রংপুর সিটি করপোরেশন (রসিক) নির্বাচনে উন্নয়নের স্বার্থে মানুষ নৌকা প্রতীকে ভোট দেওয়ার জন্য মুখিয়ে আছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া।
তিনি বলেন, দীর্ঘদিনের বঞ্চনার অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে রংপুর মহানগরবাসী জেগেছে। সবাই এখন শেখ হাসিনার হাত ধরে উন্নয়ন চায়। এ কারণে রংপুর সিটির মানুষ নৌকায় ভোট দেওয়ার জন্য মুখিয়ে আছে। আমাদের বিজয় সন্নিকটে। এখানে অন্য কোনো মার্কার সুযোগ নেই। আধুনিক ও পরিকল্পিত রংপুর সিটি করপোরেশন গড়তে নৌকার বিকল্প নেই। আমরা রংপুর সিটিকে মডেল সিটি করপোরেশন করব ইনশাআল্লাহ।
শুক্রবার (২৫ নভেম্বর) বিকেলে রংপুর মহানগরীতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরালে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া এসব কথা বলেন।
এর আগে সৈয়দপুর বিমানবন্দর থেকে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম রাজুর নেতৃত্বে অ্যাডভোকেট হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়াকে অভ্যর্থনা জানানো হয়। সেখান থেকে তাকে গাড়ি বহরে নিয়ে বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল চত্বরে আসেন জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
পরে সন্ধ্যায় রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী অনেক যাচাই-বাছাই করে মনোনয়ন দিয়েছেন। এখন আমাদের ভোটারদের কাছে যেতে হবে, আমাদের পরিকল্পনার কথা বলতে হবে, আমরা কী করতে চাই, কী করতে পারি। আপনারা জানেন, এই সিটি করপোরেশন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের উপহার দিয়েছেন। রংপুরের অভূতপূর্ব উন্নয়ন করেছেন। এবার আমরা রংপুরবাসী সেই কৃতজ্ঞতা থেকে প্রধানমন্ত্রীকে বিজয় উপহার দিতে চাই।
মনোনয়ন বঞ্চিতরা সঙ্গে আছেন কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে ডালিয়া বলেন, আমাদের দলের মধ্যে কোনো বিভেদ নেই। অনেকেই নৌকার মনোনয়ন চেয়েছিলেন। তবে মনোনয়ন না পাওয়ায় কোনো বিভেদ নেই। হয়তো আবেগ আছে, কিন্তু সেটি শেষ কথা নয়। চেয়ার নিয়ে লড়াই মানে দলের কিংবা শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের বাইরে লড়াই না। কেননা নৌকার প্রশ্নে কোনো আবেগ নাই আমাদের। তাছাড়া রংপুর আওয়ামী লীগ এখন ঐক্যবদ্ধ। নির্বাচনের মাঠে সবাই থাকবে, কাজও করবে। আমরা সবাইকে নিয়ে কাজ করতে চাই। সবাই আমার পাশে আছে, ইনশাআল্লাহ বিজয় সুনিশ্চিত।
তিনি আরও বলেন, আমি সংসদ সদস্য ছিলাম। সেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে মেয়র নির্বাচিত হলে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করে উন্নয়নে বরাদ্দ নিয়ে কাজ করতে পারব।
সংবাদ সম্মেলনে রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মণ্ডল, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট ইলিয়াস আহমেদ, মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি কায়সার রাশেদ খান শরীফ, আবুল কাশেম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নওশাদ রশীদ, নিধুরাম অধিকারী, উপ-দপ্তর সম্পাদক আবু সাদাত শাওন, জেলা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আতিক ঊল আলম কল্লোল, মহানগর যুবলীগের সভাপতি সিরাজুম মনির বাসার, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এস এম সাব্বির আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, পৌরসভার ১৫টি ওয়ার্ডের সঙ্গে বর্ধিত এলাকার (সাবেক সদর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়ন থেকে) আরও ১৮টি ওয়ার্ড যুক্ত করে ২০১২ সালের ২৮ জুন ৩৩টি ওয়ার্ড নিয়ে রংপুর সিটি করপোরেশন গঠন করা হয়। এরপর প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ওই বছরের ২০ ডিসেম্বর। এতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সরফুদ্দিন আহমেদ ঝণ্টু প্রথম নগরপিতা হিসেবে নির্বাচিত হন। বর্তমানে এই সিটির জনসংখ্যা প্রায় ১০ লাখ। আর ভোটার রয়েছেন চার লাখেরও বেশি। ২০১৭ সালের ২১ ডিসেম্বর দ্বিতীয় নির্বাচনের সময় ভোটার ছিল ৩ লাখ ৯৩ হাজার ৯৯৪ জন। এতে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা মেয়র নির্বাচিত হন।
এবার তৃতীয় বারের মতো রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী মনোনয়ন দাখিলের শেষ দিন ২৯ নভেম্বর। ১ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র বাছাই এবং ৮ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ তারিখ। প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে পরদিন ৯ ডিসেম্বর। প্রতীক বরাদ্দের পর প্রার্থীরা ১৭ দিন প্রচার-প্রচারণার সুযোগ পাবেন। ২৭ ডিসেম্বর ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত এক টানা ভোটগ্রহণ করা হবে।