সোনিয়া দেওয়ান প্রীতি : নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানার উত্তর নরসিংপুর এলাকায় বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানের ক্রয়কৃত বাড়ি রেজিস্ট্রি করে দেয়ার পরেও তা পূণরায় দখল করে উল্টো স্ত্রী সন্তান সহ তাকে রাতের আঁধারে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে রাবেয়া নামে এক নারী। ব্যাংক ঋণ সহ বিভিন্নজনের কাছ থেকে ধার দেনা করে এবং নিজের জমানো কষ্টার্জিত টাকায় কেনা বাড়িতে ঠাঁই না পেয়ে ২ শিশু সন্তান ও গর্ভবতী স্ত্রীকে নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম গাজী আলতাব হোসেনের ছেলে আরিফ। রাবেয়া ও তার ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের হুমকি ধামকিতে পরিবার ও নিজের জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে থানায় অভিযোগও করেছেন তিনি।
অভিযোগে জানা গেছে, বিদ্যুৎ লাইন সহ ৫ শতাংশ জমিতে নির্মিত বাড়িটি মোট ২২ লাখ টাকায় ক্রয় করেন আরিফ। যা গত ২০২৩ সালের ১৮ জুন ফতুল্লা সাব রেজিস্ট্রি অফিসের মাধ্যমে রেজিস্ট্রি করে দেন বাড়ির সাবেক মালিক রাবেয়া। যেখানে স্পষ্টাক্ষরে লেখা রয়েছে- তাদের মধ্যে আর কোনো লেনদেন বাকি নেই। এরপর পরিবার নিয়ে সেই বাড়িতে উঠেন আরিফ। এরমধ্যে রাবেয়া নিজের পরিবার নিয়ে বিক্রি করা বাড়িটি ছেড়ে অন্যত্র যাবার জন্য ২ মাস সময় চান। যা মানবিক কারণে আরিফ ও তার পরিবার মেনে নিয়ে তাদেরকে বাড়ির এক পাশে থাকার অনুমতি দেন।
তবে আরিফের স্ত্রী সনিয়া আক্তারের ভাষ্যমতে- সমস্যার সূত্রপাত হয় যখন রাবেয়া এলাকার এক যুবককে ধর্ষণ মামলায় ফাঁসাতে তাকে কুপ্রস্তাব দেন এবং সে তা প্রত্যাখ্যান করেন। শুধু তাই নয়, সহজ সরল আরিফকে হত্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে রাবেয়া হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেন লাখ টাকা।
আরিফ জানান, সব ধরনের ষড়যন্ত্র করে সফল না হলে বাড়ি বিক্রির সূত্র ধরে তার কাছে অনৈতিকভাবে নগদ আরও কয়েক লাখ টাকা দাবি করেন রাবেয়া। এরই এক পর্যায়ে রাতের আধাঁরে ২ শিশু সন্তান ও স্ত্রী সহ আরিফকে এক কাপরে বাড়ি থেকে বের করে দেন রাবেয়া ও গণি নামে তার ভাড়াটে ভয়ঙ্কর এক সন্ত্রাসী।
এদিকে সরেজমিনে গিয়ে বাড়িতে অভিযুক্ত রাবেয়াকে না পেলেও কুয়েত প্রবাসী জুলহাস নামে এক ব্যক্তিকে দেখা গেছে পরিবার নিয়ে বাড়িটি দখল করে রাখতে। তার দাবি- তিনি আরও আড়াই বছর আগে বাড়িটি রাবেয়ার কাছ থেকে ১৯ লাখ টাকায় কিনে নিয়েছেন। তবে এ সম্পর্কিত কোনো দলিল তিনি দেখাতে পারেন নি।
অভিযোগের সত্যতা জানতে যোগাযোগ করা হলে নিজের সম্পর্কে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন রাবেয়া। তিনি একবার বলেন- আরিফের কাছ থেকে তিনি আরও ৭ লাখ টাকা পাবেন, যা না পেলে বাড়ি বুঝিয়ে দিবেন না। আবার বলেন- বাড়িতে অবস্থান করা কুয়েত প্রবাসী জুলহাসই বাড়ির আসল দাবিদার। এছাড়া তিনি বিষয়টি থানায় বসে মীমাংসা হবে বলে একজন পুলিশ কর্মকর্তার নাম উল্লেখ করে হুমকি দিয়ে কথা বলেন।
অপরদিকে এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে অভিযুক্ত রাবেয়ার দ্বারা প্রতারিত হওয়ার আরও একাধিক ঘটনার তথ্য সাংবাদিকদের সামনে এসেছে। পাশাপাশি অভিযুক্ত রাবেয়া বিভিন্ন সময় থানা পুলিশের যোগসাজশে ভূয়া মামলা দিয়ে লোকজনকে ফাসিয়ে টাকা আদায় করার বিষয়টিও উঠে আসে।
এদিকে,থানায় অভিযোগের পর কয়েক মাস কেটে গেলেও কষ্টের টাকায় কেনা বাড়িতে এখনও ঠাঁই মেলেনি এই অসহায় দম্পতির।
এ বিষয়ে ফতুল্লা থানার এসআই হারেস শিকদারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন- বাদি ও বিবাদিকে নিয়ে বিষয়টি থানায় বসে সমাধানের কথা রয়েছে।