খুলনার জিরো পয়েন্ট, গল্লামারী মোড় এবং খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় শুক্রবার (২ আগস্ট) বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের তিন দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় সুমন কুমার ঘরামী নামে পুলিশের এক কন্সটেবল নিহত হয়েছেন। শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিটের দিকে গল্লামারী কাঁচাবাজারে এ ঘটনা ঘটে। এতে আরো অন্তত ২৫ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।
পুলিশ কন্সটেবল সুমন কুমার ঘরামীর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. মোজাম্মেল হক। সুমন খুলনা পুলিশ লাইন্সে কর্মরত ছিলেন। পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘সারা দিন আমরা ধৈর্যের পরিচয় দিলাম। আমরা ফাঁকা রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছাড়া কিছু মারিনি। কিন্তু তারা তো মানল না। ২০-২৫ দিন ধরে আমরা ধৈর্য ধারণ করেছি। অথচ তারা আমাদের লোককে পিটিয়ে মেরে ফেলল।’
এদিকে, আজ সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত গুলিবিদ্ধ (রাবার বুলেট ও শটগানের ছররা) অবস্থায় ৭ জনসহ আহত ১৬ জনকে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এদের মধ্যে ৪ জনের অবস্থা গুরুতর। সংঘর্ষে আহত পুলিশ সদস্যরা খুলনা পুলিশ হাসপাতালের পাশাপাশি নগরীর অন্য হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী শুক্রবার দুপুর ২টার দিকে শিক্ষার্থীরা খুলনা মহানগরীর নিউমার্কেটের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। এ সময় পুলিশ তাদের বাধা দেয়ার চেষ্টা করলেও পরে পিছু হটে। এরপর আন্দোলনকারীরা মিছিল নিয়ে মজিদ সরণি হয়ে সোনাডাঙ্গা থানার দিকে যেতে থাকে। এ সময় শিক্ষার্থীরা সোনাডাঙ্গা থানায় ইট নিক্ষেপ করে। তখন পুলিশ সদস্যরা থানার ভেতরে গিয়ে অবস্থান নেন। পরে হরিণটানা থানাতেও ইট ও খালি বোতল নিক্ষেপ করেন আন্দোলনকারীরা।
আন্দোলনকারীরা সোয়া ৩টার দিকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পৌঁছান। এ সময় পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ বেঁধে যায়। প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে চলমান সংঘর্ষে উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। এ সময় নগরীর গল্লামারী থেকে জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়ক রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
বিকেল ৪টার দিকে কিছু পুলিশ জিরো পয়েন্ট এলাকায় এবং কিছু পুলিশ গল্লামারী মোড়ে অবস্থান নেয়। কয়েক দফায় আন্দোলনকারীদের তোপের মুখে পুলিশ কিছুটা পেছনে সরে আসতে বাধ্য হয়। পরে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশের পর আন্দোলনকারীরা মিছিল নিয়ে নগরীর শিববাড়ি মোড়ের দিকে যেতে চাইলে সন্ধ্যা ৬টার দিকে গল্লামারী মোড়ে আরেক দফা সংঘর্ষ বাঁধে। এ সময় পুলিশ টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে পুলিশ পিছু হটলে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সংঘর্ষের পর সিরাজুল ইসলাম, আবির, নীরব, নাবিল, মিজান, সৌরভ, আবদুল্লাহ, রায়েব সুলতানা রাইবা এবং রুবিনা ইয়াসমিনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের শরীরে রাবার বুলেট ও শটগানের ছররা গুলি লেগেছে।
আন্দোলনকারীদের পক্ষে আল শাহরিয়ার জানান, তাদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশ অহেতুক টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছুড়েছে। অনেকে আহত হয়েছেন। গুলিবিদ্ধ কয়েকজনকে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সঠিক সংখ্যা পরে জানানো হবে।
সোনাডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা থানার গেটে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করেছিল। তবে কেউ আহত হননি।’
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. মোজাম্মেল হক জানান, ‘শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলনকারীদের কর্মসূচি পালন করা কথা ছিল। তারা পুলিশের ওপর হামলা করেছে। ২০-২৫ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।’