আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন বিরোধী দলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ।
মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) দুপুর পৌনে ১টার দিকে তিনি গণভবনে যান। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন ছেলে রাহগির আল মাহি সাদ এরশাদ, পুত্রবধূ মাহিমা সাদ, রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসীহ ও জাপার সাবেক মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা।
ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ সংসদ নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করেন। এ সময় তিনি কেন নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন, তার যৌক্তিকতা তুলে ধরেন। জাপার চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের বিরুদ্ধে ছেলে সাদসহ দলের পরীক্ষিত সিনিয়র নেতাদের নির্বাচন থেকে সরিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্রের বিষয়টিও অবহিত করেন তিনি। নির্বাচনকে আরও অংশগ্রহণমূলক করতে জাতীয় পার্টির সঙ্গে যেন কোনো প্রকার জোট করা না হয়, এমন অনুরোধও করেছেন বিরোধী দলীয় নেতা।
তিনি বলেছেন, জিএম কাদের সব সময় সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলেছেন। এতদিন বড় বড় কথা বলেছেন, জোট ছাড়া একক প্রার্থী হিসেবে তিনি ও তার অনুসারী নেতারা জিতে আসবেন বলে দাবি করেছেন। তাহলে, এখন কেন আওয়ামী লীগের সাথে জোট করতে চান? কেন অবাধে জিততে আসন সমন্বয় চান? জিএম কাদেরের নেতৃত্বে একলা নির্বাচন করে জাতীয় পার্টি কয়টা আসন পায়, সেটা দেখতে চাই।
রওশন এরশাদের অনুসারীদের মধ্যে যারা স্বতন্ত্র নির্বাচন করছেন, সেসব আসনসহ সারা দেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের সব ব্যবস্থা যেন করা হয়, সেজন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিরোধী দলীয় নেতার বৈঠকে নির্বাচন নিয়ে জিএম কাদেরের দ্বিমুখী ভূমিকা নিয়েও কথা ওঠে। আসন সমন্বয় না হলে তারা নির্বাচন বয়কট করতে পারেন, এমন ইঙ্গিতও দেওয়া হয়। বিরোধী দলীয় নেতা সম্ভব হলে তফসিল পেছানোর অনুরোধ জানান প্রধানমন্ত্রীকে।
বৈঠক থেকে বেরিয়ে রওশন এরশাদ সাংবাদিকদের বলেন, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান আমাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করেননি। আমার ছেলের জায়গায় উনি ইলেকশন করছেন। ওর কথা তার মনে নেই।
জাতীয় পার্টির নেতাদের প্রতি সমর্থন আছে কি না, জানতে চাইলে রওশন এরশাদ বলেন, আমাদের ইচ্ছা করে বাদ দিয়েছে। কেন সমর্থন থাকবে?
জাতীয় পার্টির সাবেক মহাসচিব মো. মসিউর রহমান রাঙ্গা সাংবাদিকদের বলেছেন, নির্বাচন নিয়ে জিএম কাদেরের কর্মকাণ্ডে আমাদের সমর্থন নেই। তিনি জোর করে জাতীয় পার্টি দখল করেছেন। তাই, জাতীয় পার্টির সঙ্গে যেন কোনো জোট না হয়, সেজন্য প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছেন রওশন এরশাদ।
মশিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, জাপার ২৫০-৩০০ নেতাকর্মীকে অন্যায়ভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। যোগ্য প্রার্থীদের মনোনয়ন না দিয়ে অপমান করা হয়েছে। জাতীয় পার্টির সঙ্গে যেন জোট না হয়, সে অনুরোধ জানিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, উনি দলীয় পরিষদে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন।
প্রসঙ্গত, দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন রওশন এরশাদ ও তার অনুসারী নেতারা। জিএম কাদেরের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টির বড় অংশ নির্বাচনে গেলেও তাদের পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারছেন না প্রধানমন্ত্রী। আসন সমন্বয় করা না হলে নির্বাচন বর্জন করতে পারেন জিএম কাদেরসহ শীর্ষ নেতারা। এমন পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিরোধী দলীয় নেতার এ বৈঠক হয়।