মোঃ সিরাজুল ইসলাম : নির্বাচন কমিশন ইসি সাথে সংলাপে বসলেন বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের ৪০ দফা প্রস্তাবনা
নির্বাচন কমিশনের সাথে সংলাপে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালীকরণ, সকল দল ও প্রার্থীর সমানাধিকার নিশ্চিতকরণ, জনপ্রশাসন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়সহ নির্বাচনের সাথে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয় ও বিভাগ সমূহ নির্বাচন কমিশনের অধীনে রাখা, নির্বাচন কমিশনকে সরকারের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ প্রভাব থেকে মুক্ত রাখা , সেনাবাহিনীকে ম্যাজিষ্ট্রেট এর ক্ষমতা প্রদান করে মোতায়েন করা, ইসির নিজস্ব কর্মকর্তা থেকে দক্ষ ও নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ করা, প্রধান নির্বাচন কমিশনের যে আইনী ক্ষমতা রয়েছে নতজানু না হয়ে তা প্রয়োগ করা, সংবিধান সংশোধন করে হলেও নির্বাচনকালীন র্নিদলীয় নিরপেক্ষ সরকার ব্যবস্থা চালু করাসহ ৪০ দফা প্রস্তাব পেশ করা হয়েছে।
গতকাল রোববার সকাল ১০.৩০ টায় আগারগাঁওস্থ নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালে সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংলাপে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের ১২ সদস্যবিশিষ্ট প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন দলের আমীর মাওলানা শাহ আতাউল্লাহ ইবনে হফেজ্জী হুজুর। লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি সুলতান মহিউদ্দীন।
প্রতিনিধি দলে ছিলেন দলের মহাসচিব মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজি, নায়েবে আমীর মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আব্দুল মান্নান, হাজী জালাল উদ্দিন বকুল, এডভোকেট মোহাম্মাদ লিটন চৌধুরী, মাওলানা সানাউল্লাহ, মাওলানা ফিরোজ আশরাফী, আলহাজ¦ আতিকুর রহমান নান্নু মুন্সী, সাইফুল ইসলাম সুনামগঞ্জের. ইঞ্জিনিয়ার মোফাচ্ছির হোসাইন প্রমূখ। নির্বাচন কমিশনের পক্ষে ইসি সচিব হুমায়ুন কবীর খোন্দকার, অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ সহ অন্য চার কমিশনার সংলাপে উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের প্রস্তাবে বলা হয়, সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণে জনসংখ্যা অনুপাতে ভৌগলিক দূরত্ব ও যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রতি খেয়াল রাখা। মহিলাদের সব আসনে নির্বাচনে অংশগ্রহন করার সুযোগ থাকায় সংসদে সংরক্ষিত মহিলা আসন বিলুপ্ত করা। নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করা। মনোনয়নপত্র দাখিলের বিধান সহজ করা, অনলাইনেও মনোনয়নপত্র দাখিলের বিধান করা। প্রার্থীর জামানত ১০ হাজার টাকার মধ্যে রাখা। ভোটার তালিকা সংবলিত সিডি প্রার্থীকে বিনামূল্যে প্রদান করা। চলমান সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিধান করা। বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় নির্বাচিত প্রার্থীর গেজেট প্রকাশ না করে ফের নির্বাচনের বিধান করা। তাহলে ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৩ জন বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় নির্বাচিত হওয়ার পথও বন্ধ হবে।
ইসলাম বিদ্বেষী, কালোটাকার মালিক, অবৈধ সম্পদকে বৈধকারী এবং ঋণখেলাপীদের সাথে জড়িত পরিবার বর্গকে নির্বাচনের অযোগ্য ঘোষণা করা। তারা নির্বাচিত হলেও কমিশন কর্তৃক সদস্যপদ বাতিলের আইন করা।
রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন শর্তাবলী শিথিল করা, সকল কমিটিতে ৩৩% মহিলা সদস্য রাখার বাধ্যতামূলক ধারাটি বাতিল করা, কোরআন-সুন্নাহর সাথে সাংঘর্ষিক কোন শর্ত আরোপ না করা।
নির্বাচনে ব্যয়ের বৈধ সীমা ক্রমাগত বেড়ে চলায় সৎ যোগ্য আদর্শবান সাধারন নাগরিকগণ সংসদ সদস্য হওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। নির্বাচনী ব্যয় ২৫ লাখ টাকা থেকে কমিয়ে ১০ লাখ টাকার মধ্যে আনা।
সবার জন্যে সমান সুযোগ তথা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা । রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে কে সব রাজনৈতিক দলের সমান সুযোগ সৃষ্টি করা এবং জাতীয় বেতার ও টিভিতে সকল দলের নির্বাচনী ইশতেহার ও ভাষণ প্রচারের সুযোগ দেয়া। ভোট ক্রয়-বিক্রয় এবং কালো টাকা ও বেশী শক্তির ব্যবহার বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। প্রার্থী ও ভোটারদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। প্রবাসীদের জন্য ভোটাধিকার প্রয়োগের সুব্যবস্থা রাখা। ভোটকেন্দ্রের চারপাশ সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা, নির্বাচনী কার্যক্রমে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কোন দলীয় লোকদের মেহমানদারী করার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা। ভোটের বিধান পুনর্বহাল করা। ভোটের আগের দিন থেকে প্রতিটি কেন্দ্রে সেনাবাহিনীসহ পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন করা। বাংলাদেশে কোনো দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের প্রমান নেই। অতএব একটি অবাধ সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য সংবিধান সংশোধন করে হলেও নির্বাচনকালীন র্নিদলীয় নিরপেক্ষ সরকার ব্যবস্থা চালু করা।
সংলাপে খেলাফত প্রধান মাওলানা আতাউল্লাহ বলেন, ভোট একটি পবিত্র আমানত। এই আমানত যাতে নষ্ট না হয়, জনগণ যেন নির্বিঘ্নে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে সেই পরিবেশ তৈরির জন্য নির্বাচন কমিশনকে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। নির্বাচন পদ্ধতি যত উন্নত ও নিখুঁত হবে, নির্বাচনের সুষ্ঠুতা ও নিরপেক্ষতা তত প্রশ্নহীন হবে, ফলে আস্থা ও বিশ্বাস সুদৃঢ় হবে এবং দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা সৃষ্টি হবে।