গত কয়েক দিনের টানা দাবদাহে অতিষ্ঠ নারায়ণগঞ্জ নগরবাসী। প্রচন্ড রৌদ আর ভ্যাপসা গরমে হাঁসফাঁস জনজীবনে। বিশেষ করে গরম ও তীব্র তাপদাহে দিনমুজুর, অফিসগামী মানুষ, স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীসহ অল্প বয়সের শিশুদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে।
অনলাইনে আবহাওয়া বার্তা সূত্রে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ শহরে গত ১৫ মে তাপমাত্রা ছিল ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ১৬ মে এ তাপমাত্রা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। ১৭ মে তাপমাত্রা ছিলো ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ১৮ মে তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ১৯ মে এই তাপমাত্রা দাড়িয়েছে ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
একটানা বাড়তি তাপপ্রবাহে অসহনীয় হয়ে পড়েছে মানুষের জীবনযাপন। তবে সর্বাধিক ভোগান্তিতে রয়েছেন নি¤œ আয়ের মানুষেরা।
শহর ও শহরতলী ঘুরে দেখা যায়, তীব্র তাপদাহে খেটে খাওয়া মানুষের ভোগান্তির হার কয়েকগুণে বাড়িয়ে তুলেছে। অতিরিক্ত গরমের কারণে রিকশাচালকরা রিকশা চালানো বাদ দিয়ে রাস্তার পাশে ছায়ায় কিংবা নিজের রিকশায় বসে বিশ্রাম নিচ্ছে। যাত্রী পেলেই পেটের টানে বিশ্রাম ছেড়ে আবার তাকে নিয়ে ছুটে চলছে।
এরূপই একজন রিকশা চালক আজগর আলী তার রিকশায় বসে বিশ্রাম করছেন। যাত্রী এসে শহরের থানাপুকুরপাড় যাবে কিনা জিজ্ঞেস করলে, তিনি প্রথমে রাজি হলেও পরে যেতে অসম্মতি জানান। তার সাথে কথা হলে তিনি প্রতিবেদককে বলেন, এতো গরম , আর চালাইতে পারতেছি না। এল্লিগা বসি রইছিলাম। যাত্রী পাইয়াও না করে দিলাম। শরীরে জোর পাইনা।
তার পাশেই ষাটোর্ধ্ব রিকশা চালক রহমত মিয়া বলেন, এক টিপ দিয়া আরেক টিপ দিতে পারি না। গলা বুক শুকায় আহে, কইলজা ফাইটা যায়। আগে যে সময়ে তিনশ ভাড়া মারা যেত এখন সেই সময়ে একশ টাকা কামানো কঠিন হইয়া গেছে।
এসময় পাশের লেবুর শরবত বিক্রেতাকে কাছে এক গøাস শরবত দিতে বলেন। শরবতের দাম ১০ টাকা শুনে রেগে উঠে বিক্রেতাকে বলেন, একটু লেবু আর পানি ১০ টাকা কেমনে রে? ডাহাতি শুরু করছস নাকি!
শুধু তারাই নয় শহর ঘুরে দেখা গেছে, গনপরিবহনে বয়স্করা কোনো রকমে বসে থাকতে পারলেও অতিরিক্ত গরমের কারণে শিশুরা অস্বস্তি বোধ করছে। কালিবাজার মোড়ে সরকারি চাকুরিজীবী জাহিদ হাসানকে ডাবের দাম নিয়ে দরকষাকষি করতে দেখা যায়। তিনি বলেন, গতকাল গরমে হিটস্ট্রোক করে বসেছি। ডাক্তার ডাব খেতে বলছে। এজন্য ডাব নিয়ে যাচ্ছি।
সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত ঘরে ঘরে ভিক্ষা করেই নিজের খাবারের যোগান করেন রহিমা বানু। বিকালের পরিবর্তে আজ দুপুর ১ টা বাজতেই রোদের তাপে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তিনি। জামতলা এলাকায় তার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, সকাল থেকে হাঁইটা এই দু¹া (অল্প) চাল উঠাইছি। ৪০ টাকা পামু মনে হয়। শরীর টা ভালা লাগে না। একটু পরে বাড়ি চইলা যামু।
তীব্র তাপমাত্রা ও প্রচন্ড গরমে করণীয় প্রসঙ্গে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. এস কে ফরহাদ বলেন, প্রচন্ড গরম মানুষের ঘামের কারণে শরীর থেকে অনেক পানি বের হয়ে যায়। তাই দিনে কয়েক লিটার পানি খাওয়া উচিত।
এছাড়া সম্ভব হলে ডাবের পানি ও স্যালাইন খেতে হবে। যারা শারীরিক পরিশ্রম করেন তাদের প্রয়োজন পর্যাপ্ত বিশ্রামের। আর বিশেষ করে অপ্রয়োজনে শিশুদের রোদে বের না হওয়াই করাই উত্তম। কারণ তীব্র গরমে শিশুদের রোগ বালাই বৃদ্ধি পায়।