আগামী ১৬ জানুয়ারি ভোটগ্রহণের তারিখ রেখে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ২৭ ওয়ার্ডের এই সিটি করপোরেশনে সবশেষ নির্বাচন হয়েছিল ২০১৬ সালের ২২ ডিসেম্বর। সেবার বিএনপি প্রার্থীকে পরাজিত করে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে এই সিটির মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী।
মঙ্গলবার (৩০ নভেম্বর) নির্বাচন কমিশনের ৯১তম কমিশন সভা শেষে ইসি সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার নাসিক নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন।
তফসিল অনুযায়ী এই নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ আগামী ১৫ ডিসেম্বর। এরপর ২০ ডিসেম্বর মনোনানয়পত্র যাচাই-বাছাই চলবে। বাছাইয়ে বৈধ প্রার্থীরা ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে পারবেন। দুই সপ্তাহের প্রচারণা শেষে নাসিক নির্বাচনের ভোট নেওয়া হবে ১৬ জানুয়ারি সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।
এর আগে, মঙ্গলবার বিকেল ৩টায় আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কমিশনের ৯১তম কমিশন সভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা এতে সভাপতিত্ব করেন। এই সভার প্রথম এজেন্ডাই ছিল নাসিক নির্বাচনের তফসিল।
২০১১ সালের ৫ মে সিদ্ধিরগঞ্জ, কদমরসূল ও নারায়ণগঞ্জ পৌরসভাকে ২৭টি ওয়ার্ডে বিন্যস্ত করে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন গঠন করা হয়। ওই বছরের ৩০ অক্টোবর প্রথমবারের মতো ভোট হয় নাসিকে। ওই নির্বাচনে মেয়র পদে জয় পান ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। সেবার তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার। তবে তিনি মাঝপথেই ভোট বর্জন করেন। আর দু’জনে দলীয় সমর্থন নিয়ে নির্বাচন করলেও ভোট ছিল নির্দলীয়।
এরপর নাসিকের দ্বিতীয় ও সবশেষ নির্বাচন হয় ২০১৬ সালের ২২ ডিসেম্বর। সেবারও প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থী। প্রথমবারের মতো এই নির্বাচনটি দলীয় প্রতীকে হওয়ায় ভোটের উত্তেজনাও ছিল বেশি।
এই নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী ছিলেন ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী, ধানের শীষের প্রার্থী ছিলেন অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান। ভোটের ফল বলছে, সেলিনা হায়াৎ আইভী পান ১ লাখ ৭৫ হাজার ৬১১ ভোট এবং অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত পান ৯৬ হাজার ৪৪ ভোট।
এবারও নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন পেতে দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন বর্তমান মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। এছাড়াও একইদিন নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মো. শহীদ বাদল ও মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট খোকন সাহাও মনোনয়ণপত্র সংগ্রহ করেন। এরআগে রোববার মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি চন্দন শীলের পক্ষে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন তার ছেলে অরিজিৎ শীল।
এ বিষয়ে আইভী স্থানীয় গণমাধ্যমগুলোকে জানিয়েছেন, তিনি এবারও দলীয় মনোনয়ন পেতে আশাবাদী। তবে চলমান বিভিন্ন স্থানীয় সরকার নির্বাচনের মতো নারায়ণগঞ্জ সিটির এই নির্বাচনেও সম্ভবত অংশ নেবে না বিএনপি।
নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মো. শহীদ বাদল বলেন, আমি নারায়ণগঞ্জবাসীর কাছে দোয়া চাই। আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আামকে যদি দল ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, বিশ্বমানবতার মা শেখ হাসিনা নমিনেশন দেন তাহলে অতীতে আমি যেভাবে দলমত নির্বিশেষে মানুষের জন্য কাজ করে গেছি ভবিষ্যতেও করে যাবো।
নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি চন্দন শীল বলেন, আমি আওয়ামীলীগ করি, বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি বিশ্বাস করি। দলের প্রতি আমি অনুগত ও দলের সিদ্ধান্তের প্রতি আমি আস্থাশীল তাই আমি দলীয় ঘোষনা অনুযায়ি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দলের প্রতি সম্মান জানিয়ে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছি। আশা করি নারায়ণগঞ্জবাসী ও দল আমার প্রতি সমর্থন করবে।
এই নারায়ণগঞ্জের সিটি অধ্যুষিত এলাকাবাসী একটা পরিবর্তন চায় আমিও তা চাই। সিটি এলাকায় যে উন্নয়ন হয়েছে তাতে আমি ও নগরবাসী সন্তষ্ট নয়। এটা কোনো কাঙ্খিত উন্নয়ণ নয়। তাই আমি মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করি। আমি নারায়ণগঞ্জবাসী ও সকলের সমর্থন চাই, দোয়া চাই। পাশাপাশি আমি এটাও বিশ্বাস করি আমার প্রতি তাদের দোয়া ও সমর্থন আছে এবং থাকবে।