যুদ্ধবিরতি ও কূটনৈতিক আলোচনার ভিত্তিতে দুই দেশের সংকট নিরসনে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠকে বসতে চান ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি; আর সেই বৈঠকের জন্য ইসরায়েলের রাজধানী জেরুজালেম সঠিক স্থান হতে পারে বলে মনে করেন তিনি।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেত সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেন সংকট নিরসনে দুই দেশের প্রেসিডেন্ট পর্যায়ে বৈঠকের আহ্বান জানিয়েছেন। এই বৈঠকের আয়োজক দেশ হতে ইসরায়েল আগ্রহী বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি।
রোববার সামজিক যোগাযোগমাধ্যম টেলিগ্রামে পোস্ট করা এক ভিডিওবার্তায় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে এ বিষয়ে জেলেনস্কি বলেন, ‘আমরা কৃতজ্ঞ…তার (বেনেত) প্রতিটি আন্তরিক প্রচেষ্টার জন্য। যে কোনো সময়েই আমরা রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনায় বসতে পারি, জেরুজালেমেই সেটা ঘটতে পারে।’
‘শান্তি আলোচনার জন্য জেরুজালেম আদর্শ জায়গা। যদি আমরা আদৌ শান্তি চাই।’
পশ্চিমা দেশগুলোর সামরিক জোট ন্যাটোকে কেন্দ্র করে ২০০৮ সাল থেকে দ্বন্দ্ব চলছে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে। ওই বছরই ন্যাটোর সদস্যপদের জন্য আবেদন করেছিল ইউক্রেন। সম্প্রতি ন্যাটো দেশটিকে পূর্ণ সদস্যপদ না দিলেও ‘সহযোগী সদস্যপদ’ হিসেবে মনোনীত করার পর আরও বাড়ে এই দ্বন্দ্ব।
ন্যাটোর সদস্যপদের জন্য আবেদন প্রত্যাহারে ইউক্রেনকে চাপে রাখতে গত দুই মাস রাশিয়া-ইউক্রেন সীমান্তে প্রায় দুই লাখ সেনা মোতায়েন রেখেছিল মস্কো।
কিন্তু এই কৌশল কোনো কাজে আসেনি। উপরন্তু এই দু’মাসের প্রায় প্রতিদিনই যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা অভিযোগ করে গেছে— যে কোনো সময় ইউক্রেনে হামলা চালাতে পারে রুশ বাহিনী।
অবশেষে গত ২২ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দুই ভূখণ্ড দনেতস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয় রাশিয়া; এবং তার দু’দিন পর, ২৪ তারিখ ইউক্রেনে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ শুরুর নির্দেশ দেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
এদিকে, অভিযান শুরুর পর থেকেই টেলিফোনে নিয়মিত জেলেনস্কি ও পুতিনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেত। গত ৫ মার্চ ক্রেমলিনে পুতিনের সঙ্গে ৩ ঘণ্টার বৈঠকও করেছেন তিনি।
রাশিয়া ও ইউক্রেন— উভয়ের সঙ্গেই ইসরায়েলের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ ইসরায়েলের। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ইহুদি হওয়ায় দেশটির সঙ্গে যেমন উষ্ণ সম্পর্ক আছে ইসরায়েল, তেমনি সিরিয়ায় আইএসবিরোধী অভিযানে রুশ বাহিনীকে সহায়তা করছে দেশটি।
ইউক্রেনে রুশ অভিযান শুরুর পর থেকেই কূটনৈতিকভাবে নিরপেক্ষতা বজায় রাখছে ইসরায়েল। এমনকি অভিযান শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত রাশিয়ার ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা জারি করেনি ইসরায়েল।
সম্প্রতি ইসরায়েলের আইনসভা নেসেটের সদস্যদের উদ্দেশ্যে ভার্চুয়াল মাধ্যমে ভাষণ দিয়েছেন জেলেনস্কি। সেই ভাষণে ইসরায়েলকে এই নিরপেক্ষতা বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।