দীর্ঘ পাঁচ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে ট্রেন চলাচল। এতে বেকায়দায় পড়েছেন এই রুটে চলাচল করা প্রায় ৪০ হাজার যাত্রী। ট্রেন বন্ধ থাকায় একদিকে অতিরিক্ত ভাড়া অন্যদিকে প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হয়ে গণপরিবহনে যাতায়াত করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। আর ট্রেন বন্ধ থাকায় বেজায় খুশি নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা রুটে চলাচলকারী গণপরিবগন মালিকরা। ট্রেনের পুরো যাত্রী তারা এখন বহন করছেন। তবে কবে নাগাদ ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে ট্রেন চলাচল শুরু হবে তা নির্দিষ্ট করে বলতে পারছেন না নারাযণগঞ্জ রেল স্টেশনের কর্মকর্তারা।
শিল্প ও বাণিজ্যনগরী নারায়ণগঞ্জের যাত্রীরা প্রধানত রেলপথ এবং সড়কপথে ঢাকায় যাতায়াত করেন। রাজধানী লগোয়া হওয়ার এখানকার অসংখ্য মানুষ ঢাকায় গিয়ে এবং ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জে এসে অফিস করেন। ব্যবসা-বাণিজ্যের কারণেও যাতায়াত রয়েছে। ফলে রেলপথ এবং সড়কপথ দুটিতেই সাধারণ মানুষের চাপ থাকে। এরমধ্যে যানজটের ভোগান্তি ও কম ভাড়ার সুবিধা পেতে প্রায় ৪০ যাত্রী দৈনিক রেলপথে যাতায়াত করেন। তাদের সিংগভাগ স্বল্প আয়ের মানুষ।
জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা রুটে প্রতিদিন ৯ জোড়া ট্রেন আসা-যাওয়া করতো। সবমিলিয়ে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে ১৮টি ট্রেন যাত্রীদের নিয়ে আসা-যাওয়া করে আসছিল। কিন্তু পদ্মা সেতু রেলসংযোগ প্রকল্পের কাজের স্বার্থে গত বছরের ৪ ডিসেম্বর থেকে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।
সেসময় বাংলাদেশ রেলওয়ে জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছিল, সরকারের ফাস্ট ট্র্যাকযুক্ত প্রকল্প পদ্মা সেতু রেলসংযোগ প্রকল্পের আওতায় ঢাকা থেকে গেন্ডারিয়া অংশে তিনটি পৃথক রেললাইন নির্মাণকাজ চলমান। কাজটি দ্রæত সম্পন্ন করার লক্ষ্যে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে চলাচলকারী সব ট্রেন সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পের কাজ শেষ হলে এ লাইনে পুনরায় ট্রেন চলাচল শুরু হবে। কিন্তু ৫ মাসেও ট্রেন চলাচল শুরু হয়নি।
নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা রুটে ট্রেনের নিয়মিত যাত্রী ছিলেন একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে চাকরীজীবি আবুল কশেম। তিনি বলেন, যানজট মুক্ত ও কম ভাড়ার কারণে ট্রেনে যাতায়াত করতাম। যেখানে ১৫ টাকা দিয়ে ঢাকায় যেতে পারতাম সেখানে এখন যানজট ঢেলে ৫৫ টাকা ভাড়া দিয়ে বাসে যাই। আসা যাওয়া ১১০ টাকা। অথচ ৩০ টাকায় ট্রেনে আসা যাওয়া করতাম। অতিরিক্ত ভাড়া দিতে গিয়ে সংসারের খরচ বেড়ে গেছে। আমার মতো শত শত যাত্রী এই পরিস্থিতিতে পড়েছেন। তাই দ্রæত সময়ের মধ্যে ট্রেন চলাচলের দাবি জানাচ্ছি।
জামাল উদ্দিন নামের আরেক যাত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ট্রেন বন্ধের পুরো সুযোগটি কাজে লাগাচ্ছেন গণপরিবহন মালিকরা। ট্রেন বন্ধ থাকায় তারা অনেক খুশি। ট্রেন চালু থাকলে তাদের যাত্রী কমে যায়। কারণ মানুষ কম ভাড়ায় ট্রেনে যাতায়াত করতে পারে। ট্রেন বন্ধের কারণে আমাদের ১৫ টাকার ট্রেনের ভাড়ার জায়গায় ৫৫ টাকা দিয়ে বাসে যেতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ ফোরামের আহ্বায়ক রফিউর রাব্বি বলেন, ‘গত ডিসেম্বর থেকেই ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। ওই সময়ে রেল কর্মকর্তারা বলেছিলেন, তিনমাসের মধ্যেই ট্রেন চালু করবেন। অথচ মে মাস চলছে। কিন্তু এখনো ট্রেন চালু হয়নি।’ তিনি আরও বলেন, প্রতিদিন প্রায় ৪০ হাজার মানুষ ট্রেনের মাধ্যমে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে চলাচল করে। মূলত কম ভাড়া ও সময় সাশ্রয়ের জন্য ট্রেনকে যাতায়াতের মাধ্যম হিসেবে বেছে নেন যাত্রীরা।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার কামরুল ইসলাম জানান, মার্চে চালু হওয়ার কথা থাকলেও কেন চালু হয়নি এ সঠিক তথ্য আমার জানা নেই। তবে চলতি মাসের শেষের দিকে ট্রেন চালু হতে পারে। তবে রেলওয়ের একটি সূত্র জানায়, পদ্মা সেতুতে রেলসংযোগ কাজের অংশ হিসেবে গেন্ডারিয়া অংশে কাজ শেষ হয়নি। ফলে ট্রেন চলাচল ঢিলে হচ্ছে।