দ্বিতীয়বার নির্বাচন করার কোন ইচ্ছাই ছিল না। কিন্তু আমার মুরুব্বী যখন বললেন, তোমাকে নির্বাচন করতেই হবে। তখন আমি নির্বাচন করলাম। আবারও যদি বলা হয়, আবারও করবো। না বলা হলে করবো না। কারণ আমাদের পরের লোকও আসতে হবে। তবে সেই লোকটা ভালো লোক হতে হবে।
নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রির অষ্টম তলায় রোববার (৪ ডিসেম্বর) রাতে এক অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন সেলিম ওসমান।
তিনি নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য ও পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ’র সভাপতি।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলীর সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জের শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা।
এর আগে প্রথমবার নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কারণ জানিয়ে সেলিম ওসমান বলেন, আমার ভাইয়ের মৃত্যুর পরে অনেক নির্দেশ, আদেশ আসার পরেও যখন আমার মা বললেন, তোমাকে দায়িত্বটা নিতে হবে। এতদিন তুমি পরিবারের অনেক দায়িত্ব পালন করেছো, এখন রাজনীতিতে যাও, নির্বাচনে অংশ নাও। তখন আমি কথাটা ফেলে দিতে পারি নাই। আমি যতদিন বেঁচে থাকবো, ততদিন আমার যুদ্ধ চলবে। ততদিন পর্যন্ত এই দেশকে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করা হবে। এ জন্য প্রত্যেকের একে অপরকে সহযোগীতা করতে হবে। আমি চেষ্টা করেছি, কাজ করে যাওয়ার। বন্দরে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের নামে স্কুলের ভবন করতে পেড়েছি। শেখ জামাল, শেখ রাসেল, সামসুজ্জোহা, নাগিনা জোহা ও নাসিম ওসমানের নামে স্কুলের ভবন করতে পেড়েছি। আমি নারায়ণগঞ্জ কলেজকে আধুনিক কলেজে রূপ দিতে পেড়েছি। আমি চাইলে লোভ লালসা করতে পারতাম, কিন্তু তখন আমার বুকটা গর্বে ভরে যায়, যখন আপনারা বলেন, সেলিম ওসমান এই কাজটা করেছে।
এ সময় সেলিম ওসমান বলেন, ‘১৯৭২ সাল থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত আমি রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়ে ছিলাম। আমি যখন ঢাকা কলেজে পড়ি, তখন আমার সাথে বঙ্গবন্ধুর পুত্র শেখ জামাল পড়েছে। তখন নারায়ণগঞ্জের মানুষরা আমাকে চিনতো না। তখন রাজনীতি করতাম। বঙ্গবন্ধুর বাড়ির সাথে আমাদের একটা পারিবারিক সম্পর্ক ছিল। এরপর বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ অনুযায়ী, আমি রাজনীতি ছেড়ে দিয়ে ব্যবসায়ী হয়েছি।’
বঙ্গবন্ধুর কথা স্মরণ করে সেলিম ওসমান বলেন, ‘আজকে হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধা। মাত্র ৪ সামরিক অসভ্য কর্মকর্তা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছিল। কিন্তু আমরা প্রতিবাদ করতে পারিনি। আমাদের লজ্জা হওয়া উচিৎ। অথচ, আজকে বুক ফুলিয়ে বলছি, মুক্তিযোদ্ধা ছিলাম বলে ২০ হাজার টাকা করে মাসে ভাতা পাই। তাই লজ্জা লাগে আমার মাঝে মধ্যে।’
এ সময় মুক্তিযোদ্ধারা সেলিম ওসমানের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে দোয়া চান।
মতবিনিময়ে সেলিম ওসমান বলেন, জন্ম যখন হয়েছে, মৃত্যুতো হবেই। বয়স হলে শরীরও খারাপ থাকবে। মৃত্যু অনেক বার সামনে দিয়ে আসছে-গেছে। ৭৫ সালের পরে আমাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, আমার বাবাকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়ার পর ঘরে খাবার ছিল না। এরপর আবার আমার কারখানা দখল করে নিয়ে গিয়েছিল। জীবনে অনেক কষ্ট করেছি, কষ্ট কোন দিন মনে রাখি নাই। বরং পরিশ্রম করে গেছি। যতদিন বেঁচে আছি করে যাবো।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলীর সভাপতিত্বে এ সময় মতবিনিয়ম হয়। এতে সদর উপজেলা কমান্ডার শাজাহান ভূইয়া জুলহাসসহ শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা উপস্থিত ছিলেন।