দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় পাল্লা দিয়ে বাড়ছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যু। গেল ২৪ ঘণ্টায় শুধু রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালেই করোনা ও উপসর্গে মারা গেছেন ১৬ জন। একই সময়ে যশোরে ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গায় বুধবার শনাক্তের হার ছিল ৯২.৭৫ শতাংশ। সংক্রমণ ঠেকাতে এলাকাভিত্তিক লকডাউন ও বিধিনিষেধ জারি অব্যাহত রয়েছে। আজ থেকে বাগেরহাট, যশোর ও ঠাকুরগাঁওয়ে শুরু হচ্ছে আংশিক লকডাউন। তবে বিধিনিষেধ দিয়েও খুব বেশি লাভ হচ্ছে না। কারণ সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানায় অত্যন্ত অনীহা। নানা অজুহাতে তারা ঘর থেকে বের হচ্ছেন। এমনকি অনেকের মুখে মাস্ক পর্যন্ত থাকে না। ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
রাজশাহী : রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা ইউনিটে ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত তারা মারা যান। এর আগের ২৪ ঘণ্টায় ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছিল। হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী জানান, মৃত ১৬ জনের মধ্যে রাজশাহীর আটজন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের তিনজন, নাটোরের দুজন, নওগাঁর দুজন ও ঝিনাইদহের একজন। এর মধ্যে আটজনের করোনা পজিটিভ ছিল। অন্যরা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন।
এদিকে রাজশাহী সিটি করপোরেশন এলাকায় চলমান ‘সর্বাত্মক লকডাউন’ ৩০ জুন মধ্যরাত পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। বুধবার বেলা সাড়ে ৩টায় জেলা প্রশাসক আবদুল জলিল তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন। আগের ঘোষণা অনুযায়ী আজ লকডাউন শেষ হওয়ার কথা ছিল।
যশোর : জেলায় করোনা ও উপসর্গে আরও অন্তত ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর ৩৪৩ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১২১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। মৃত ৯ জনের মধ্যে চারজনের করোনা পজিটিভ ছিল। বাকিরা উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। যশোরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মো. সায়েমুজ্জামান জানান, জেলায় বর্তমানে সক্রিয় করোনা রোগী ৩ হাজার ১১৬ জন। এরমধ্যে যশোর পৌর এলাকায় রয়েছে ৯৩২ জন।
চুয়াডাঙ্গা : জেলায় ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত হয়ে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় ৬৯ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৬৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়। শনাক্তের হার ৯২.৭৫ শতাংশ। মৃতদের মধ্যে একজন সদর উপজেলার, দুজন দামুড়হুদার এবং দুজন জীবননগরের বাসিন্দা। এ নিয়ে জেলায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৮৯ জনে।
অভয়নগর (যশোর) : অভয়নগরে আজ থেকে আবারও সপ্তাহব্যাপী কঠোর লকডাউন শুরু হয়েছে। সংক্রমণ রোধে স্থানীয় প্রশাসন সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী জনগণকে সচেতন করতে নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।
ঠাকুরগাঁও : ভারত সীমান্তবর্তী জেলা ঠাকুরগাঁওয়ে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় আজ থেকে ফের ৭ দিনের লকডাউন দেওয়া হয়েছে। লকডাউন চলাকালে কাঁচাবাজার ও মুদি দোকান সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত খোলা থাকবে, মাস্ক ছাড়া চলাচল করলে জরিমানা করা হবে, বিকাল ৪টার পর জরুরি সেবা ছাড়া কোনো দোকান বা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখা যাবে না।
বড়াইগ্রাম (নাটোর) : উপজেলার বড়াইগ্রাম ও বনপাড়া পৌরসভায় ৭ দিনের লকডাউন ঘোষণা করেছে জেলা প্রশাসন। বুধবার সকাল ৬টা থেকে এ লকডাউন শুরু হয়েছে। দুই পৌরসভায় যানবাহন চলাচল ঠেকাতে সব প্রবেশ পথে বাঁশ বেঁধে ব্যারিকেড দিয়েছে পুলিশ।
বাগেরহাট : জেলায় আজ থেকে ৭ দিনের লকডাউন। লকডাউন চলাকালে সব ধরনের যাত্রীবাহী গণপরিবহণ ও নৌযানসহ দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। শুধু জরুরি সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো খোলা থাকবে। দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে বিষয়টি প্রধান্য দিয়ে মোংলা বন্দর এ লকডাউনের আওতা মুক্ত রাখা হয়েছে।
তবে, মোংলা বন্দর জেটি ও পশুর চ্যানেলে নোঙ্গর করা জাহাজের নাবিকরা মোংলা বন্দরে নামতে পারবেন না।
জয়পুরহাট : বুধবার থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত জেলার পাঁচটি উপজেলার সব পৌরসভাসহ জয়পুরহাট সদর উপজেলা ও কালাই উপজেলায় বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছে। বিকাল ৫টা থেকে পরদিন সকাল ৬টা পর্যন্ত ওষুধের দোকান ছাড়া সব ধরনের দোকান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও গণপরিবহণ চলাচল বন্ধ থাকবে।
মধুখালী (ফরিদপুর) : মধুখালী পৌরসভায় বুধবার সকাল থেকে লকডাউন শুরু হয়েছে। ৩০ জুন মধ্যরাত পর্যন্ত এ লকডাউন চলবে।
শেরপুর : শেরপুর সদর উপজেলায় বিশেষ বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। এ সময় জনসমাগম হয় এ ধরনের সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় অনুষ্ঠান এবং পর্যটন স্পটগুলো বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সকাল ৭টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকানপাট ও শপিংমল খোলা রাখা যাবে। শেরপুর থেকে ঢাকা, গাজীপুর, রাজশাহীসহ দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ থাকবে।
ফরিদপুর : জেলায় কঠোর বিধিনিষেধের তৃতীয় দিন বুধবার সকাল থেকেই শহরের প্রবেশ পথের ২৩ জায়গায় চেকপোস্ট বসিয়ে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে পুলিশ। শহরের কাঁচাবাজার ও ওষুধের দোকান ছাড়া সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। এছাড়া শহর ছেড়ে যায়নি কোনো দূরপাল্লার বাস। ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ৪৭০ জনের নমুনা পরীক্ষায় রেকর্ড ২৩৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।
গুরুদাসপুর (নাটোর) : লকডাউনের প্রথম দিন বুধবার গুরুদাসপুর পৌর এলাকায় কঠোর অবস্থানে ছিল প্রশাসন। মোড়ে মোড়ে ছিল পুলিশ। সকাল থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তমাল হোসেন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবু রাসেল ও ওসি (তদন্ত) মোনায়ারুজ্জামান বিভিন্ন এলাকায় তদারকি করেন।
ভেড়ামারা (কুষ্টিয়া) : বুধবার ভেড়ামারায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। এদিকে উপজেলায় সপ্তাহব্যাপী চলমান লকডাউনের তৃতীয় দিনেও কঠোর অবস্থানে ছিল প্রশাসন ও পুলিশ। পৌর এলাকাসহ উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্বাস্থ্যবিধি কার্যকরে চলে অভিযান।
নড়াইল : জেলায় গেল ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৪২ জন। আক্রান্তদের মধ্যে সদর উপজেলায় ৩৫ জন ও লোহাগড়ায় ৭ জন রয়েছে। ২০ জুন থেকে জেলায় এক সপ্তাহের সর্বাত্মক লকডাউন চলছে।
টাঙ্গাইল : পৌর এলাকা লকডাউনের দ্বিতীয় দিনে করোনায় ৩ জনের মৃত্যু ও ১৪৯ জন নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন। শনাক্তের হার ৩৫ দশমিক ২২ শতাংশ। এ নিয়ে জেলায় মোট করোনা রোগী ৬ হাজার ৫৪৪ জন। মোট মৃত্যু ১০৪ জন।
উল্লাপাড়া (সিরাজগঞ্জ) : উল্লাপাড়া ৩০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের ৩ কর্মচারীসহ ৮ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. ফিরোজ হোসেন জানান, তাদের হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে।
বেনাপোল (যশোর) : করোনা সংক্রমণের হার বৃদ্ধি পাওয়ায় বেনাপোল ও শার্শা উপজেলায় বুধবার থেকে ৭ দিনের লকডাউন চলছে। যানবাহন ও দোকানপাট বন্ধ থাকলেও সরকারের রাজস্ব আদায়ের স্বার্থে বেনাপোল বন্দরে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য সচল রয়েছে।
মনিরামপুর (যশোর) : মনিরামপুরে আশঙ্কাজনকভাবে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ৪ দিনে এক মাদ্রাসা শিক্ষকসহ ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে ৩ নারী ও ৫ পুরুষ। উপজেলায় বুধবার থেকে ৭ দিনের লকডাউন শুরু হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মানতে এদিন সকাল থেকে বিভিন্ন স্থানে মাইকিং করা হয়।