি পরিবর্তন করতে পারবো না। এখন সকল কথা বললে শুধু মানুষের গালি শুনবো। অনেকে বলতো, আঘাট ঘাট হবে, সেটাই হয়েছে। আজকে যারা ক্ষমতা দেখায়, তারা কি ছিল এক সময়?’ ।
নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হাই বলের, ‘বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর আওয়ামী লীগের জন্য খুবই খারাপ সময় ছিল। তখন আমি আমির হোসেন আমু ভাইদের সাথে যুবলীগ করি। ১৯৮১ সালের ১৭ই মে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফিরেন। সে সময় বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্ব না মেনে মহিউদ্দিন আহমেদ ও আব্দুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে গঠিত বাকশালে চলে যান নারায়ণগঞ্জের প্রবীন আওয়ামী লীগ নেতা গোপীনাথ সাহা, বর্তমান মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহা, এড. আনিছুর রহমান দিপু, শাহবুদ্দিনরা । আব্দুর রাজ্জাক ভাই যখন ফিরে আসছে, তখন তারাও আবার ফিরে এসেছে। তখন বঙ্গবন্ধু কন্যা আব্দুর রাজ্জাক সাহেবকে গ্রহণ করে বলেছিলো, ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে এসেছে।’
আবদুল হাই আরও বলের, ‘তারপরেও অনেক খারাপ সময় গিয়েছে, অনেক হামলা-মামলা হয়েছে। ১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর অনেক নির্যাতিত হয়েছি। ১৯৯৬ সালের পর কিছুদিন ভালো কাটলেও ২০০১ সালের পর আবারও বিএনপি ক্ষমতায় এসে বহু হামলা-মামলা করেছে। তখন যারা ত্যাগ শিকার করেছে, এখন তাদের অনেকেই বেঁচে নেই। অনেকে দল ছেড়ে চলে গেছেন। যেমন খাজা ভাই, গোলাম মোরশেদ ফারুকি, কবির ভাই, সাত্তার সাহেব। তারপরেও তাদের অবদান অস্বীকার করা যাবে না। আর ২১‘শে আগষ্ট আমাদের নেত্রীকে টার্গেট করে ভয়ঙ্কর বোমা হামলা করেছে। তার চার পাশের অনেকেই মারা গেছে। এখন আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন ক্ষমতায় রয়েছে, কিন্তু আগের জায়গায় নাই।’