রুদ্রবার্তা২৪.নেট: সরকার ঘোষিত কড়া বিধিনিষেধের দ্বিতীয় দিনে নারায়ণগঞ্জের পরিস্থিতি ছিল আগের দিনের চেয়েও স্বাভাবিক। শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট চাষাঢ়ায় পুলিশের চেকপোস্ট থাকলেও তা যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। অন্য স্বাভাবিক দিনের মতোই শীতলক্ষ্যা নদীতে খেয়া পারাপার চলেছে। শহরতলীর ও অলিগলির সকল দোকানপাটও ছিল খোলা। হোটেল-রেস্তোরাঁতেও ছিল স্বাভাবিক দিনের চিত্র। তবে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় অতিরিক্ত ভাড়ায় ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে কর্মজীবী মানুষদের। বুধবার (২৩ জুন) সরেজমিনে এই চিত্র দেখা যায়।
গত মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে নারায়ণগঞ্জসহ সাত জেলায় সরকার ঘোষিত সপ্তাহব্যাপী কড়া বিধিনিষেধ অর্থ্যাৎ লকডাউন শুরু হয়। এই সময়ে যানবাহন ও মানুষের চলাচলের সরকারের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা থাকলেও তা মানতে দেখা যায়নি। অন্য স্বাভাবিক দিনের মতোই প্রাইভেট কার, প্যাডেলের রিকশা, ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক, সিএনজি চালিত রিকশা চলাচল করেছে। মানুষের আনাগোনাও প্রথম দিনের তুলনায় দ্বিতীয় দিন বেড়েছে। তবে বাস, ট্রেনসহ গণপরিবহনগুলো বন্ধ ছিল। এতে জরুরি প্রয়োজনে জেলার বাইরে যাওয়ার জন্য ঘর থেকে বের হওয়া মানুষজন ভোগান্তিতে পড়েন। অতিরিক্ত ভাড়ায় ছোট বাহনে চড়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে হয়েছে তাদের।
শহরের চাষাঢ়ায় ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সংযোগ সড়কের প্রবেশমুখে এক ব্যক্তিকে যানবাহনের অপেক্ষায় দেখা যায়। কথা হলে তিনি জানান, তার নাম মোজাফফর আহমেদ। তিনি বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী। জরুরি প্রয়োজনে মতিঝিল যেতে হবে তার। অন্য সময় বাসে গেলেও লকডাউনের কারণে পাচ্ছেন না কোনো বাহন। যেগুলো পাওয়া যাচ্ছে তা অতিরিক্ত ভাড়ার। মোজাফফর আহমেদ বলেন, ‘প্রায় দেড় ঘন্টা যাবৎ অপেক্ষা করছি। সিএনজি বা ইজিবাইক সাইনবোর্ড পর্যন্ত যাবে, তাও আড়াইগুন ভাড়ায়।’ দীর্ঘ অপেক্ষার পর গুলিস্তান পর্যন্ত ২৫০ টাকায় একটি মোটরবাইক ভাড়া করেছেন। পুলিশ বাধা দিলে অর্ধেক রাস্তায় নেমে যেতেও হতে পারে।
কড়া বিধিনিষেধের মধ্যে শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কের দুই পাশের ফুটপাতে হকারদের পসরা দেখা গেছে। ফুডকোর্ট নিয়েও বসেছেন অনেকে। জানতে চাইলে তারা বলেন, ‘সরকার লকডাউন দিয়েছে কিন্তু রুটি-রুজির ব্যবস্থা করা হয়নি। আমরা দিন আনি দিন খাই। একদিন রাস্তায় বের না হলে আমাদের কোনো উপায় নাই।’
তবে সকাল থেকে শহরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়েছেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণ। নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও দোকানপাট খোলা এবং নির্দেশনা না মেনে হোটেল পরিচালনা করায় কয়েকজনকে জরিমানাও করেন তারা। রাস্তায় গাড়ি নিয়ে বের হওয়া লোকজনকে থামিয়ে সতর্ক করতেও দেখা যায়। চাষাঢ়ায় কথা হয় জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মার্জিয়া সুলতানার সাথে। তিনি শহরের বেশ কয়েকটি মার্কেট ও সড়কে অভিযান পরিচালনা করেছেন বলে জানান। এই ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ নির্দেশে সাধারণ মানুষকে সতর্ক করতেই এই অভিযান। বিশেষ করে জেলার প্রবেশ ও বাহিরের পথগুলোতে বেশি নজর দেওয়া হচ্ছে। এই পথগুলো দিয়ে যাতে কেউ বের বা প্রবেশ করতে না পারে। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী দোকানপাট না খোলা এবং অপ্রয়োজনীয় চলাফেরা না করার বিষয়ে সকলকে অনুরোধ জানান মার্জিয়া সুলতানা।