মুন্সীগঞ্জে ত্রিভুজ প্রেমের জেরে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে স্কুলছাত্রী জেসিকা মাহমুদ জেসি (১৬)। তার প্রেমিক বিজয় রহমান (২২) ও বিজয়ের আরেক প্রেমিকা আদিবা আক্তার (১৯) মিলে জেসিকে হত্যা করেছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এ ঘটনায় বুধবার (০৪ জানুয়ারি) বিকালে আদিবাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃত আদিবা মুন্সীগঞ্জের পঞ্চসার ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি ও ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য জাহিদুল ইসলামের মেয়ে। অভিযুক্ত
বিজয় রহমান মুন্সীগঞ্জ শহর ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ও সাবেক জেলা পরিষদ সদস্য আরিফুর রহমানের ছেলে।
একই দিন সন্ধ্যায় বিজয় ও আদিবার নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত দুই-তিন জনকে আসামি করে সদর থানায় হত্যা মামলা করেন জেসির বড় ভাই জিদান মাহমুদ। নিহত জেসি শহরের কোর্টগাঁও এলাকার সৌদিপ্রবাসী সেলিম মাহমুদের মেয়ে। এ বছর স্থানীয় আলবার্ট ভিক্টোরিয়া যতীন্দ্র মোহন সরকারি বালিকা বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা ছিল জেসির। শহরের কোর্টগাঁওয়ে মায়ের সঙ্গে ভাড়া বাসায় থাকতো জেসি।
হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিয়ে মুন্সীগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অর্থ ও প্রশাসন) সুমন দেব বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আদিবা জানিয়েছেন জেসি এবং আদিবার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে বিজয়ের। সম্প্রতি আদিবাকে বিয়ের পরিকল্পনা করেন বিজয়। বিষয়টি জানতে পেরে ক্ষুব্ধ হয় জেসি। তখন মেসেঞ্জারে জেসি-বিজয়ের মধ্যকার একান্ত আলাপচারিতার বেশ কিছু স্ক্রিনশট আদিবাকে পাঠায় জেসি। সেগুলো দেখে বিজয়কে প্রশ্নবিদ্ধ করেন আদিবা। মঙ্গলবার তারা (বিজয় ও আদিবা) সিদ্ধান্ত নেন বিজয়ের বাসায় বিষয়টি ফয়সালা করার।’
সুমন দেব বলেন, ‘মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তারা তিন জন (বিজয়, আদিবা ও জেসি) বিজয়ের বাসার পাঁচতলার ছাদে মিলিত হন। সেখানে প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে তাদের কথা কাটাকাটি হয়। তখন জেসিকে কিলঘুষি মেরে জখম করেন আদিবা ও বিজয়। একপর্যায়ে তাদের ধস্তাধস্তি হয়। এ অবস্থায় বিজয় জেসির গলা চেপে ধরলে অচেতন হয়ে পড়ে। তখন স্থানীয় কয়েকজনের সহায়তায় জেসিকে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান বিজয়। সেইসঙ্গে চিকিৎসককে জানান, জেসি ছাদ থেকে পড়ে গেছে। একই সময়ে জেসির ভাইকে ফোন করে হাসপাতালে ডেকে এনে পালিয়ে যান বিজয়। দুই ঘণ্টা পর হাসপাতালে জেসির মৃত্যু হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘ত্রিভুজ প্রেমের কারণে এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছেন বিজয়। এ ঘটনায় জড়িত অন্যদের শনাক্ত ও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।’
মুন্সীগঞ্জ কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক জামাল ভূঁইয়া বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বুধবার সন্ধ্যা ৭টায় মুন্সীগঞ্জ সিনিয়র চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শহিদুল ইসলামের খাস কামরায় ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন আদিবা।’
জেসির বড় ভাই জিদান মাহমুদ বলেন, ‘মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শহরের কোর্টগাঁও এলাকার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আরিফুর রহমানের বাড়িতে ডেকে জেসিকে মারধর ও শ্বাসরোধে হত্যার চেষ্টা করেন বিজয় ও তার প্রেমিকা আদিবা। এতে অচেতন হয়ে পড়লে তাকে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান বিজয়। পরে আমাদের ফোন করে বিষয়টি জানান। দুই ঘণ্টা পর হাসপাতালে তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। আমার বোনকে ডেকে নিয়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছেন বিজয় ও আদিবা।’
মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের দায়িত্বরত চিকিৎসক শৈবাল বসাক বলেন, ‘মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিজয় ও তার বাবা আরিফুর রহমান জেসিকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। তার শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাতের চিহ্ন ছিল। হাসপাতালে আনার দুই ঘণ্টা পর তার মৃত্যু হয়। ময়নাতদন্তের পর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে।’