সোমবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২৫, ১০:৪৫ পূর্বাহ্ন

পরিত্যক্ত ১২ উড়োজাহাজের দাম ৩ কোটি টাকা!

  • আপডেট সময় সোমবার, ১৩ জানুয়ারী, ২০২৫, ১০.২৭ এএম
  • ০ বার পড়া হয়েছে

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে থাকা পরিত্যক্ত ১২টি উড়োজাহাজ কেনার জন্য মাত্র ৩ কোটি টাকা দর হাঁকিয়েছে সেনা কল্যাণ সংস্থা। সম্প্রতি বেবিচককে দেওয়া এক চিঠিতে এই প্রস্তাব দেয় প্রতিষ্ঠানটি।

বছরের পর বছর ধরে ‘গলার কাঁটা’ হয়ে থাকা এই উড়োজাহাজগুলো নিলামে তুলতে চায় বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। নিলামের আগে ভিত্তিমূল্য নির্ধারণ নিয়ে আলোচনা চলছে।

উড়োজাহাজগুলোর মালিক এয়ারলাইন্সগুলো বলছে, বেবিচক চাইলেও এগুলো নিলামে বিক্রি করতে পারবে না। কারণ প্রতিটি উড়োজাহাজের বিপরীতে ব্যাংক লোন আছে। সংশ্লিষ্ট ব্যাংক এতে বাধা দেবে।
গত বছর নিলামে তোলার সব প্রক্রিয়া শেষ বলা হলেও এখন বেবিচক বলছে, এসব উড়োজাহাজের মূল্য নির্ধারণের জন্য আন্তর্জাতিক পরামর্শক বা প্রতিষ্ঠান লাগবে। নিলামে তোলার জন্য এসব মালামালের ভিত্তিমূল্য নির্ধারণ করতে হবে। কিন্তু আমাদের এমন জ্ঞানসম্পন্ন ও পূর্ব অভিজ্ঞতা সম্পন্ন লোকবল নেই।

এ জন্য আন্তর্জাতিকভাবে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন পরামর্শক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান নির্বাচন করার জন্য কমিটি গঠন করা হবে। কমিটি আন্তর্জাতিক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান চূড়ান্ত করার পর তারা মূল্য নির্ধারণ করে দেবে। তারপর টেন্ডারের মাধ্যমে এগুলো নিলামে বিক্রি করা হবে। দ্রুত এসব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে। আন্তর্জাতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি নিয়োগ দেওয়ার আগে দেশীয় এয়ারলাইন্সের কাছে সহায়তা চাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এর পরিপ্রেক্ষিতে সেনা কল্যাণ সংস্থা গত ৩১ ডিসেম্বর ১২টি অকেজো উড়োজাহাজ এবং আনুষঙ্গিক ইঞ্জিন ও সরঞ্জাম স্ক্র্যাপ হিসেবে কেনার জন্য ৩ কোটি টাকার প্রস্তাব দেয়। প্রস্তাবে বলা হয়, সেনা কল্যাণ সংস্থার অধীনস্থ ট্রেডিং ডিভিশন কর্তৃক সরকারি, বেসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের অকেজো অনুপযোগী বিভিন্ন ধরনের স্ক্র্যাপ ও অন্যান্য মালামাল ক্রয় করে আসছে। বেবিচকের আওতাধীন ১২টি অকেজো উড়োজাহাজ এবং আনুষঙ্গিক ইঞ্জিন ও সরঞ্জাম আমাদের প্রতিনিধি পরিদর্শন করেছেন। এগুলো আয়কর ও ভ্যাট ছাড়া ৩ কোটি ৭ লাখ ৭০ হাজার টাকায় কিনতে ইচ্ছুক।
এসব মালামাল সেনা কল্যাণ সংস্থাকে বরাদ্দ দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানানো হয়েছে চিঠিতে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বেবিচক এগুলো নিলামে বিক্রি করবে, অবশ্যই তা স্ক্র্যাপ হিসেবে। আন্তর্জাতিক বাজারে এগুলোর মূল্য আছে। কিন্তু নিলামে স্ক্র্যাপ হিসেবে বিক্রি করলে প্রকৃত মূল্য পাওয়া যাবে না। অথচ আমরা এগুলো অনেক বেশি দামে বিক্রি করতে পারতাম। বেবিচককে সে প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা তা মানেনি। এখন বেবিচক মূল্য নির্ধারণের জন্য আন্তর্জাতিক পরামর্শক নিয়োগ দিয়ে অযথা টাকা খরচ করবে। পরামর্শককে যত টাকা দিতে হবে বিক্রি করে এর পাঁচভাগের একভাগও উঠবে না। এর চেয়ে কোম্পানিগুলোর মাধ্যমে বিক্রি করলে উভয়ই লাভবান হতো। এখন এগুলো ‘গলার কাঁটা’ হয়েই থাকবে।

একটি এয়ারলাইন্সের শীর্ষ কর্মকর্তারা বলেন, আমরা আমাদের উড়োজাহাজগুলো বিক্রি করার জন্য আন্তর্জাতিক কোটেশন বেবিচকের কাছে জমা দিয়েছিলাম, সেটি বিক্রি করে যে টাকা পাওয়া যেত তা দিয়ে বেবিচকের পাওনা পরিশোধের কথা বলেছিলাম। কিন্তু বেবিচক শোনেনি। তারা এখন এগুলো কেজি দরে বিক্রি করার উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু তা পারবে না। কারণ ব্যাংকের কাছে আমাদের লোন আছে। ব্যাংক তা করতে দেবে না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অ্যাভিয়েশন বিশেষজ্ঞ ও ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের পরিচালনা পর্ষদের সাবেক চেয়ারম্যান কাজী ওয়াহিদুল আলম সময়ের আলোকে বলেন, ‘আমরা ৩০০ কোটি টাকা সারচার্জ মওকুফের জন্য আবেদন করেছিলাম। আর মূল বকেয়া ৫৫ কোটি টাকা এয়ারলাইন্স চালু হওয়ার পর ক্রমান্বয়ে দেব বলেছিলাম। এ প্রস্তাবে অর্থ মন্ত্রণালয় সম্মতি দেয়নি। ফলে এয়ারলাইন্স পরিচালনায় এওসি নবায়ন করতে পারিনি। এখন পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়া হয়েছে।’

‘উড়োজাহাজগুলো জায়গা দখল করে আছে-এগুলো খালি করা দরকার’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বেবিচক এগুলো বিক্রি করলে ১০০ ভাগের একভাগ দামও পাবে না। এয়ারলাইন্সগুলো চেয়েছিল এগুলো বিক্রি করতে, তাতে তারা কিছু টাকা পেত, বেবিচকের পাওনাও কিছু দিতে পারত। বেবিচক এ বিষয়ে নীতিগতভাবে রাজি হয়নি। এগুলো পুরোনো হলেও এগুলোর রিসেল ভ্যালু আছে। বেবিচক সেভাবে করতে পারবে না। এয়ারলাইনগুলোর ব্যাংকে লোন থাকায়, ব্যাংক এগুলো বিক্রি করতে অনুমতি দেবে না। এখানে আইনগত ঝামেলা রয়েছে।’

উল্লেখ্য, দীর্ঘ প্রায় এক যুগ ধরে পার্কিংয়ে পড়ে থাকা এসব উড়োজাহাজ ‘গলার কাঁটা’ হয়ে আছে। চার কোম্পানির এসব উড়োজাহাজের জন্য পার্কিং সারচার্জের পরিমাণ ৮৫০ কোটি টাকা। কোম্পানিগুলো এ টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় এবং কার্যক্ষমতা নষ্ট হওয়ায় এসব বিমানকে অবশেষে নিলাম করেই বিক্রি করতে হচ্ছে। এর মধ্যে ইউনাইটেডের ৮টি, রিজেন্ট এয়ারওয়েজের ২টি, জিএমজির ১টি ও এভিয়েনা এয়ারলাইন্সের ১টি করে উড়োজাহাজ রয়েছে। গত ১১ বছরে এই ১২টি উড়োজাহাজের পার্কিং ও সারচার্জ বাবদ বকেয়া প্রায় ৮৫০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ বকেয়া জিএমজি এয়ারলাইন্সের। জিএমজির কাছে ৩৬০ কোটি টাকা পায় বেবিচক। আর রিজেন্ট এয়ারওয়েজের কাছে বেবিচকের পাওনা ২০০ কোটি, ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের কাছে বকেয়া রয়েছে ৩৫৫ কোটি টাকা। এগুলো সরিয়ে নিতে মালিক পক্ষকে বারবার চিঠি দেওয়া হলেও পার্কিং ও সারচার্জ জমা দেওয়ার ভয়ে তারা সরিয়ে নেয়নি।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved © 2021 rudrabarta24.net
Theme Developed BY ThemesBazar.Com

sakarya bayan escort escort adapazarı Eskişehir escort