মুমিন মানেই ধৈর্যশীল। ধৈর্য মানব হৃদয়ে ফাগুনের সুশীতল হাওয়ার মতো। যার স্নিগ্ধ ছোয়ায় মুহূর্তেই মিলিয়ে যায় সব কষ্ট ও ব্যর্থতার গ্লানি। ধৈর্য যেন অনেকটা সাগরের ঢেউয়ের মতো; যার বহমান ধারা নীরবেই মুছে দেয় সব অপ্রাপ্তির ক্লান্তি। ধৈর্যশীল ব্যক্তির বচন এমন, ‘আমাদের আল্লাহর ওপর ভরসা না করার কী কারণ থাকতে পারে, অথচ তিনি আমাদেরকে আমাদের পথ বলে দিয়েছেন। তোমরা আমাদেরকে যে পীড়ন করেছ, তজ্জন্যে আমরা সবর করব। ভরসাকারীদের আল্লাহর ওপরই ভরসা করা উচিত।’ (সূরা : ইব্রাহিম-১২।) ধৈর্যশীল ব্যক্তি সর্বদা আল্লাহতাআলার স্মরণে নিজের কলবকে ব্যস্ত রাখে।
আল্লাহ রাসূল (সা.)কে আদেশ দিয়ে বলেছেন, ‘আপনি নিজেকে তাদের সংসর্গে আবদ্ধ রাখুন যারা সকাল ও সন্ধ্যায় তাদের পালনকর্তাকে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে আহ্বান করে এবং আপনি পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য কামনা করে তাদের থেকে নিজের দৃষ্টি ফিরিয়ে নেবেন না। যার মনকে আমার স্মরণ থেকে গাফেল করে দিয়েছি যে, নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে এবং যার কার্যকলাপ হচ্ছে সীমা অতিক্রম করা, আপনি তার অনুগত্য করবেন না।’ (সূরা কাহাফ : ২৮।)
মুসলিম মানেই জিহাদের সম্মুখ সারি। জিহাদই তার রক্তের ধারা। আর এ ধৈর্য মুমিনের এমন এক অস্ত্র, যা তাকে সরাসরি জিহাদ করায়। কারণ অন্যের সঙ্গে যুদ্ধ করার থেকে নিজের নফসের সঙ্গে যুদ্ধ করা সবচেয়ে বেশি কঠিন। নফসের সঙ্গে যুদ্ধ করা মানে নিজের সঙ্গে নিজেই লড়াই করা। নফসের সঙ্গে যুদ্ধ করা যে কতটা কঠিন তা সুফিয়ান সাওরি (রহ.)-এর একটি উক্তি থেকে বোঝা যায়। তিনি বলেন, ‘কোনো কিছুকে সংশোধন করতে আমার এত বেশি সংগ্রাম করতে হয়নি, আমার আত্মাকে (নফস) বশ করতে আমার যত বেশি কঠিন লেগেছে; কখনো আমি জয়ী হই, কখনো হই পরাজিত।’
নফসের সঙ্গে যুদ্ধ করার অনেক শাখা আছে। ক. সালাতে অলসতা পরিত্যাগ করার চেষ্টা করা। খ. জিকিরে নিজেকে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করা। গ. রিয়াকে প্রতিহত করার চেষ্টা করা। ঘ. হিংসা থেকে নিজেকে হিফাজত করার চেষ্টা করা। ঙ. নিজেকে জিনা থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করা ইত্যাদি। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে সরাসরি জিহাদের ময়দানেও এ ধৈর্য নামক গুণটি অত্যন্ত প্রয়োজন। কারণ যুদ্ধের ময়দানে মাথা ঠান্ডা অনেকটা পাথরের ওপর খোদাই করার মতো।
কুরআন মাজিদে এরশাদ হচ্ছে, ‘অতএব, আপনি আপনার পালনকর্তার আদেশের জন্য ধৈর্যসহকারে অপেক্ষা করুন এবং ওদের মধ্যকার কোনো পাপীষ্ঠ কাফেরের আনুগত্য করবেন না।’ (সূরা : আদ-দাহ্’র-২৪।) এ আয়াতটি এমন এক সময় নাজিল হয়, যখন রাসূল (সা.)কে দুনিয়ায় ক্ষমতা, সম্পদ এবং ললনার লোভ দেখানো হচ্ছিল। এর থেকে বড় জিহাদ আর কী হতে পারে!
বদর, ওহুদ, খন্দকের যুদ্ধগুলো ছিল মুমিনদের জন্য সবচেয়ে বড় ধৈর্যের পরীক্ষা। উহুদের যুদ্ধে ধৈর্যের অভাব মুসলমানদের একটা বড় শিক্ষা দিয়েছে। আমরা আরও একটু এগিয়ে দেখি তাবুক অভিযানের দিকে। যেখানে জয়ী হওয়ার নিশ্চিত আশা মুমিনদের ধৈর্যহীন করে ফেলেছিল। এ জন্যই বলা যায় ধৈর্য একজন মুমিনের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। আর ধৈর্যশীল ব্যক্তি সর্বদা আল্লাহতায়ালার সান্নিধ্য পায়। মহান আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘আজ আমি তাদেরকে তাদের সবরের কারণে এমন প্রতিদান দিয়েছি যে, তারাই সফলকাম।’ (সূরা : আল-মু’মিনুন-১১১।) অতএব, উত্তম প্রতিদান একমাত্র ধৈর্যশীল ব্যক্তির জন্যই নির্ধারিত ইনশাআল্লাহ।