শরীয়তপুরে ডামুড্যা পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগের তথ্য চাইলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুজিত কর্মকার এক সাংবাদিককে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছেন। বুধবার (১৭ আগস্ট) বিকেল থেকে এ ঘটনার একটি অডিও রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়।
অডিওতে শোনা যায়, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুজিত কর্মকার অকথ্য ভাষায় ওই সাংবাদিককে গালাগাল করছেন। তিনি ওই সাংবাদিককে পেলে পিটিয়ে হাত-পা ভেঙে দেবেন। এছাড়া বিভিন্ন অকথ্য ভাষা ব্যবহার করেন তিনি।
সাংবাদিকরা জানান, যৌন হয়রানির বিষয় জানতে মঙ্গলবার বিকেলে সাংবাদিক আশিকুর রহমান হৃদয় ও শাহাদাৎ হোসেন শিক্ষক রতিকান্ত মিস্ত্রীর মোবাইলে ফোন দিলে তিনি তা রিসিভ করেননি। তাই সেদিন বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে বিষয়টি জানতে প্রধান শিক্ষক সুজিত কর্মকারের কাছে যান ওই সাংবাদিকরা।
কিন্তু বিষয়টি সাংবাদিকদের কাছে বলতে রাজি হননি। পরে রাত সাংবাদিক আশিকুর রহমান হৃদয়ের মুঠোফোনে কল দেন প্রধান শিক্ষক। রিসিভ করার সঙ্গে সঙ্গে তাকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেন সুজিত কর্মকার। এছাড়া দুই সাংবাদিককে মারধরের হুমকি দেন প্রধান শিক্ষক।
বিষয়টি নিয়ে সুজিত কর্মকার বলেন, আমার কাছে দুইজন সাংবাদিক বারবার ফোন দেয়। আমি তাদের বিষয়টি বলি। তারা আমাকে নিয়ে তাদের ফেসবুকে বিভিন্ন কথা লেখেন। আমার বিদ্যালয় ও আমি ভলো মানুষ হিসেবে পরিচিত। তখন সেই পোস্টটি আমার নজরে আসলে আমি তাদের প্রথমে বলি সেটি রিমুভ করে নিতে। কিন্তু তারা তা করেনি। এছাড়া তারা বার বার ফোন দিয়ে আমাকে বিরক্ত ও টাকা চাচ্ছিল। আমার মাথা গরম হয়ে গেলে তাদের সঙ্গে খারাপ আচারণ করি। এজন্য আমি সরি। আসলে এই ধরনের ব্যবহার করা আমার ঠিক হয়নি।
সাংবাদিক আশিকুর রহমান হৃদয় বলেন, ঘটনা জানতে আমি ও আমার সহকর্মী শাহাদাত হোসেন হিরু স্কুলে যাই। স্যারে সঙ্গে কথা বলে আমার চলে আসি। পরে তিনি আমাকে ও আমার সহকর্মীকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে। আমাকে যেখানে পাবে সেখানেই হাত-পা ভেঙে দেবেন বলে হুমকি দেন। পাশাপাশি হত্যা হুমকিও দেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাসিবা খানম বলেন, এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সাংবাদিকের সঙ্গে খারাপ আচরণ করা হয়েছে, আমি বিষয়টি শুনেছি। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, শরীয়তপুরের ডামুড্যা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রতিকান্ত মিস্ত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এই বিষয়ে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
জানা যায়, রতিকান্ত মিস্ত্রী বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ও স্কাউট মাস্টার। হয়রানির শিকার শিক্ষার্থী স্কাউটে যোগ দেবে বলে শিক্ষককে জানায়। বৃহস্পতিবার স্কাউটদের সাপ্তাহিক ট্রুপ মিটিং ছিল। কোনো কারণ ছাড়াই তিনি সেই মিটিং বাতিল করে দেন। পরের দিন শুক্রবার মিটিং কল দেন।
তিনি ছুটির দিন সকালে বিদ্যালয়ে আসতে বলেন ওই শিক্ষার্থীকে। পরে বিদ্যালয়ের তিনতলা ভবনে ডেকে নিয়ে ছাত্রীর শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর অংশে হাত দেন। বিষয়টি নিয়ে বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জামাল হোসেন কয়েকজন শিক্ষার্থীকে ফোন করে বিষয়টি নিয়ে সামনে না আগাতে নিষেধ করেন। এমনকি হুমকিও দেন তিনি।