বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, মাফিয়া সরকারের সুবিধাভোগীদের রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় রেখে অন্তবর্তীকালীন সরকারের লক্ষ্য পৌছানো সহজ নয়। বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকারকে ব্যর্থ করে দিতে প্রশাসনে থাকা তাদের দোসররা নানা কৌশলে ষড়যন্ত্র করছে।
মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) রাজধানী ইস্কাটন লেডিস ক্লাবের এ শুভেচ্ছা মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন তিনি। হিন্দু সম্প্রদায়ের সাথে শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে শুভেচ্ছা বিনিময়ের আয়োজন করে হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ। এ অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তারেক রহমান বলেন, নিজেদের চরিতার্থ স্বার্থ হাসিল করতে পতিত পরাজিত শক্তি দেশে সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতো। সারাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতনের কোন একটি ঘটনার বিচার করেনি তারা। গত ১৫ বছরে তাবেদার সরকারের সময় আমরা দেখেছি সন্ত্রাসী দিয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, যারা অপকর্মের সাথে জড়িত তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। ধর্মের ধর্মপ্রাণ মানুষদের রাখা হয়েছিল উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায় ।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ৫ ই আগস্ট ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানের পর স্বৈরশাসক পালানোর পর দেশের মুসলমান , হিন্দুসহ সকল ধর্মের মানুষ এখন আয়না ঘরের ভীতিমুক্ত। আজ আমরা স্বাধীনভাবে এখানে একত্রিত হতে পেরেছি। তবে বিভিন্ন ধর্ম গোষ্ঠীর স্বার্থকে পুঁজি করে বা তাদেরকে ব্যবহার করে বা কোন ধর্মকে ব্যবহার করে পলাতক স্বৈরাচারের রেখে যাওয়া দোসররা যাতে কোন ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করতে না পারে, সে ব্যাপারে আপনাদেরকে ও আমাদেরকে সকলকে সর্তক থাকতে হবে।
ভবিষ্যতে সকল ধর্মের মানুষ তার ধর্ম নিশ্চিন্তে উদযাপন করতে পারে তেমন একটি দেশ ও সমাজ বিনির্মাণে বাংলাদেশের পক্ষের শক্তি আজ ঐক্যবদ্ধ বলে জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, ধর্ম যার যার, কিন্তু নিরাপত্তা পাওয়ায় অধিকার সবার।
তারেক রহমান বলেন, মাফিয়া সরকারের রেখে যাওয়া ভঙ্গুর রাষ্ট্রকে মেরামত করার জন্য অন্তবর্তীকালানীন সরকার ইতিমধ্য বিভিন্ন সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। ১৫ বছরের জঞ্জাল শেষ করে চলমান সংস্কার কার্যক্রম শেষ করা বিশাল কর্মজজ্ঞ। তবে একটি বিষয় খেয়াল রাখা জরুরি এই বিশাল কর্মজজ্ঞ সম্পাদন করতে গিয়ে জনগণের প্রতিদিনের দুঃখ দুর্দশা লাঘব করা না গেলে জনগণের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতার নিশ্চিত করার বিষয়টি উপেক্ষিত থাকলে অন্তবর্তীকালীন সরকারের সংস্কার কার্যক্রম প্রশ্নের মুখে পড়বে। ফলে এই সরকারের কার্যক্রম অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এজেন্ডাভিত্তিক করা অত্যন্ত জরুরি।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে পর একটা যে নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল, কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক সেই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারি নাই। এবার ৫ আগষ্টের পর আবার একটা নতুন সম্ভাবনা এসেছে, আসুন আমরা সবাই মিলে একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তুলি। আসুন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান স্বপ্ন বাস্তবায়ন করি। পতিত শক্তি নানা ধরনের উস্কানি দিয়ে যাচ্ছে, কোনভাবে এই উস্কানির ফাঁদে পা দেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আসুন নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে কাজ করি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আমরা জাতীয়তাবাদীতে বিশ্বাসী, সকলে মিলে শান্তিতে বসবাস করতে চাই। ধর্ম যার যার দেশটা আমাদের সকলের। ৫ আগস্টে ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর একটা প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে, আসুন আমরা সবাই মিলে একটি ঐক্যবদ্ধ ও কল্যাণকর রাষ্ট্র গঠন করি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির মির্জা আব্বাস বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা সেই হিন্দুদের রক্ষার বহমান প্রক্রিয়া এখনো চলছে। আগে হিন্দুদের পূজার সময় কোন মন্দির পাহারা দিতে হতো না, এখন দেখি এসব! কেন? কোন মুসলমান হিন্দুদের মন্দির ভাঙতে পারে না, কোন ধর্মের এমন নেই। এটি কে করছে? যত ধরা পড়ছে সব আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ আর যুবলীগ। আমার এলাকায় যত হিন্দুদের জমি দখল করেছে সব আওয়ামী লীগের নেতা।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড মঈন খান বলেন, মা আসেন প্রতি বছর ন্যায় ও সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য। ৫ আগষ্ট এদেশ থেকে অসুর পালিয়ে গেছে। সত্যের জয় হয়েছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আমরা একটি রেইনবো জাতি গঠন করতে চাই, এটি বিএনপির দর্শন, চিন্তা থেকে এর প্রতিফলন। এটি নিয়ে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান চিন্তা প্রতিফলনে কোন সন্দেহ নেই। ধর্মকে মূলধন করে অনেকে নেতা হয়ে যান, তারা নিজেরা লাভবান হচ্ছেন, এমনকি যাদেরকে নিয়ে লাভবান হচ্ছেন তাদের নিয়ে কোন ভাবনা নেই এই ধর্ম ব্যবসায়ীদের মধ্যে।
বিএনপি সহ ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক অমলেন্দু অপু সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডাক্তার এজেডএম জাহিদ হোসেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন উপদেষ্টা কাউন্সিল সদস্য অধ্যাপক ড সুব্রত বুড়ুয়া, বিজন কান্তি সরকার, আফরোজা খানম রিতা, বিএনপি ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জামাল, বিএনপি সহ সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুন্ড, বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটি সদস্য সুশীল বড়ুয়া, হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টান কল্যাণ ফ্রন্ট উপদেষ্টা তপন দে, মহাসচিব তরুণ দে, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মিল্টন বৈদ্য গণফোরাম সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, বাংলাদেশ পূজাঁ উৎযাপন পরিষদ সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ শর্মা, ঢাকা মহানগর সার্বজনীন পূজা সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেবসহ বিভিন্ন জেলা প্রতিনিধি।