ম্যাচ শুরুর ঘন্টা দুয়েক আগে থেকে আর. প্রেমাদাসা স্টেডিয়াম সংলগ্ন এলাকায় সারি সারি দর্শকের মিছিলের দেখা মেলে। টসের আগে স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। কলম্বোয় এশিয়া কাপ জুড়ে এমন আগ্রহ দেখা যায়নি। যেন লঙ্কানদের অপেক্ষা ছিল শুধু ফাইনালের জন্য। কিন্তু না, দর্শকদের আশায় গুঁড়েবালি দাসুন শানাকার দলের পারফরম্যান্সে।
এক কথায় কিংকর্তব্যবিমূঢ়, হতভম্ব! সুপার সানডেতে এমন কিছুর সামনে পড়বেন কল্পনাই করেননি কেউ। তাইতো ম্যাচ শেষ হওয়ার ঘণ্টাখানেক পার হলেও স্টেডিয়াম ছাড়তে চাইছিলেন না গাঁটের পয়সা খরচ করে খেলা দেখতে আসা দর্শকরা। ক্ষোভের সঙ্গে এক দর্শক বলছিলেন, ‘মাঠে এসে এখনো ঠিকমতো বসতে পারলাম না। চোখের পলকে ম্যাচ শেষ।’
তাইতো! দুই ইনিংস মিলে খেলা হওয়ার কথা ছিল ১০০ ওভার। সে জায়গায় মাত্র ২১.৩ ওভার খেলা হয়েছে! ১ ঘণ্টা ৫৯ মিনিটে খেলা শেষ! মোহাম্মদ সিরাজের আগুনে বোলিংয়ে মুখ থুবড়ে পড়ে শ্রীলঙ্কার ব্যাটিং লাইনআপ। রোববার এশিয়া কাপের ফাইনালে মাত্র ১৫.২ ওভারে ৫১ রানে অলআউট হয় শ্রীলঙ্কা। রান তাড়া করতে নেমে মাত্র ৬.১ ওভারে কোনো উইকেট না হারিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় ভারত। হাতে ছিল ২৬৩ বল!
শুভমান গিল ২৭ ও ইশান কিশান ২৩ রানে অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়েন। বলের ব্যবধান হিসেবে ভারতের এটি সবচেয়ে বড় জয়। এর আগে সর্বোচ্চ ২৩১ বল হাতে রেখে জিতেছিল ২০১১ সালে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। আর এই নিয়ে তৃতীয় কোনো টুর্নামেন্টের ফাইনালে ভারত ১০ উইকেটে জেতার কৃতিত্ব অর্জন করলো।
ম্যাচ শেষে সব কৃতিত্ব বোলারদের দিলেন শুভমান গিলের সঙ্গে ওপেনিংয়ে নামা ইশান কিশান, ‘সব কৃতিত্ব বোলারদের। তারা অবিশ্বাস্য বোলিং করেছে। বিশেষ করে সিরাজ, সে ছিল অতুলনীয়।’
এই সিরাজই শ্রীলঙ্কার স্বপ্নের ফাইনালে সবচেয়ে বড় বাগড়া দিয়েছেন। কুশল মেন্ডিসকে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিতে বাধ্য করে লঙ্কাবধের শুরুটা করেছিলেন জসপ্রিত বুমরাহ! এরপরের গল্প শুধু সিরাজের। নিজের দ্বিতীয় ওভারে নিলেন ৪ উইকেট! একে একে ফেরান নিসাঙ্কা (৪), সাদিরা সামারাবিক্রমা (০), চারিথ আসালাংকা (০) ও ধনঞ্জয়াকে (৪)। হ্যাটট্রিক বলে নিজেই বাউন্ডারি লাইনে দৌড়ে এসেছিলেন লং অনে কোনো ফিল্ডার না থাকায়। কিন্ত ধনাঞ্জয়ার মারা চার বাঁচাতে পারেননি। অবশ্য পরের বলেই তাকে ফিরিয়ে প্রথম ভারতীয় হিসেবে ওভারে চার উইকেট নেওয়ার কৃতিত্ব অর্জন করেন।
প্রথম স্পেলে ২ ওভারে মাত্র ৪ রান দিয়ে তুলে নেন ৫ উইকেট। সবমিলিয়ে ৭ ওভারে ২১ রান দিয়ে ৬ উইকেট। ভারতের চতুর্থ বোলার হিসেবে ওয়ানডেতে ৬ উইকেট নেন সিরাজ। এমন দুর্দান্ত বোলিংয়ের পর ইনিংস ব্রেকে সিরাজ বলেন, ‘স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে। শেষবার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আমি দ্রুত চার উইকেট নিয়েছিলাম। কিন্তু ৫ উইকেট নিতে পারিনি। আমি আজ বেশি চেষ্টা করিনি। আমি সবসময় সাদা বলে সুইং করানোর চেষ্টা করি।’
সিরাজের স্বপ্নের বিকেলে দুঃস্বপ্নের মতো কেটেছে লঙ্কানদের। তার তোপে ১২ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি এশিয়া কাপের ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নরা। লঙ্কানদের হয়ে সর্বোচ্চ ১৭ রান আসে কুশল মেন্ডিসের ব্যাট থেকে। ১৩ রান করে অপরাজিত ছিলেন দুশান হেমন্ত। বাকি ৮ ব্যাটার দুই অঙ্কের মুখ দেখতে পারেননি। তাদের মধ্যে ৫ জন আউট হয়েছেন শূন্যরানে। সিরাজের পাশাপাশি হার্দিক পান্ডিয়া নেন ৩ উইকেট।
ভারতের নানা কৃতিত্বের দিনে লজ্জার রেকর্ড গড়ে শ্রীলঙ্কা। দ্বিতীয় দল হিসেবে সবচেয়ে কম ওভারে অলআউট হয় তারা। সর্বনিম্ন ১৩.৫ ওভারে অলআউট হয়েছে জিম্বাবুয়ে, ২০১৭ সালে। এটি তাদের দ্বিতীয় সর্বনিম্ব স্কোরও। এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ২০১২ সালে তারা অলআউট হয় ৪৩ রানে।
এই নিয়ে অষ্টমবার এশিয়া কাপের শিরোপা জিতলো ভারত। শেষবার তারা চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ২০১৮ সালে। অন্যদিকে ১৩তম ফাইনালে সপ্তম শিরোপা হাতছাড়া করলো শ্রীলঙ্কা!