সরকারবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে শ্রীলঙ্কা। সোমবার গামপাহা জেলার নিত্তামবুয়া শহরে সরকার সমর্থক ও বিরোধীদের মধ্যকার সংঘাতে দেশটির এক সরকারদলীয় এমপি নিহত হয়েছেন।
নিহত ওই এমপির নাম অমরকীর্তি আথুকোরালা। এক প্রতিবেদনে এএফপি জানিয়েছে, সোমবার দুপুরের দিকে নিত্তামবুয়ার একটি সড়কে আথুকোরালার গাড়ি আটকান বিক্ষোভকারীরা। এ সময় তিনি সঙ্গে থাকা পিস্তল বের করে কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়েন। তার গুলিতে দুই বিক্ষোভকারী গুরুতর আহত হন।
তারপর অস্ত্র হাতেই গাড়ি থেকে নেমে নিকটস্থ একটি ভবনে আশ্রয় নেন আথুকোরালা। সেখান থেকে পুলিশ তাকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করে।
ঠিক কীভাবে তার মৃত্যু ঘটল, এ ব্যাপারে স্পষ্ট করে কিছু বলা হয়নি এএফপির প্রতিবেদনে।
এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সোমবার সকালে কলম্বোতে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন টেম্পল ট্রির কাছে সরকার সমর্থক ও বিরোধীদের সংঘাত হওয়ার পর থেকে নতুন মাত্রা পেয়েছে জনবিক্ষোভ। রাজধানীর প্রধান হাসপাতাল কলোম্বো ন্যাশনাল হসপিটালের মুখপাত্র পুষ্পা সোয়সা জানিয়েছেন, সংঘাতে আহত হয়ে অন্তত ৭৮ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের সামনে সংঘাতের পর উত্তপ্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কারফিউ জারি করতে বাধ্য হয়েছে শ্রীলঙ্কার পুলিশ। প্রথমে কেবল কলম্বোতে কারফিউ ঘোষণা করা হয়েছিল, অমরকীর্তীর মৃত্যুর পর দেশজুড়ে কারফিউ বর্ধিত করা হয়েছে।
করোনা মহামারি, উচ্চাভিলাষী ও অলাভজনক বিভিন্ন প্রকল্পে সরকারের বিনিয়োগ, ত্রুটিপূর্ণ করনীতি ও সরকারি অব্যবস্থাপনার কারণে শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ ব্যাপকভাবে কমে যায়। এর ফলে অনেকদিন ধরে জ্বালানি তেল, খাদ্য, ওষুধসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য আমদানি করতে পারছে না দেশটি।
পাশপাশি, ঝড়ের গতিতে বাড়তে থাকা মুদ্রাস্ফীতির প্রভাবে দক্ষিণ এশিয়ার এই দ্বীপরাষ্ট্রে শুরু হয় ভয়াবহ আর্থিক ও মানবিক সংকট।
মাসের পর মাস ধরে এই অবস্থা চলতে থাকায় এক পর্যায়ে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে শ্রীলঙ্কার জনগণ। গত মার্চ থেকে শ্রীলঙ্কার ছোট-বড় সব শহরে শুরু হয় সরকারবিরোধী বিক্ষোভ। তাদের দাবি, প্রেসিডেন্ট-প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের সবাইকে পদত্যাগ করতে হবে।
জনগণের দাবি আংশিক মেনে নিয়ে গত মাসের প্রথম সপ্তাহে একসঙ্গে পদত্যাগ করেন মন্ত্রিপরিষদের সব সদস্য। তারপর সোমবার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের অনুরোধে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ান মাহিন্দা রাজাপাকসে। ইতোমধ্যে সর্বদলীয় সরকার গঠনের জন্য বিরোধী বিভিন্ন দলের সঙ্গে আলোচনায় বসার আগ্রহও জানিয়েছেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ড।
কিন্তু কোনো কিছুতেই কমছে না জনগণের বিক্ষোভ। এদিকে, আইএমএফ-বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন দাতাসংস্থা শ্রীলঙ্কা সরকারকে শর্ত দিয়েছে— দেশের পরিস্থিতি শান্ত না হলে আর্থিক সহায়তা মিলবে না।