বহুল প্রতীক্ষিত সেতু চোখ মেলে দেখার জন্য নারায়ণগঞ্জের ৩য় শীতলক্ষ্যা সেতুতে হাজারো মানুষের ঢল নেমেছিল। তাদের মধ্যেই একজন মিজান আলী। বসবাস করেন বন্দর উপজেলার মদনগঞ্জ এলাকায়। জীবিকার তাগিদে প্রতিদিনই বন্দর থেকে ছুটে যান নিতাইগঞ্জ। বয়স চল্লিশোর্ধ্বা। পেশায় দিনমজুর। মালামাল উঠানো-নামানোর কাজ করেন। কাজ শেষে প্রতিদিন নৌকা ঘাটে গেলেও আজ ছুটে যান সেতুতে। সহকর্মী বন্ধুর সাথে হেঁসে হেঁসে কথা বলে সেতু দিয়ে নদীর ওপারে যান।
সোমবার (১০ অক্টোবর) দুপুরে ৩য় শীতলক্ষ্যার সেতুর উদ্ভোধন শেষে সেতুপথে কথা হয় মিজান আলীর সাথে। তিনি বেশ উচ্ছাসের সাথেই বলেন, বন্দরে ছোট থেইকা বড় হইছি। ওইপাড় থেইকা এইপাড় আসছি নৌকায় কইরা। প্রথমবার হাইঁটা পাড় হইতাছি। আমাগো খুশি বোঝাইতে পারতাম না। ছোটকালেও ভাবতাম, একটা সেতু থাকলে নদী পাড় করার করতে হইতো না। ছোটকালের স্বপ্ন পূরণ হইছে, সেতু পাইছি। দিন আইনা দিন খাই। কয়টাকা কামাই এরমইধ্যে নৌকা ভাড়া দেওন লাগত। এই টাকা বাঁচব।
তার বন্ধু রফিক বলেন, আগে নদী পাড় হইয়া যাইতে বেশি খরচ হইছে। ব্রিজ চালু হইছে, এখন খরচ কমব।
পথিমধ্যে ব্যবসায়ী মনিরুজ্জামান বলেন, আমার বন্দরে মুদির দোকান আছে। মালামাল নিতে এখন সুবিধা হইবো। শুধু আমার নাহ, ওইপাড়ের মানুষের জন্য এই সেতু একটা আশীর্বাদ। সেতু আমাদের প্রাণের দাবি ছিল। দেরিতে হলেও সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। পারাপারে আমাদের খুব ভোগান্তি হতো। এটা চালু হওয়ায় আমাদের আর ভোগান্তি থাকবে না।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার কার্যালয় থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ৩য় শীতলক্ষ্যা সেতুর উদ্বোধন করেন। বন্দর উপজেলার সেতুর পূর্ব প্রান্তে বর্ণাঢ্য উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। উদ্ভোধন শেষে সেতুতে উৎসুক জনতার ঢল নামে। শিশু থেকে বৃদ্ধা সকল বয়সী মানুষ সেতুতে ঘুরতে আসেন।
কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী হৃদয় হোসেন বলেন, সেতুর জন্য আমরা যে কত অপেক্ষায় আছি তা বলে বোঝানো যাবে না। বাইক দিয়ে যাওয়ার জন্য আমাদের অনেকটা পথ ঘুরে পাড় হইতে হতো। চিকিৎসা হোক কিংবা অন্য কারণ আমাদের অনেক ভোগান্তি হইছে। নদীর পারে বসে পার হওয়ার অপেক্ষা যে কত কষ্টের এইডা যারা না করছে তারা ছাড়া কেউ বুঝবে না।
জানা যায়, ৩য় শীতলক্ষ্যার সেতুর প্রকল্পটি ২০১০ সালে একনেকে অনুমোদন পেলেও ২০১৮ সালের ২৮ জানুয়ারি নির্মাণকাজ শুরু হয়। সেতুটি নির্মাণে ৬০৮.৫৬ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। এর মধ্যে ২৬৩.৩৬ কোটি টাকা বাংলাদেশ সরকারের তহবিল থেকে এবং ৩৪৫.২০ কোটি সৌদি ফান্ড ফর ডেভেলপমেন্ট (এসএফডি) থেকে এসেছে।ৎ ওয়াকওয়েসহ সেতুটিতে ৩৮টি স্প্যান রয়েছে। এগুলোর মধ্যে পাঁচটি নদীতে এবং ৩৩টি পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তে। ৬টি লেন সহ সেতুটির দৈর্ঘ্য ১২৩৪.৫০ মিটার ও প্রস্থ ২২ দশমিক ১৫ মিটার। এরমধ্যে দ্রুত গতির যানবাহনের চলাচলে ৪ লেন ও ধীরগতির যান চলাচলে ২ লেন নির্ধারিত হয়েছে। এছাড়া ছয় লেনের টোল প্লাজা এবং দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ অ্যাপ্রোচ রোডও নির্মাণ করা হয়েছে।
শীতলক্ষ্যা নদী বন্দর উপজেলা উপজেলাকে জেলা সদর থেকে পৃথক করেছে। এ উপজেলা সরাসরি সড়কপথে জেলা সদরের সঙ্গে সংযুক্ত ছিল না। দুই উপজেলা থেকে জেলা সদরে যেতে কাঁচপুর ব্রিজ ব্যবহার করতে হতো, যার জন্য নৌকায় নদীপথের মাত্র ৩ থেকে ৫ কিলোমিটার দূরত্ব সড়ক পথে প্রায় ৩০ কিলোমিটার ঘুরে যেতে হতো। এই সেতুর মাধ্যমে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এবং শহর ও বন্দরের মধ্যে যোগাযোগ সহজ হবে।