প্রেসিডেন্টের পদ থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হলেন নোয়েল লু গ্রেত। ফ্রান্স ফুটবল ফেডারেশনের (এফএফএফ) প্রেসিডেন্ট লু গ্রেত দেশটির কিংবদন্তি ফুটবলার জিনেদিন জিদানকে কটাক্ষ করে কথা বলার তিন দিন পর পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। জিদানকে কটাক্ষ করার পর গোটা নিজ দেশ তো বটেই, সেই সঙ্গে গোটা ফুটবল বিশ্বের নিন্দার মুখে পড়েন লু গ্রেত। এরপর ক্ষমা চাইলেও শেষ রক্ষা হলো না লু গ্রেতের। চাপে পড়ে এফএফএফ’র প্রেসিডেন্টের পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন তিনি বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
এফএফএফ’র বিবৃতিতে অবশ্য বলা হয়েছে, বৈঠকে কার্যনির্বাহী কমিটির ১৩ সদস্যের সঙ্গে আলোচনার পর লু গ্রেত নিজে থেকে অস্থায়ীভাবে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নেন।
গুঞ্জন ছিল কাতার বিশ্বকাপের পর ফ্রান্স জাতীয় দলের প্রধান কোচের দায়িত্ব পেতে যাচ্ছেন জিনেদিন জিদান। তবে এসব গুঞ্জন উড়িয়ে ফ্রান্সকে দ্বিতীয় বারের মতো শিরোপা এনে দেওয়া কোচ দিদিয়ের দেশমের সঙ্গে চুক্তি বর্ধিত করে এফএফএফ। আগামী ২০২৬ বিশ্বকাপেও ফ্রান্সের ডাগ আউটে দেখা যাবে দেশমকে। আর তাতেই শেষ হয়ে যায় জিদানের ফ্রান্সের ডাগ আউটে দাঁড়ানোর স্বপ্ন।
ফ্রান্সকে কোচিং করাবেন বলেই নাকি পিএসজিসহ অনেক ক্লাবের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছেন জিদান। গুঞ্জন আছে ব্রাজিলের কোচ হওয়ার প্রস্তাব রয়েছে জিদানের সামনে।
এ প্রসঙ্গে ফ্রান্স ফুটবল ফেডারেশন প্রধান লু গ্রেত আরএমসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রশ্ন করা হয়। এতে মেজাজ হারিয়ে ফেলেন এফএফএফ প্রধান। আর বেশ কটাক্ষ করেন জিদানকে। জিদান কোথায় গেল তাতে তার কোনো মাথা নেই বলেও জানান তিনি।
লু গ্রেত বলেন, ‘আমার তাতে মাথাব্যথা নেই। তার যেখানে ইচ্ছা সে যেতে পারে। আমি খুব ভালো করেই জানি যে, জিদান সবসময়ই রাডারে ছিল (ফ্রান্সের সম্ভাব্য কোচ হিসেবে)। তার শুভাকাঙ্ক্ষীরও অভাব নেই। কেউ কেউ তো দেশমের বিদায়ের অপেক্ষায় ছিল। কিন্তু দেশমকে নিয়ে গুরুতর আপত্তি কার থাকতে পারে? কারও নয়। জিদানের যা ইচ্ছা করতে পারে। আমি পরোয়া করি না। তার সঙ্গে আমার কখনও দেখা হয়নি। দেশমের দায়িত্ব ছিন্ন করার কথা আমরা কখনও ভাবিইনি। জিদান যেখানে ইচ্ছা যেতে পারে, কোনও ক্লাবে বা যেকোনো জায়গায়।
ফ্রান্সের কোচ হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে জিদান তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে লু গ্রেত জিদানের ফোন ধরতেনই না বলেন। তিনি বলেন, ‘জিদান আমার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিল কি না? অবশ্যই নয়। চেষ্টা করলেও আমি তার ফোন ধরতাম না।’
তার এমন বক্তব্যের পর গোটা ফ্রান্স ফুঁসে ওঠে আর লু গ্রেতকে এক হাত নেয়। এরপরেই ক্ষমা চান লু গ্রেত। তবে এতেও শেষ রক্ষা হয়নি লু গ্রেতের। রয়টার্স জানায়, বুধবার (১১ জানুয়ারি) প্যারিসে এফএফএফ’র নির্বাহী বৈঠকে লু গ্রেতকে ইস্তফা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। তার জায়গা সহ-সভাপতি ফিলিপ দালো ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
তার এসব মন্তব্য নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার মধ্যেই সোমবার ফ্রান্সের আরএমসি রেডিওতে সাক্ষাৎকারে ফুটবল এজেন্ট সোনিয়া সোইদ যৌন হয়রানির অভিযোগ আনেন লু গ্রেতের বিরুদ্ধে। ৮১ বছর বয়সী লু গ্রেতের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলি ২০১৩ থেকে ২০১৭ সালের সময়কার। লু গ্রেতের পদত্যাগের দাবিও তোলেন ৩৭ বছর বয়সী সোনিয়া।