দুই দিনের টানা বর্ষণে পানি বেড়ে ফুলে উঠেছে নেত্রকোনার কয়েকটি নদী। ময়মনসিংহের ধোবাউড়ায় বিভিন্ন স্থানে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে অনেক মানুষ। সুনামগঞ্জের ছাতকের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। তাহিরপুরের সঙ্গে সুনামগঞ্জের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। গাইবান্ধায় ভারী বর্ষণের সময় ঘণ্টাব্যাপী বজ্রপাতের ঘটনা ঘটেছে। শেরপুরের ঝিনাইগাতিতে সাতটি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
নেত্রকোনা প্রতিনিধি :নেত্রকোনায় গত মঙ্গলবার রাত থেকে অবিরাম বর্ষণে জেলার সব নদীর পানি ব্যাপক হারে বাড়ছে। জেলার কংস, সোমেশ্বরী, নিতাই, ধনু, গোলামখালি এবং সাইডুলি নদীর পানি বেড়ে ফুলে উঠছে। বৃষ্টি না থামলে এ সমস্ত নদীর পানি বিপত্সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এম এল সৈকত জানান, বর্তমানে নেত্রকোনার সব প্রধান নদীর পানি এখনো বিপত্সীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গতকাল বুধবার নেত্রকোনায় ৬৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। দুর্গাপুরে সোমেশ্বরী নদীর ভাঙন প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
ধোবাউড়া (ময়মনসিংহ) :গত দুই দিনের টানা বর্ষণে ময়মনসিংহের ধোবাউড়ায় বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। পাহাড়ি ঢলে নেতাই নদীর বাঁধ ভেঙে প্রবল স্রোতে পানি প্রবেশ করছে; প্লাবিত হচ্ছে নিম্নাঞ্চল। মুষলধার বৃষ্টিতে আতঙ্কে রয়েছেন নেতাই পাড়ের ও নিম্ন এলাকার সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ। ইতিমধ্যে নিম্ন এলাকার অনেক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
সরেজমিনে জানা যায়, গামারীতলা ইউনিয়নের কলসিন্দুর এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে প্রবল স্রোতে পানি প্রবেশ করছে লোকালয়ে। রায়পুর, কামালপুর ছান্দেরনগরসহ বিভিন্ন এলাকার ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করছে। ঘোঁষগাঁও ইউনিয়নের নয়াপাড়া, দিঘলবাগ, কালিকাবাড়ীসহ বিভিন্ন গ্রামের বেশ কিছু পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এছাড়াও পোড়াকান্দুলিয়া ইউনিয়নের বেতগাছিয়া, বহরভিটা, উদয়পুরসহ নিম্ন এলাকাগুলো প্লাবিত হচ্ছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাফিকুজ্জামান জানান, ইতিমধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে।
ছাতক (সুনামগঞ্জ) : টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে ছাতকের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। নদনদীতে পানি বাড়ছে দ্রুত গতিতে। উপজেলার নিম্নাঞ্চল ইসলামপুর, নোয়ারাই, ভাতগাঁও, সিংচাপইড়, উত্তর খুরমা, দক্ষিণ খুরমা, জাউয়াবাজার ও চরমহল্লা ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্যার পানি ছুঁই ছুঁই করছে।
স্থানীয়রা জানান, নদনদীতে পানিবৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে দুই-এক দিনের মধ্যে গ্রামাঞ্চলের রাস্তাঘাট তলিয়ে যাবে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ঘরবাড়িতে বন্যার পানি প্রবেশ করবে। ছাতকে সুরমা, পিয়াইন ও চেলা নদীতে পানিবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড ছাতকের উপ-সহকারী প্রকৌশলী খালিদ হাসান জানান, সুরমা নদীর পানি ছাতক পয়েন্টে বিপত্সীমার ৫২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
তাহিরপুর (সুনামগঞ্জ) : টানা বৃষ্টিতে উপজেলার সীমান্তবর্তী যাদুকাটা নদীর পানি বিপত্সীমার ১৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে সুনামগঞ্জ থেকে তাহিরপুরের সড়ক পথে যান চলাচল বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। সদর উপজেলাগামী মানুষ কোনো রকমে নৌকায় করে পার হলেও সুনামগঞ্জের সঙ্গে তাহিরপুর উপজেলা সদরের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
গাইবান্ধা প্রতিনিধি :গাইবান্ধায় গত মঙ্গলবার সকাল থেকে একটানা বৃষ্টিপাত হচ্ছে। গতকাল বিকাল পর্যন্ত বর্ষণ অব্যাহত ছিল। ভারী বর্ষণের সময় একটানা ঘণ্টাব্যাপী বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। যদিও বজ্রপাতের কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। জেলা শহরের কাচারী বাজার, প্রেসক্লাব চত্বর, স্টেশন রোডের সান্দারপট্টি, গোরস্থান রোড, পুরাতন হাসপাতাল রোডসহ বিভিন্ন এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে।
গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান জানান, মঙ্গলবার বিকাল থেকে গতকাল বুধবার বিকেল পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় গাইবান্ধায় ১৮৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। ভারী বর্ষণে জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
ঝিনাইগাতী (শেরপুর) : টানা বৃষ্টিতে উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। সোমেশ্বরী, মহারশী ও কালঘোষা নদীর পানি বিপত্সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ৩০টি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ। পানিতে তলিয়ে গেছে কৃষকের বীজতলা, ভেসে গেছে অর্ধশতাধিক পুকুরের মাছ।
সোমেশ্বরী নদীর পানিতে ধানশাইল ইউনিয়নে ছয়/সাতটি গ্রাম তলিয়ে গেছে। পানির তোড়ে বাগেরভিটা চাপাতলী ব্রিজটি হুমকির মুখে। মহারশী নদীর পানিতে সদর ইউনিয়নের ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। গৌরীপুর ইউনিয়নের পাঁচ-ছয়টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে ফসলি জমির ওপর বালুর স্তর পরে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। মত্স্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ঢলের পানিতে তলিয়ে ভেসে গেছে অর্ধশতাধিক পুকুরের মাছ।
কাংশা ইউনিয়নের পাঁচ/ছয়টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। নলকুড়া ইউনিয়নের রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে কয়েকটি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। হাতিবান্দা ইউনিয়নের রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে গেছে, সাত/আটটি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারুক আল মাসুদ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের নিয়ে ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেছেন।