বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:৫৩ অপরাহ্ন

দেশে ৫০ হাজারেরও বেশি অবৈধ বিদেশির অর্ধেকই ভারতের

  • আপডেট সময় সোমবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১০.১৭ এএম
  • ১১ বার পড়া হয়েছে

আইনি দুর্বলতা ও বিদেশি নাগরিকদের সমন্বিত কোনো তথ্যভাণ্ডার না থাকায় বিনা বাধায় বাংলাদেশে বসবাসের সুযোগ পাচ্ছেন অবৈধ বিদেশিরা। তবে দেশে বর্তমানে কতজন বিদেশি নাগরিক বৈধ ও অবৈধভাবে অবস্থান করছেন তার হালনাগাদ সঠিক কোনো তথ্য নেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে।

তবে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ ও সুরক্ষা সেবা বিভাগের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে অবস্থানরত বৈধ বিদেশি নাগরিকের সংখ্যা ১ লাখ ৭ হাজার ১৬৭ জন। আর ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর অবৈধভাবে বসবাস করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করছে ৫০ হাজারেরও বেশি বিদেশি, যার মধ্যে অর্ধেকই ভারতের। যদিও বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার হিসাবে বৈধ ও অবৈধ বিদেশির এই সংখ্যা কয়েক লাখ হবে। অন্তর্বর্তী সরকার অবৈধভাবে অবস্থানরত বিদেশিদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রোববার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে অবৈধভাবে বাংলাদেশে অবস্থান করা বিদেশি নাগরিকদের অবিলম্বে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ বৈধতা অর্জনের জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।

অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নিয়োজিত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. খোদা বখস চৌধুরী।

সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী দেশে অবস্থানরত বৈধ নাগরিকদের মধ্যে ভারতীয় নাগরিক ৩৭ হাজার ৪৬৪ জন, যা অন্যান্য দেশের তুলনায় সবচেয়ে বেশি। ভারতের পরে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে চীন। দেশে চীনা নাগরিকের সংখ্যা ১১ হাজার ৪০৪ জন। ১৬৯টি দেশের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ অবৈধভাবে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন, যাদের পাসপোর্ট ও ভিসার মেয়াদ অনেক আগেই উত্তীর্ণ হয়েছে। এর মধ্যে ভারতের প্রায় ২৪ হাজার এবং চীনের ৮ হাজার নাগরিক অবৈধভাবে অবস্থান করছেন। আর পাকিস্তানের রয়েছে প্রায় দুই হাজার। উন্নত রাষ্ট্র কানাডা, আমেরিকা, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, রাশিয়া ও থাইল্যান্ডের নাগরিকরাও অবৈধভাবে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন বলে জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ।

এই অবৈধ বিদেশিদের অনেকেই মাদক ব্যবসা, উপহারের নামে প্রতারণা, হেরোইন, ব্যাংকের এটিএম বুথে জালিয়াতি, বিভিন্ন দেশের জাল মুদ্রার কারবার, অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা, সোনা চোরাচালান, অনলাইনে ক্যাসিনো এবং মানব পাচারসহ সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের সঙ্গে জড়িত। আবার কেউ কেউ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন এবং কর ফাঁকি দিয়ে উপার্জিত অর্থ হুন্ডির মাধ্যমে নিজের দেশে পাচার করে নিয়ে যান বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান।

সুরক্ষা সেবা বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, সবচেয়ে বেশিসংখ্যক বিদেশি কর্মী কাজ করেন দেশের পোশাক ও টেক্সটাইল খাতে। এ ছাড়া বিভিন্ন সরকারি উন্নয়ন প্রকল্প, বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র, আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থা, হোটেল ও রেস্তোরাঁয় অনেক বিদেশি কর্মরত রয়েছেন। কাজের অনুমতি না থাকলেও বিজনেস ভিসায় এসে অনেকে বেআইনিভাবে দেশের বিভিন্ন কোম্পানিতে চাকরি নেন। এ ধরনের ভিসায় সবচেয়ে বেশি আসেন চীনের নাগরিকরা। বিভিন্ন প্রকল্প এবং চীনা নাগরিকদের বিনিয়োগ করা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে তারা কাজ করেন। এ ছাড়া ভারতের অনেকে ভ্রমণ ভিসায় এসেও এখানে নানা কাজ বা চাকরিতে যুক্ত হন বলেও অভিযোগ রয়েছে। অনেকে অবৈধভাবে বাংলাদেশে কাজ করে টাকা নিয়ে যান।

বাংলাদেশের ভিসা নীতিমালা অনুযায়ী ইউরোপের সব দেশ এবং যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, চীন, জাপান, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, আরব আমিরাত, সৌদি আরব, কাতার, কুয়েত, ওমান, বাহরাইন, মিসর, ব্রুনেই ও তুরস্ক ছাড়াও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের ১৩টি দেশের নাগরিকরা অন অ্যারাইভাল ভিসা পেয়ে থাকেন। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, এই অন অ্যারাইভাল ভিসা পাওয়া অধিকাংশ দেশেরই কোনো না কোনো নাগরিক অবৈধভাবে বাংলাদেশে অবস্থান করেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দক্ষিণ কোরিয়ার, বর্তমানে যার সংখ্যা ১২১৫ জন।

অবৈধভাবে অবস্থানকারী বিদেশিদের গ্রেফতার ও নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে কিছু সীমাবদ্ধতার কথা উল্লেখ করে সুরক্ষা সেবা বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা জানান, বিদেশিদের আটক রাখার মতো কোনো ডিটেনশন সেন্টার নেই। তাদের কারাগারে রাখতে হলে মামলা দিতে হয়। সেটা সময় ও অর্থসাপেক্ষ হওয়ায় অনেক সময় বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া হয়। তাছাড়া আটক অবৈধ বিদেশি নাগরিকদের কাছে পাসপোর্ট থাকে না। অনেক সময় তারা ইচ্ছা করে পাসপোর্ট গোপন করেন বা ফেলে দেন। এ অবস্থায় এই বিদেশি নাগরিকদের ফেরত পাঠানোর আগে নাগরিকত্ব নির্ধারণের প্রয়োজন হয়, যা সময়সাপেক্ষ। আবার অনেক দেশের দূতাবাস ঢাকায় নেই। এমন দেশ থেকে আসা ব্যক্তিদের নাগরিকত্ব যাচাই করা আরও বেশি জটিল। অন্যদিকে অবৈধভাবে অবস্থানকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করলে তারা মামলার অজুহাতেও এ দেশে থেকে যান।

অভিবাসন খাতের সংশ্লিষ্টরা জানান, অবৈধভাবে কোনো বিদেশি বাংলাদেশে অবস্থান করলে এবং অপরাধের সঙ্গে জড়িত হলে অবশ্যই বিদ্যমান আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তবে এসব অবৈধ বিদেশি যে সব সেক্টরে কাজ করছে সেসব সেক্টরে আমাদের নিজস্ব দক্ষ লোকের অভাব থাকলে সে ক্ষেত্রে আমাদের দক্ষ জনবল তৈরি করার দিকে নজর দিতে হবে। দেশে বৈধভাবে যে সব বিদেশি কাজ করছেন, তারাও সঠিক ভিসায় অবস্থান করছেন কি না, সেটাও নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে দেশ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

উদাহরণ হিসেবে তারা বলেন, ভারতে রেমিট্যান্স পাঠানো দেশগুলোর প্রথম পাঁচটির মধ্যে বাংলাদেশ রয়েছে। সে অনুযায়ী বৈধ ও অবৈধভাবে বাংলাদেশে অবস্থানরত ভারতীয়দের সংখ্যার সামঞ্জস্য আছে কি না এবং তারা যে কর দিচ্ছেন, সেটা ঠিক আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা উচিত। একই পদক্ষেপ অন্যান্য দেশের অবৈধ নাগরিকদের ক্ষেত্রেও নিতে হবে।

সুরক্ষা সেবা বিভাগের সেবা বিভাগের একজন যুগ্ম সচিব জানান, অবৈধ বিদেশিদের শনাক্ত করে নিজ নিজ দেশে প্রত্যাবর্তন করার কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া অবৈধ বিদেশিদের অপরাধের ধরন ও মাত্রা অনুযায়ী তাদের স্টপ লিস্ট ও ব্ল্যাক লিস্ট করা, অবৈধদের শনাক্ত করে আইন ও বিধি অনুযায়ী জরিমানা আদায় ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করার কার্যক্রম চলমান। যে সব অবৈধ বিদেশি বিভিন্ন কাজ ও ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থেকে অর্থ উপার্জন করেন তাদের উপার্জনকে করের আওতায় আনার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়।

এ বিষয়ে রোববার স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, কোনো বিদেশি নাগরিককে অবৈধভাবে বাংলাদেশে থাকতে দেওয়া হবে না।
কোনো দেশের নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেন, অনেক দেশের নাগরিকই অবৈধভাবে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন বলে তথ্য রয়েছে।

তবে কত বিদেশি এখন বাংলাদেশে অবস্থান করছেন, সেই তথ্য তার কাছে নেই বলেও জানান তিনি।
কত সময়ের মধ্যে অবৈধ বিদেশিদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, তালিকাটা পাওয়ার পর কত দিনের মধ্যে ফেরত পাঠানো যাবে তা বলা যাবে।

এর আগে গতকাল সকালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নিয়োজিত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. খোদা বখস চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বিভিন্ন সূত্রে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে যে, অনেক ভিনদেশি নাগরিক অবৈধভাবে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন এবং অবৈধভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছেন। যেসব বিদেশি নাগরিক অবৈধভাবে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন বা কর্মরত আছেন, তাদের অবিলম্বে বাংলাদেশে অবস্থানের বা কর্মরত থাকার প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ বৈধতা অর্জনের জন্য অনুরোধ করা হলো। অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এর আগে গত ২৮ মে দেশে অবস্থানরত বৈধ ও অবৈধ বিদেশি কর্মীদের প্রকৃত সংখ্যা অনুসন্ধানের মাধ্যমে নিরূপণ করতে নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। এসব বিদেশি কর্মী কীভাবে ও কোন চ্যানেলের মাধ্যমে তাদের অর্থ দেশের বাইরে পাঠান, সে বিষয়েও অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved © 2021 rudrabarta24.net
Theme Developed BY ThemesBazar.Com

sakarya bayan escort escort adapazarı Eskişehir escort