নামাজ মুমিনের সবচেয়ে বড় ইবাদত। সুস্থ মস্তিষ্ক সম্পন্ন ও প্রাপ্ত বয়স্ক প্রতিটি মুসলমানের ওপর নামাজ ফরজ। প্রতি ওয়াক্ত নামাজ মুমিনের জন্য অত্যধিক গুরুত্বপূর্ণ। যেকোনো জায়গায় যাওয়া হোক— নামাজ কখনো ছেড়ে দেওয়া যায় না। সময় মতো প্রত্যেক মুমিনকে নামাজ আদয় করতে হয়।
নামাজ যেহেতু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত ও বন্দেগি, তাই নামাজে কিছু কাজ থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করতে হয়; না হলে নামাজ ভেঙে যায়। যেসব কারণে নামাজ ভেঙে যায়, সেগুলো এখানে সংক্ষিপ্ত পরিসরে উল্লেখ করা হলো।
♦ কোরআনের অর্থ ও উদ্দেশ্য সম্পূর্ণ পাল্টে যায়, এমন অশুদ্ধ করে নামাজে পড়লে— নামাজ ভেঙে যায়। (ফাতাওয়ায়ে শামি : ১/৬৩৩-৬৩৪)
♦ নামাজের ভেতর কথা বললে কিংবা এমন কোনো অর্থবোধক শব্দ করা, যা সাধারণ কথার অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। (ফাতাওয়ায়ে শামি : ১/৬১৩; আল বাহরুর রায়েক : ২/২)
♦ নামাজে থেকে কোনো লোককে সালাম দিলে নামাজ ভেঙে যায়। (ফাতাওয়ায়ে শামি : ২/৯২; আল-বাহরুর রায়েক : ২/১২০)
♦ নামাজে থেকে কারও সালামের উত্তর দিলেও নামাজ ভেঙে যায়। (বুখারি, হাদিস : ১২১৭)
♦ নামাজে উহ্-আহ্ শব্দ করলে নামাজ ভেঙে যায়। নামাজরত অবস্থায় কোনো ব্যথা কিংবা দুঃখের কারণে উহ্-আহ্ শব্দ করলে নামাজ ভেঙে যাবে। (আদ্দুররুল মুখতার : ১/৬১৯; আল-বাহরুর রায়েক : ২/৪)
♦ অপ্রয়োজনে কাশি দিলেও নামাজ ভেঙে যায়। (ফাতাওয়ায়ে শামি : ৩/৬১৮)
♦ কোনো মুসল্লি এমন কাজে লিপ্ত হলে নামাজ ভেঙে যাবে, যার কারণে দূর থেকে কেউ দেখলে— তার মনে প্রবল ধারণা জন্মে যে, ওই ব্যক্তি নামাজরত নয়। (ফাতাওয়ায়ে ফকীহুল মিল্লাত ৩/৪৮৫)
♦ দুনিয়াবি কোনো বিপদ-আপদ কিংবা দুঃখের কারণে শব্দ করে কাঁদলে— নামাজ ভেঙে যায়। (হাশিয়াতু তাহতাবি : ১/৩২৫; ফাতাওয়ায়ে শামি : ১/৬১৯
♦ নাভির নিচ থেকে হাঁটু পর্যন্ত শরীরের কোনো স্থান যদি তিন তাসবিহ পরিমাণ সময় অনাবৃত থাকে, তাহলে তার নামাজ ভেঙে যাবে। তাই শার্ট, গেঞ্জি ও প্যান্ট পরে নামাজ আদায়ের সময় সতর্ক থাকতে হবে। (ফাতওয়ায়ে শামি : ১/২৭৩)
♦ মুক্তাদি ছাড়া অন্য কারো লোকমা (ভুল সংশোধন) গ্রহণ করলে। (ফাতাওয়ায়ে আলগিরি : ১/৯৮)
♦ সুসংবাদ অথবা দুঃসংবাদের উত্তর দেওয়া দুনিয়াবি কথার শামিল, তাই এর দ্বারা নামাজ ভেঙে যাবে। (ফাতাওয়ায়ে শামি : ১/৬১৩)
♦ নামাজের জায়গা পবিত্র হওয়া জরুরি। নাপাক বা অপবিত্র জায়গায় সিজদা করলে নামাজ ভেঙে যাবে। (বাদায়েউস সানায়ি : ১/১১৫)
♦ কিবলার দিক থেকে সিনা (বুক) ঘুরে গেলে নামাজ ভেঙে যাবে। তবে যানবাহনে নামাজের ক্ষেত্রে মাসআলা ভিন্ন। (মারাকিল ফালাহ : ১/১২১)
♦ নামাজরত অবস্থায় কোরআন শরিফ দেখে দেখে পড়লে নামাজ ভেঙে যাবে। (মারাকিল ফালাহ : ১/১২৪) তবে সৌদি আরবের আলেমরা এ মাসআলার ক্ষেত্রে ভিন্নমত পোষণ করেন।
♦ নামাজে শব্দ করে অট্টহাসি দিলে— অজুসহ ভেঙে যাবে। পুনরায় নামাজ পড়তে চাইলে, আবার অজু করে তারপর নামাজ পড়তে হবে। (কানজুদ্দাকায়েক : ১/১৪০)
♦ নামাজরত অবস্থায় সাংসারিক/দুনিয়াবি কোনো দোয়া করলে— হানাফি মাজহাব মতে নামাজ ভেঙে যায়। (ফাতাওয়ায়ে শামি : ১/৬১৯)। তবে এ মাসআলার ক্ষেত্রে অন্য মাজহাবের ভিন্নমত রয়েছে।
♦ নামাজরত অবস্থায় কারো হাঁচির (জবাবে ইয়ারহামুকাল্লাহ বললে) উত্তর দেওয়া কথা বলার নামান্তর। এর দ্বারা নামাজ ভেঙে যায়। (ফাতাওয়ায়ে শামি : ২/১১৭)
♦ নামাজরত অবস্থায় কিছু খেলে বা পান করলে নামাজ ভেঙে যাবে। দাঁতের ফাঁকে আটকে থাকা খাবার নামাজরত অবস্থায় খেলেও নামাজ ভেঙে যাবে। (মারাকিল ফালাহ : ১/১২১)
♦ ইমামের আগে-সামনে মুক্তাদি দাঁড়ালে নামাজ ভেঙে যাবে। মুক্তাদির পায়ের গোড়ালি ইমামের আগে চলে গেলে নামাজ ভেঙে যাবে। তবে যদি (দুইজনের জামাতে নামাজের ক্ষেত্রে) মুক্তাদি ইমামের পায়ের গোড়ালির পেছনেই দাঁড়ায়; কিন্তু তিনি লম্বা হওয়ার কারণে তার সিজদা ইমাম সাহেবকে অতিক্রম করে যায়, তাহলে তাঁর নামাজের কোনো ক্ষতি হবে না। (বাদায়েউস সানায়ে : ১/১৫৯)