দুপুরে পেটপুরে খাওয়ার পর শরীর চায় সাময়িক বিশ্রাম। হাত-পা ছড়িয়ে অলস বিছানায় কিছুক্ষণ জিরিয়ে নেওয়ার বায়না ধরে মন। সুযোগ বুঝে টুপ করে ঘুমিয়ে পড়া আর এক ঘুমে অন্তত এক ঘণ্টা পার। এমনটা কি আপনার সঙ্গে ঘটে থাকে? অবশ্য এই দলে আপনি একা নন, আছেন অনেকেই। দুপুরে খাওয়ার পরে ঘুম পাওয়ার কারণ আসলে কী?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আমরা যখন প্রয়োজনের তুলনায় বেশি খেয়ে ফেলি তখন আমাদের শরীরে ওঠানামা করে ইনসুলিনের মাত্রা। যে ধরনের খাবারই খাওয়া হোক না কেন, খাওয়ার পরপরই রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণের জন্য আমাদের প্যানক্রিয়াস ইনসুলিন তৈরির কাজে লেগে যায়। যখন আমরা বেশি খাই তখন প্যানক্রিয়াসও বেশি ইনসুলিন উৎপন্ন করে। এর ফলে শরীরে তৈরি হয় ঘুমের হরমোন। এই হরমোন মস্তিষ্কে যাওয়ার পর বিপাক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মেলাটোনিন ও সেরোটোনিনে পরিণত হয়। মেলাটোনিন হলো ঘুমের হরমোন।
আমাদের প্রতিদিনের কাজগুলো করার জন্য শক্তির প্রয়োজন। এমনকী নিঃশ্বাস নিতে এবং ছাড়তেও ব্যয় হয় শক্তি। এই শক্তি আমরা পাই খাদ্য থেকে। শরীরের হজম ব্যবস্থা আমাদের গ্রহণকৃত খাবারকে ভেঙে গ্লুকোজে রূপান্তর করে। প্রোটিনের মতো পুষ্টিকর খাবার আমাদের শরীরে ক্যালোরি জোগায় যা থেকে আমরা শক্তি পাই।
আমরা যখন উচ্চ কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার খাই তখন তা হজম করতে অনেক বেশি শক্তি খরচ করতে হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, বেশি ভারী খাবার খেলে তা হজম করার জন্য ব্যবহার করতে হবে শরীরের ৬০ থেকে ৭৫ ভাগ শক্তি। এই শক্তি ক্ষয়ের কারণে আমাদের ঘুম পেতে থাকে। শুধু উচ্চ কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবারের ক্ষেত্রেই নয়, প্রোটিন জাতীয় খাবার খেলেও এমনটা ঘটে থাকে। জেনে নিন দুপুরের খাবারের পরে ঘুম এড়িয়ে চলতে কী করবেন-
ভারী খাবার নয়
দুপুরের খাবার শেষে ক্লান্তি জেঁকে ধরার এবং ঘুম পাওয়ার অন্যতম কারণ হলো ভারী খাবার। অনেক সময় অতিরিক্ত খাবারের কারণেও এমনটা হতে পারে। ক্ষুধার্ত অবস্থায় সামনে যা পান তাই খেয়ে নেবেন না। খাবারের ক্ষেত্রে বাছ-বিচার করে খান। বাদ দিন জাঙ্ক ফুড। এর কারণ হলো আপনি যদি ভারী খাবার খান, তাহলে শরীরকে তা হজম করার জন্য আরও বেশি শক্তি ব্যয় করতে হবে। যে কারণে আপনি ক্লান্ত হয়ে পড়বেন এবং আপনার ঘুম পেতে থাকবে।
যে ধরনের খাবার খেলে ঘুম আসে
খাবারের তালিকায় চর্বি ও প্রোটিন জাতীয় খাবার থাকলে তা আপনাকে ভোগাবে। এ ধরনের খাবার ভাঙতে শরীরের ব্যয় করতে হয় অধিক শক্তি। তাই দুপুরে এ ধরনের খাবার খুব বেশি খাবেন না। খাবারের তালিকা ছোট করুন, খান হালকা ধরনের খাবার। এতে ঘুম ঘুম ভাব অনেকটাই দূর হবে। এরপরও ক্লান্ত লাগলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন।
পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব
রাতে ঘুম ভালো না হলে দিনের বেলা ঘুম পাওয়া স্বাভাবিক। দুপুরে ঘুম পাওয়ার হতে পারে এটিও একটি কারণ। তাই আপনার রুটিনের দিকে মনোযোগ দিন। রাতে পর্যাপ্ত ঘুমের ব্যবস্থা করুন। একজন প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তির জন্য দিন সাত-আট ঘণ্টা ঘুম জরুরি। ভালো খাবারের পাশাপাশি খেয়াল রাখুন ভালো ঘুমের দিকেও।
শরীরচর্চায় মন দিন
নিয়মিত শরীরচর্চার অনেকগুলো উপকারিতা রয়েছে। এটি শরীরে শক্তি বাড়ায় এবং দূর করে ক্লান্তি। এটি সতেজ থাকতে সাহায্য করে। সেইসঙ্গে ঠিক রাখে ঘুমের রুটিনও। তাই ক্লান্তিভাব কাটাতে নিয়মিত শরীরচর্চায় মন দিন।