স্টাফ রিপোর্টারঃ নারায়ণগঞ্জ মহানগরীর সদর থানার কাদেরিয়া তৈয়্যবিয়া তাহেরিয়া মাদ্রাসা ও বন্দর থানার জামেয়া গাউসিয়া তৈয়্যবিয়া তাহেরিয়া মাদ্রাসার উদ্যোগে গাউসুল আজম, দস্তগীর আব্দুল কাদের জিলানী (রাদিঃ)’ ওফাৎ বার্ষিকীর মাহফিল হয়েছে।বন্দরে শনিবার, সদরে রোববার মাহফিল হয়েছে।
বন্দর থানার চিতাশাল এলাকায় অবস্হিত জামেয়া গাউসিয়া তৈয়্যবিয়া তাহেরিয়া মাদ্রাসা মাঠে ৫ নভেম্বর রাতে কমিটির সদস্য, বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব কাজী আবু জাফর টিপুর সভাপতিত্বে গাউসুল আজম দস্তগীর, মাহবুবে সুবহানী, কুতুবে রাব্বানী,আব্দুল কাদের জিলানী( রাদিঃ) ‘ র ওফাৎ বার্ষিকীর মাহফিল হয়। মাহফিলে প্রধান আলোচক ছিলেন মাদ্রাসা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মাওলানা আব্দুল মোস্তফা রাহিম আলআযহারী। মাদ্রাসার সুপারিন্টেন্ডেন্ট মাওলানা আবু নাসের মুসা, সহ সুপার মাওলানা আব্বাস উদ্দীন বক্তব্য রাখেন। মাহফিলে মাদ্রাসা কমিটির সদস্য মেঃ আবু সাঈদ কাদেরী ও মোঃহারুন শেখ এবং সোহান, গাউসিয়া কমিটির মোঃ শাহাবুদ্দিন পাঠান,মেঃ আসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।প্রধান আলোচক মাওলানা আব্দুল মোস্তফা রাহিম আলআযহারী বলেন, গাউসুল আজম আব্দুল কাদের জিলানী (রাদিঃ) সৈয়্যদজাদা।তিনি কঠিন বিপদেও কারো নিকট চেয়ে খান নি, মিথ্যা কথা বলেন নি।তিনি জিলান থেকে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করতে বোগদাদ যাচ্ছিলেন।পাহাড়ের ফাঁকা স্হানে ডাকাতের কবলে পরেন।ডাকাতরা ওনাকে ভয় দেখিয়ে বললোঃ যা আছে দিয়ে দাও।গাউসে পাক বললেন,আমার নিকট ৪০টি স্বর্নমুদ্রা আছে।ডাকাতরা তখন একজন অপরজনের সাথে বলাবলি করছিলো যে, ” এই কিশোরকে আমরা ধনসম্পদ বহনকারী মনে করিনি।অথচ সে সত্য না বলে মিথ্যাটাও বলতে পারতো।আমরা তাকে ছেড়ে দিতাম। কিন্তু সে সত্যটা বলে দিলো।ডাকাতরা আবার গাউসে পাককে প্রশ্ন করলোঃতুমি কেন স্বর্নমুদ্রার লোভ ভূলে সত্য কথা বললে? গাউসে পাক উত্তরে বললোঃ আমি সত্য না’ কি মিথ্যা বলছি–তা আল্লাহ পাক দেখছেন।আমার আম্মাজান আমাকে কঠিন বিপদেও সত্য বলতে শিখিয়েছেন। আমার নিকট স্বর্ণমুদ্রা দামী না-আমার আল্লাহর দৃষ্টি ও আমার মায়ের আদেশ বড়।গাউসে পাকের সেই খোদাপ্রীতি ও মায়ের আদেশের একাগ্রতা দেখে ডাকাতরা পরামর্শ করতে বসলো।ডাকাতরা সিদ্ধান্ত নিলো–এই কিশোরের কথা ঠিক।আল্লাহ আমাদের অপরাধও দেখছেন।আমরা আজ থেকে ডাকাতি করবো না।সেখানে তখন গাউসে পাকের নিকট তওবা এবং পবিত্র কালেমা তৈয়্যবা ” লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ “( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পাঠ করে ডাকাতরা মুসলমান হয়ে গেছেন।একই সাথে তখন সকল ডাকাত আল্লাহর ওলী হয়ে গেছেন।মাওলানা আব্দুল মোস্তফা রাহিম আলআযহারী বলেন,
গাউসে পাকের আম্মাজান উম্মুল খায়ের মা ফাতিমা(রাদিঃ)বনেদী এক লোকের মাধ্যমে সন্তান আব্দুল কাদেরের জন্য ১০ টি স্বর্ণমুদ্রা বোগদাদ শরীফে পাঠান।ওই লোক বহু দিন খুজেও গাউসে পাককে পাচ্ছিলেন না।এরই মধ্যে ওই বনেদী লোকের নিজের সম্পূর্ন টাকা ব্যয় হয়ে গেছে।লোকটি এ প্রথম গাউসে পাকের আম্মাজান প্রদেয় স্বর্ণমুদ্রার একটি বিক্রি করে আংশিক টাকা দিয়ে খাবার কিনে খেতে বসছেন।সেখানে তখন কাকতালীয় ভাবে গাউসে পাক দাঁড়ন এবং ক্ষুধার কারনে ওই লোকের খাবারের দিকে তাকান।লোকটি গাউসে পাককে খাবার খেতে বেশ ক ‘ বার ডাকেন।গাউসে পাক প্রতি বারই না জবাব দেন।লোকটি এক পর্যায়ে বলেনঃ আপনি কি জিলান শহরের আব্দুল কাদেরকে চেনেন? গাউসে পাক ওই লোককে উল্টো প্রশ্ন করেনঃ কেন, তাকে আপনার কি প্রয়োজন? তখন লোকটি গাউসে পাকের আম্মাজানের স্বর্নমুদ্রা প্রদানের ঘটনা বলেন।গাউসে পাক তখন বলেনঃ আমিই আব্দুল কাদের জিলানী। মাওলানা আব্দুল মোস্তফা রাহিম আলআযহারী আরো বলেন, গাউসুল আজম আব্দুল কাদের জিলানী( রাদিঃ) দুনিয়ার সকল ওলীগনের ইমাম।ওনার বেলায়েতের সামনে সকল ওলীগন আস্হাশীল হয়েছেন।গাউসে পাক মাশরিক থেকে মাগরিব পর্যন্ত সকল স্হানে সহিহ মুরীদ ও ভক্তের বিপদে আশ্রয়দাতা হয়ে হাজির হন।
সদর থানার ডিআইটি পুরাতন জিমখানা এলাকায় অবস্হিত কাদেরিয়া তৈয়্যবিয়া তাহেরিয়া মাদ্রাসা মিলনায়তনে ৬ নভেম্বর রাতে গাউসুল আজম, শেখ মহিউদ্দিন, আব্দুল কাদের জিলানী (রাদিঃ) ‘ র ওফাৎ বার্ষিকীর মাহফিল হয়। মহানগর গাউসিয়া কমিটির সভাপতি ও নাসিক ওয়ার্ড কাউন্সিলর আলহাজ্ব মোখলেসুর রহমান চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রধান আলোচক ছিলেন ঢাকা কাদেরিয়া তৈয়্যবিয়া কামিল মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ আল্লামা আবুল কাশেম মোহাম্মদ ফজলুল হক। মাহফিলে বিশেষ অতিথি ছিলেন মাদ্রাসা কমিটির সভাপতি কৃষিবিদ আলহাজ্ব নুরুজ্জামান, ঢাকা মহানগর গাউসিয়া কমিটির সভাপতি আলহাজ্ব আব্দুল মালেক বুলবুল, যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হোসাইন।মাহফিলে বক্তব্য রাখেন মাওলানা আবু নাসের মুসা, মাওলানা মাঈনুল হাসান, মাওলানা আব্বাসউদ্দীন, হাফেজ হাবীবুর রহমান,মাদ্রাসা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মুহাম্মদ মোবারক হোসেন।মাহফিলে মাদ্রাসা কমিটির ইসমাইল হোসেন, সানোয়ার হোসেন সানা,গোলাম মোস্তফা খোকা,আবুল হোসেন, মনোয়ার হোসেন শোখন,গাউসিয়া কমিটির বীর মুক্তিযোদ্ধা মনির হোসেন,বীর মুক্তিযোদ্ধা শের মোহাম্মদ,মোঃ আবু সাঈদ কাদেরী,মীর ওমর ফারুক প্রমুখ অংশ নেন।
প্রধান আলোচক মাওলানা আবুল কাশেম ফজলুল হক বলেন,গাউসে পাক আব্দুল কাদের জিলানী( রাদিঃ) যখন আবু সালেহ মুসা জঙ্গী(রাদিঃ) ‘র প্রিয়তমা স্ত্রী উম্মুল খায়ের মা ফাতিমা (রাদিঃ)’ র গর্ভ থেকে জন্মগ্রহন করেন–তখন ঘড়ি ছিলো না।ক্যালেন্ডার কিংবা পুন্জিকা ছিলো না।তখন চন্দ্র-সূর্য অনুস্মরন করে ইবাদত করতে হতো।শাবান মাসের ২৯ তারিখ দিবাগত রাতে আকাশ অস্বাভাবিক ছিলো।নতুন চাঁদ উদিত হতে কেউ দেখেন নি।ওই সন্দ্যারাতে গাউসে পাক জন্ম গ্রহন করে অনাহার থাকা শুরু করেন।এ খবর দ্রূত গতিতে ছড়িয়ে যায়।ওই অঞ্চলের মুসলমানেরা শিশু গাউসে পাকের অনাহারকে সিয়াম শুরু মনে করে পরের দিন রমজান মাস গননা ও মাস ব্যাপি সিয়াম সাধনা শুরু করেন।মাওলানা আবুল কাশেম ফজলুল হক বলেন, গাউসে পাক “দস্তগীর” লকব বহন করেছেন।ওনাকে আল্লাহ পাক সেই ক্ষমতা দিয়েছেন। গাউসে পাক দুনিয়ার সূর্য উদয় থেকে অস্ত পর্যন্ত সকল স্হানে সহিহ মুরীদ ও ভক্তকে পরিত্রান দেন।শুধু তাই নয়,হাশরের ময়দানেও তিনি সহিহ মুরীদ,ভক্তকে জান্নাতে নিয়ে যাবেন।গাউসে পাক ওলীকূল সম্রাট।তিনি এমন একজন গাউস, এমন একজন দস্তগীর–ওনার পর ওনার সম কোন ওলী জন্মাবে না।মাওলানা আবুল কাশেম ফজলুল হক বলেন,গাউসে পাক এমন একজন ওলী–যিনি হাজার বছর আগে জন্মালেও পুরো দুনিয়াবাসী এখনো ভুলেনি,বরং প্রতি মুহুর্তে স্মরন করছে।
সদর ও বন্দরের মাহফিলে বক্তব্য শেষে মিলাদ-কিয়াম এবং মুনাজাতের মুসলিম উম্মাহ,দেশ- জাতির কল্যান কামনা করা হয়।