নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লায় একটি ভবনের ফ্ল্যাটে জমে থাকা গ্যাসের ভয়াবহ বিস্ফোরণে দুই নারী নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন কমপক্ষে আরও ১৫ জন। নিহতরা হলেন, মায়া রানী (৪০) ও মঙ্গলী রানী (৩৫)। নিহতরা কেউ দুর্ঘটনাকবলীত বাড়ির নয়। এদের মধ্যে মায়া রানী পাশের সুমির বাড়ির ভাড়াটিয়া আর মঙ্গলী রানী পথচারী। বিস্ফোরণে ওই ফ্ল্যাটের ৫টি কক্ষসহ পাশের আরও দুটি বাড়ির দেয়াল চূর্ণবিচুর্ণ হয়ে গেছে। আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসন থেকে ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী ১৫ কার্য দিবসের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার (১২ নভেম্বর) ভোরে ফতুল্লার লালখাঁর মোড়ে মোক্তার মিয়ার পাঁচতলা ভবনের নিচতলায়। বিস্ফোরণে ভবনের বেশ কয়েকটি পিলার খসে পড়েছে। ফলে ঝূঁকিপূর্ণ ভবন থেকে অভিবাসীদের নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হয়। এবং ভবনের পাশ দিয়ে সাধারণের চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ভোর ৬টার সময় বিকট শব্দে ফ্ল্যাটটিতে বিস্ফোরণ ঘটে। এতে পাশের আরও তিনটি বাড়ির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। বিস্ফোরণে ফ্ল্যাটের ৫টি কক্ষ ও পাশের বাসার তিনটি বাড়ির তিনটি কক্ষের দেয়াল উড়ে গেছে। এ ঘটনায় ঘুমন্ত অবস্থায় মায়া রানী ঘটনাস্থলেই দেয়ালের নিচে চাপা পড়ে মারা যান। এসময় মায়া রানীর দুই মেয়ে বৃস্টি (১৪), সৃস্টি (১০) ও এক ছেলে নির্জয় (৩) আহত হয়। এছাড়া একই পরিবারের আরও ৬জন দগ্ধ হয়। তারা হলো তুলসী রানী (৫৫), তার মেয়ে ঝুমা রানী (১৯), মনি রানী (২০), সুধন (৩৪), সোহেল (১৪), ও সৌরভ (২২)। তাদের প্রত্যেককে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইউনিটে পাঠানো হয়।
শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন এস এম আইউব হোসেন জানিয়েছেন, ফতুল্লা থেকে গ্যাস বিস্ফোরণে আহত ৬ জন বার্নে এসেছে। তাদের মধ্যে চার জনকে চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে ও দুইজনকে ভর্তি দেওয়া হয়েছে। ভর্তি দুজন হলেন, তুলসী রানী (৫৫) তার শরীরে ২০ শতাংশ পুড়ে গেছে ও ঝুমা রানী (১৯) তার শরীরে ৫০ শতাংশ পুড়ে গেছে।
এদিকে বিস্ফোরণের সময় নিহত মঙ্গলী রানী তার মেয়ে পূর্নিমাকে নিয়ে হেটে যাচ্ছিলেন। তখন বিস্ফোরণের দেয়ালের ইট বালু উড়ে এসে উপরে পড়ে গুরুতর আহত হয় মঙ্গলী এবং মাথায় ও পায়ে আঘাত পায় তার মেয়ে পূর্নিমা। তাদের দুজনকে শহরের ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলী রানী মারা যান এবং পূর্ণিমাকে চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। ওই সময় পাশের সুমির বাড়ির ভাড়াটিয়া বিনয় তার স্ত্রী নিপা ও তাদের দুই শিশু সন্তান ঘুমন্ত অবস্থায় দেয়াল চাপা পড়েন। এতে বিনয় ও তার শিশু কন্যার মাথায় আঘাত লেগে কেটে যায়। স্ত্রী ও আরেক শিশু পুত্র সামান্য আহত হয়।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. বাচ্চু মিয়া বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, ফতুল্লা লালখার মোড় এলাকা থেকে একই পরিবারের ৬ জন শেখ হাসিনা জাতীয় বাহারানে দগ্ধ অবস্থায় এসেছে। তাদের মধ্যে চারজনকে চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে ও দু’জনকে ভর্তি দেওয়া হয়েছে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের সহকারী উপ-পরিচালক আব্দুল্লাহ আল আরেফিন বলেন, কোনো রুমে গ্যাস জমে ছিলো। তা থেকে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। ওই বাড়ির পাঁচটি রুমের দেওয়াল চুর্ণ হয়ে আগুন ধরে গেছে। ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণ করেছে।
ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রকিবুজ্জামান বলেন, গ্যাস বিস্ফোরণের ঘটনায় দুইজন নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। তাদের বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ জানান, বিস্ফোরণের ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোসাম্মৎ রহিমা আক্তারকে প্রধান করে সাত সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী ১৫ কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। কমিটির তদন্তের পর দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, নিহতের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি আরও দুই দগ্ধ ব্যক্তিকে ১০ হাজার করে টাকা চিকিৎসার জন্য দেওয়া হয়েছে।