নরসিংদী জেলা কারাগার থেকে পলাতক আনসার আল ইসলাম এর সক্রিয় জঙ্গি সদস্য মোঃ ফারুক আহমেদকে (৪৩) নারায়ণগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করেছে র্যাব।
বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) দুপুরে র্যাব-১১ এর সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য নিশ্চিত করেন র্যাব-১১ এর অধিনায়ক (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্ণেল তানভীর মাহমুদ পাশা।
এর আগে বুধবার (২৪ জুলাই) সোনারগাঁয়ের প্রেমের বাজার এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃত ফারুক আহমেদ নরসিংদীর মাধবদীর নুরালাপুরের মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব জানায়, শিক্ষার্থীদের কোটা পদ্ধতি সংস্কার আন্দোলন চলাকালে গত ১৯ জুলাই হাজার হাজার মানুষ মিছিল নিয়ে নরসিংদী জেলা কারাগারে হামলা-অগ্নিসংযোগ করে ভিতরে ঢুকে সেলের তালা ভেঙে ফেলে, যার ফলশ্রুতিতে ৯ জঙ্গিসহ মোট ৮২৬ কয়েদী পালিয়ে যায়। এসময় অস্ত্র, গোলাবারুদ ও খাদ্যপণ্য লুট এবং ব্যাপক ভাংচুর করে হামলাকারীরা। প্রাথমিকভাবে কারা-কর্তৃপক্ষ ও রক্ষীরা দুষ্কৃতিকারীদের প্রতিহত করার চেষ্টা করলেও অবস্থা বেগতিক দেখে পিছু হটতে বাধ্য হয়। এরই ধারাবাহিকতায় র্যাব-১১ এর একটি চৌকস আভিযানিক দল অভিযান পরিচালনা করে প্রেমের বাজার এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে।
গ্রেফতারকৃত আসামি নুরালাপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দপ্তরি হিসেবে ২০১৩ সালে নিয়োগ প্রাপ্ত হয় এবং উক্ত পদে চাকুরীরত থাকা অবস্থায় জঙ্গীবাদ এর সঙ্গে লিপ্ত থাকার অপরাধে র্যাব-৯ সিলেট তাকে ২০২২ সালের ২৪ মার্চ গ্রেফতার করে সন্ত্রাস বিরোধী আইনে থানায় একটি এজাহার দায়ের করেন। পরে বিজ্ঞ আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করে নরসিংদী জেলা কারাগারে প্রেরণ করে। গত ২৮ মাস যাবৎ গ্রেফতারকৃত আসামী নরসিংদী জেলা কারাগারে কারাবন্দী অবস্থায় ছিলেন। গ্রেফতারকৃত আসামী ফারুক কারাগারের ৪নং সেলে থাকতো এবং তার সঙ্গে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের আরও তিনজন জঙ্গি সদস্য হিজবুল্লাহ, আব্দুল আলীম এবং মইনুদ্দিন একই সেলে থাকতো।
র্যাব আরও জানায়, নরসিংদী জেলা কারাগারে বিকেল ৪টা থেকে ৫ টা পর্যন্ত প্রতিদিনের ন্যায় এক ঘন্টা কয়েদীদের কারাগারের ভিতরে চিত্তবিনোদনের জন্য সময় দেয়া হয়। গত ১৯ জুলাই গ্রেফতারকৃত আসামিসহ সকলে নিজ নিজ সেল থেকে বের হয়ে কারাগারের অভ্যন্তরে হাটাচলা করছিল। আনুমানিক সাড়ে ৪ টায় কারাগারের সামনে হাজারো জনতা উপস্থিত হয়। এসময় উত্তেজিত জনতা কারারগারে লক্ষ্য করে প্রথমে ইট-পাটকেল এবং পরবর্তীতে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে। হামলাকারীদের প্রায় সবার হাতে লাঠিসোটা, দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র ও আগ্নেয়াস্ত্র ছিল।
প্রাথমিকভাবে কারারক্ষীরা তাদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করে। বেশ কিছুক্ষণ ধরে তাদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। কিন্তু একপর্যায়ে কারারক্ষীরা পিছু হটে। তখন হামলাকারীরা কারাগারের দুই দিকের ফটক অনেকটা ভেঙ্গে ভিতরে ঢুকে পড়ে এবং অগ্নিসংযোগ করে। এসময় হামলায় চার কারারক্ষী গুরুতর আহত হয়। পরবর্তীতে কারারক্ষীরা নিরুপায় হয়ে জেলখানার ভিতরে ঢুকে নিজেদের রক্ষা করে। হামলাকারীরা মূল কারাগারের ভিতরে ঢুকে সেলগুলো শাবল ও লোহার জিনিসপত্র দিয়ে ভেঙ্গে কয়েদীদের পালিয়ে যেতে সাহায্য করে। কিছু কারারক্ষীর কাছ থেকে চাবি নিয়েও সেলে তালা খোলা হয়।
কারারক্ষীরা পিছু হটার পর অস্ত্র ভান্ডার ভেঙ্গে মোট ৮৫টি অস্ত্র এবং আনুমানিক ৮ হাজার গুলি লুট করে হামলাকারীরা। কারাগারে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ এবং তান্ডব চলাকালীন সময়ে সুযোগ বুঝে গ্রেফতারকৃত আসামী আনসার আল ইসলাম এর জঙ্গি সদস্য মোঃ ফারুক আহমেদ (৪৩) এবং তার সঙ্গে থাকা হিজবুল্লাহ কারাগার হতে একই সাথে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃত আসামী গত ২০ জুলাই তার বোনের বাসা ঢাকায় দুদিন এরপর গত জুলাই সোনারগাঁয়ের প্রেমের বাজার এলাকায় তার এক আত্মীয়ের বাসায় আত্মগোপন করে।
গ্রেফতারকৃত আসামির বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান তিনি।