বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:১৬ অপরাহ্ন

পরকালীন ক্ষতির কোনো প্রায়শ্চিত্ত নেই

  • আপডেট সময় শনিবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৪.৩২ এএম
  • ৩৩ বার পড়া হয়েছে

মানুষ দুনিয়ার জীবনে নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ধনসম্পদ, পদমর্যাদা, চাকরি কিংবা প্রিয়জনকে হারিয়ে মানুষ সাময়িক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। মানুষের এসব ক্ষতি চিরস্থায়ী নয়, সাময়িক। মানুষের স্থায়ী ক্ষতি হচ্ছে পরকালীন ক্ষতি। পরকালীন জীবনে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে বিভিন্ন স্তর রয়েছে। কেউ তার ক্ষতির পরিণাম ফল ভোগ করে নির্দিষ্ট সময়কাল পরে শান্তি পাবে, জান্নাতে যেতে পারবে। কিন্তু কেউ কেউ তার ক্ষতির পরিণাম ফল ভোগ করবে অনন্তকাল।

পরকালীন ক্ষতি ও ধ্বংসপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের সম্পর্কে কুরআনের অনেক আয়াত নাজিল হয়েছে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, এক. ‘ধ্বংস প্রত্যেক মিথ্যাবাদী পাপাচারীর জন্য’ (সুরা জাসিয়াহ : ৭)। দুই. ‘ধ্বংস তার জন্য, যে মানুষের পেছনে অপবাদ রটায় এবং মানুষকে অপমানিত করে’ (সুরা হুমাযাহ : ১)। তিন. ‘ধ্বংস তার জন্য, যে (জাকাত দেওয়া ব্যতীত) সম্পদ জমা করে এবং তা গণনা করতে থাকে’ (সুরা হুমাযাহ : ২)। চার. ‘ধ্বংস সেসব নামাজির, যারা তাদের নামাজ সম্পর্কে উদাসীন থাকে’ (সুরা মাউন : ৪)। পাঁচ. ‘ধ্বংস তাদের জন্য, যারা ক্রয়-বিক্রয়ের সময়ে ওজনে কম দেয়’ (সুরা মুতাফফিফিন : ১)। ছয়. ‘ধ্বংস ওইসব মিথ্যা আরোপকারীর জন্য, যারা কেয়ামত দিবসকে অস্বীকার করে’ (সুরা মুতাফফিফিন : ১০-১১)। সাত. ‘ধ্বংস তাদের জন্য, যারা নিজ হাতে (আসমানি) কিতাব রচনা করে এবং সামান্য মূল্য লাভের জন্য বলে-এটা আল্লাহর কাছ হতে অবতীর্ণ’ (সুরা বাকারা : ৭৯)। আট. ‘ধ্বংস ও কঠিন শাস্তি ওইসব কাফেরের জন্য, যারা পরকালের তুলনায় দুনিয়াকে অগ্রাধিকার দেয় এবং আল্লাহর পথ হতে লোকদের বাধা প্রদান করে’ (সুরা ইবরাহিম : ২-৩)। নয়. ‘ধ্বংস তাদের জন্য, যারা মহান দিবসের উপস্থিতিকে অস্বীকার করে’ (সুরা মারিয়াম : ৩৮)। দশ. ‘ধ্বংস ওইসব লোকের জন্য, যারা আল্লাহ সম্পর্কে অযথা মিথ্যা কথা বানায়’ (সুরা আম্বিয়া : ১৮)। এগারো. ‘ধ্বংস ওইসব কাফেরের জন্য, যারা ধারণা করে আসমান, জমিন ও এর মাঝে যা কিছু আছে আল্লাহ সেগুলো অনর্থক সৃষ্টি করেছেন’ (সুরা সোয়াদ : ২৭)। বারো. ‘ধ্বংস তাদের জন্য, যাদের অন্তর আল্লাহর স্মরণ থেকে কঠোর হয়ে গেছে’ (সুরা যুমার : ২২)। তেরো. ‘ধ্বংস তাদের জন্য, যারা আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করে।’ (সুরা হামিম সাজদা : ৬)

এ শ্রেণির লোকজন ধ্বংসপ্রাপ্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত। এদের মধ্যে মুনাফিকরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ তারা বাহ্যিকভাবে মুসলমানদের সঙ্গে মিশে নামাজ-রোজা করলেও জাহান্নামের সবচেয়ে নিচের স্তরে থাকবে তারা। এসব ব্যক্তি চিরকালের জন্য জাহান্নামি হবে। আরেক শ্রেণির লোক আছে, যারা আল্লাহর ক্ষমা ও দয়া এবং অনুগ্রহ থেকে বঞ্চিত। ওইসব লোক হলো-যারা বিভিন্ন অন্যায়-অপরাধের মধ্যে ডুবে থাকে, অন্যের প্রতি জুলুম-অত্যাচার করে, আর ভাবে অপরাধী ও জালেমদের যে ভয়াবহ পরিণতির কথা কুরআন ও হাদিসে বর্ণনা করা হয়েছে তা কোথায়? আমরা তো অনেক অন্যায়-অপরাধ ও জুলুম-অত্যাচার করে বেড়াচ্ছি, কিন্তু আমাদের তো কিছুই হচ্ছে না! এ শ্রেণির লোকদের সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তারা কি আল্লাহর পাকড়াওয়ের ব্যাপারে নিশ্চিন্ত হয়ে গেছে? বস্তুত আল্লাহর পাকড়াও থেকে তারাই নিশ্চিন্ত হয়, যাদের ধ্বংস ঘনিয়ে আসে।’ (সুরা আরাফ : ৯৯)

আরেক শ্রেণির ক্ষতিগ্রস্ত লোক আছে যারা ঈমান এনেছে বলে দাবি করে, সেই সঙ্গে তারা ইবাদত-বন্দেগিও করে। কিন্তু তারা দ্বিধাদ্বন্দ্বের সঙ্গে ইবাদত-বন্দেগি করে, যদি তাদের কোনো কল্যাণ অর্জিত হয় তা হলে তারা ইবাদত-বন্দেগি করে, আর যদি তাদের কোনো বিপদ আক্রান্ত করে তা হলে তারা দ্বীন ইসলামের সত্যতার ব্যাপারে সন্দিহান হয়ে পড়ে।

তারা ভাবে, দ্বীন ইসলাম যদি সত্য হয় তা হলে আমরা কেন এসব বিপদাপদে আক্রান্ত হচ্ছি? তাদের সম্পর্কে কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘মানুষের মধ্যে কেউ কেউ দ্বিধাদ্বন্দ্বের মধ্যে আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগি করে। যদি তার কোনো কল্যাণ লাভ হয় তা হলে সে ইবাদত-বন্দেগির ওপর কায়েম থাকে। আর যদি তাকে কোনো বিপদ আক্রান্ত করে তা হলে সে পূর্বাবস্থায় কুফরির দিকে ফিরে যায়। সে ইহকালে ও পরকালে ক্ষতিগ্রস্ত। এটাই প্রকাশ্য ক্ষতি।’ (সুরা হজ : ১১)

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved © 2021 rudrabarta24.net
Theme Developed BY ThemesBazar.Com

sakarya bayan escort escort adapazarı Eskişehir escort