রুদ্রবার্তা২৪.নেট: জেন্ডার (লিঙ্গ) মূলধারায় আনতে বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক ৫ বছর মেয়াদী কর্মপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। দীর্ঘমেয়াদী এই কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বুধবার (১৫ সেপ্টেম্বর) নারায়ণগঞ্জে তিন ঘন্টাব্যাপী অবহিতকরণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে ব্র্যাকের বিভিন্ন আঞ্চলিক পর্যায়ের কর্মকর্তাগণ অংশ নেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফা জহুরা। আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপপরিচালক কামিজা ইয়াসমিন, সমাজসেবা কর্মকর্তা আবু নাঈম মির্দা, ব্র্যাকের প্রধান কার্যালয়ের মনিটরিং অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশন ম্যানেজার কাজী ইশরাত জাহান, আরিফ আহমেদ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ব্র্যাকের জেলা সমন্বয়ক মো. হুমায়ূন কবির।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইউএনও আরিফা জহুরা বলেন, সমাজের মূল উপাদান মানুষ। জেন্ডার মানে কিন্তু নারীদের নিয়েই আলোচনা নয়। তবে সৃষ্টির সূচনালগ্ন থেকেই নানা কারণে নারীদের পেছনে রেখে কাজ করেছেন পুরুষরা। নারীরা যেন পিছিয়ে না থাকে সেজন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে এবং হচ্ছে। আমাদের দেশ অনেক জায়গায় নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করছে। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টাতে জেন্ডার বিষয়ক বৈষম্য দূর হবে। নারী ও শিশু নির্যাতনের শিকার হবে না। নারী নির্যাতনের একটি অন্যতম কারণ হচ্ছে বাল্যবিবাহ। বাল্যবিবাহ কিন্তু বেশিরভাগ সময়তেই টেকে না। আমাদের শতভাগ মননশীল হতে হবে। নারীকে বিশেষ নজরে নয় একজন মানুষ হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। বিষয়টা অন্য সকল জেন্ডারের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
কামিজা ইয়াসমিন বলেন, নারী বলে কোনো কাজে পিছিয়ে থাকবে, এমন ভাবনা বদলাতে হবে। ন্যায়বিচার পাবার ক্ষেত্রেও সকল জেন্ডার সমান অধিকার ভোগ করবে। সরকারের পাশাপাশি ব্র্যাকের মতো বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান জেন্ডার বিষয়ক সচেতনতা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। নারী নির্যাতন কিংবা যেকোনো প্রকার জেন্ডার বৈষম্যের ক্ষেত্রে কঠোর হতে হবে।
সমাজসেবা কর্মকর্তা আবু নাঈম বলেন, করোনায় নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা বেড়েছে। বিভিন্ন সমীক্ষা তাই বলে। এর পেছনে কর্মহীন অবস্থা একটি কারণ। তবে আমাদের চারপাশ সুশৃঙ্খল রাখতে আমাদেরও করণীয় বিষয়গুলোকে মাথায় রাখতে হবে। জেন্ডার বিষয়ক সচেতনতা থাকা অতীব জরুরি।
ব্র্যাকের জেন্ডার জাস্টিস অ্যান্ড ডাইভার্সিটি কর্মসূচির আওতায় আয়োজিক কর্মশালায় আগামী ৫ বছর মেয়াদী কর্মপরিকল্পনা বিষয়ে কথা বলেন, ব্র্যাকের জেন্ডার মেইনস্ট্রিমিং এর রিজিওনাল ম্যানেজার (আরএম) রুদমিলা আহমেদ, অর্গানাইজেশন ডেভেলপমেন্ট ইউনিটের আরএম শিল্পা পোদ্দার, মনিটরিং অ্যান্ড ইভলিউশন বিভাগের আরএম আর্শিব ইমতিয়াজ। তারা জানান, জেন্ডার মেইনস্ট্রিমিং বা মূলধারায় জেন্ডার হচ্ছে এমন একটি কৌশল যার মাধ্যমে যেকোনো কর্মসূচি তার পরিকল্পনা, বাস্তবায়ন, পর্যবেক্ষণ এবং মূল্যায়নসহ সকল ক্ষেত্রে কর্মসূচিতে অন্তভূক্ত সকল নারী, পুরুষ এবং লিঙ্গ বৈচিত্রময় জনগোষ্ঠীর অবস্থা ও অভিজ্ঞতাকে বিবেচনা করে। যাতে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিকসহ সকল ক্ষেত্রে নারী, পুরুষ এবং লিঙ্গ বৈচিত্রময় জনগোষ্ঠীর কোনো ধরনের বৈষম্যের সম্মুখীন হয় না এবং সর্বোপরি সবাই উপকৃত হয়।
তারা বলেন, জেন্ডারকে মূলধারায় আনতে ব্র্যাক ২০১৬ থেকে কাজ শুরু করে। জেন্ডার বিষয়ে জ্ঞান এ দক্ষতাবৃদ্ধির জন্য ২০১৮ সাল পর্যন্ত ৭টি জেলায় ৬টি কর্মসূচি ও ৩টি এন্টারপ্রাইজের মাধ্যমে কাজ করেছে। ২০১৯ সালে ২৪টি জেলাই একই কার্যক্রম চলে। কোভিডকালীন সময়েও নতুন কর্মকৌশলে এই কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে ব্র্যাক। চলতি বছরে আগামী ৫ বছর মেয়াদী কর্মপরিকল্পনায় তিনটি পার্বত্য জেলা বাদে ৬১ জেলায় এ কার্যক্রম চলবে। রিজিওনাল ম্যানেজার, অর্গানাইজেশন ডেভেলপমেন্ট ও মনিটরিং অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশন ম্যানেজারদের মাধ্যমে এই কার্যক্রম বাস্তবায়িত হবে।